রাশেদুল হাসান
‘দধীচি’ হিন্দু পুরান মতে একজন মুনির (ধ্যান মগ্ন মনিষী) নাম। যিনি দেবতাদের মঙ্গলের জন্য নিজের দেহকে বিসর্জন দিয়ে মহাকালে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। ২৮ অক্টোবর বুধবার রাতে ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামের দুর্বৃত্তদের হামলায় অন্ত:সত্তা তুলসি রানী দাস কনিকার গর্ভে নিহত শিশু সন্তানের নাম ‘দধীচি’ রাখা হয়েছে। পুরানের সে মুনি তার জীবন দিয়ে দেবতাদের স্বর্গে অসীন হতে সাহায্য করেছে। আর এ ‘দধীচি’ মায়ের গর্ভে থেকে জীবন দিয়ে পৃথিবীর মানুষকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা দেকে মুক্তি দেবেন এমনটাই মনে তরে তুলসি দাসের পরিবার।
পুরান মতে, এক সময় দেবতারা অসুরদের কাছে পরাাজিত হয়ে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হন। স্বর্গচ্যুত দেবতারা বার বার আক্রমন করেও অসুরদের কাছে পরাজিত হয়ে নারায়নের কাছে বিষয়টির সুরাহা চান। নারায়ন দেবতাদের বলেন মর্তে ‘দধীচি’ নামের এক মুনি আছেন তার শরীরের হাড় দিয়ে তরবারি তৈরীর মাধ্যমে অসুরদের বধ করা সম্ভব। দেবতারা অনেক খোঁজাখুজির পর ধ্যানরত অবস্থায় মুনি দধীচি’র সন্ধান পান। তারা বিষয়টি খুলে বললে ‘দধীচি’ দেবতাদের বলেন, আমার শরীর দিয়ে যদি কোন উপকার হয় তবে তাই হবে। পরবর্তীতে মুনি দধীচি’র শরীরের হাড় দিয়ে তরবারি তৈরী করে অসুরদের দমন করে দেবতারা স্বর্গে পুন:বার্সিত হন।
‘দধীচি’ পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখার আগেই চলে গেছেন। মায়ের কোলে বেড়ে ওঠে এ শহর দধীচি’র স্বর্গ হয়ে ওঠার কথা ছিল। তার এ চলে যাওয়া মানেই চলে যাওয়া নয়। ‘দধীচি’ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমরা কোন সমাজে বসবাস করছি। যে সমাজে মানুষের কোন নিরাপত্তা নাই।
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতির দেশ। এ দেশে এক সাথে মসজিদে আজান ও মন্দিরে ডাকের শব্দ শুনেছি। পূজা-পার্বনে অন্য ধর্মাবলম্বীরা বিশেষ করে মুসলমানরা প্রতিবেশি হিন্দু পুরিবারে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে। কিন্তু সে দেশে পূজা করতে চাঁদা চেয়ে তাদের উপর হামলা কিসের ইঙ্গিত দেয়। জানা গেছে, ঘটনায় আহত জহর লাল দাস বাদী হয়ে থানায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে যে দায়ের কারেন যারা তাদের সকলে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। এটি কি নিচক চাঁদাবাজি না অন্য কোন বিষয় তা খতিয়ে বের করতে হবে।
দেশে চলমান নারকীয় সব ঘটনায় মানুষ অবাক হয়েছে। নিয়ম মেনে মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তও হয়েছে। কিন্তু তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এর আগে দেশে যে কোন ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই বিএনপি-জামায়াত জাড়িত বলে মামলাকে ভিন্ন দিকে ঘুরানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তারা অনেকটা সফলও বলা চলে। ওই সব ঘটনায় সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও মামলা দায়ের হয়েছে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামে। যুদ্ধাপরাধ মামলায় আটক জামায়াত নেতার ফাঁসির রায়ে দেশের বিভিন্ন মন্দির, শহীদ মিনার ভাঙ্গার সময় সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা হাতেনাতে ধরা পড়লেও তাদের পাগল-উন্মাদ বলে উড়িয়ে দেয়ার ঘটনা আমরা পত্র-পত্রিকায় পড়েছি।
এ ঘটনা কোন দিকে মোড় নিবে আমাদের জানা নেই। ক্ষমতাসীনদের হাত এতই শক্তিশালী যে আমাদের জানা-না জানায় কোন প্রভাব পড়ে না। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আমরা ঘটনাকে মানুষের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করা ছাড়া আর কোন সুযোগ আমাদের থাকে না। কিন্তু অপরাধিরা ঠিকই ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে আইনের ফাঁক-ফোকরে বের হয়ে যান। ক্ষমা প্রার্থনা করা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় থাকে না। আমাদের অপারগতার জন্য ক্ষমা করো ‘দধীচি’। ক্ষমা করো।
লেখক: সম্পাদক, নতুন ফেনী।