পুরস্কার লেখককে অনুপ্রাণিত করে • নতুন ফেনীনতুন ফেনী পুরস্কার লেখককে অনুপ্রাণিত করে • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৮ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পুরস্কার লেখককে অনুপ্রাণিত করে

রাশেদুল হাসানরাশেদুল হাসান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১২:৪৬ অপরাহ্ণ, ১১ জুলাই ২০১৬

স্বকৃত নোমান। সমকালীন বাংলা সাহিত্যের প্রতিভাবান তরুণ ঔপন্যাসিক। ১৯৮০ সালের ৮ নভেম্বর ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার কাছ থেকে উর্দু, ফার্সি ও আরবী ভাষার শিক্ষা নেন। তার উপন্যাস ও গল্পে ইতিহাস, সমকাল, পুরাণ ও বাস্তবতা উঠে আসে। সম্প্রতি ব্র্যাক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কারে (২০১৫) ভূষিত হন। এর আগে ২০১২ সালে এইচএসবিসি-কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার পান তিনি। রাজনটী, হীরকডানা, বেগানা ও কালকেউটের সুখ তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। পুরস্কার প্রাপ্তি ও লেখালেখি বিষয়ে আলাপচারিতার খন্ডাংশ তুলে ধরা হলো।

নতুন ফেনী : আপনার শৈশব-কৈশোরের সময়গুলোর কথা যদি বলেন।
স্বকৃত নোমান : প্রত্যেকের শৈশব-কৈশোরই মধুর থাকে। আমারও মধুর ছিল। একই সঙ্গে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াইও ছিল। শৈশব-কৈশোরে অনেক কিছু পেয়েছি, আবার অনেক কিছু পাইনি। আমি যে গ্রামে জন্ম নিয়েছি, সেই গ্রামটা এখনো সারাক্ষণ আমার বুকের ভেতর বসে থাকে। চোখ বন্ধ করলে আমি দেখতে পাই ধুলো উড়ছে, ঘুড়ি উড়ছে, ট্রেন চলছে, বন্যায় সব ভাসিয়ে নিচ্ছে। বড় আনন্দময় ছিল সেসব সময়। যখন সেসব দিনের কথা ভাবি শুধু চোখে জল আসে। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে আবার অবুঝ হয়ে যাই, বাবার তর্জনী ধরে আবার গ্রামের পথে হাঁটি, বন্ধুদের সঙ্গে মিলে  গোল্লাছুট খেলি। কিন্তু তা আর সম্ভব নয়। সেসব সময়ের স্মৃতিগুলো নিয়ে এখন শুধু বেঁচে থাকা।

নতুন ফেনী : শুনেছি ছাত্রজীবনে আপনি বিভিন্ন এলাকায় থেকেছেন। সেসব এলাকা কি আপনাকে এখনো টানে?
স্বকৃত  নোমান : ক্লাস এইট পাস করার পর পরই বাবা আমাকে বাড়ির বাইরে পাঠিয়ে দেন। হয়তো তার ইচ্ছে ছিল পড়ালেখার পাশাপাশি দেশটাকেও যেন ভালোভাবে চিনতে পারি, দেশের মানুষগুলোকে বুঝতে পারি। তিনি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন, এখন আমি তা বুঝতে পারি। ছাত্রজীবনে যেসব এলাকায় থেকেছি সেসব এলাকা আমাকে এখনো টানে তো বটেই। যেমন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার নিভৃত গ্রাম জ্যোষ্টপুরা। কোনো রাতে যদি আমার ঘুম না আসে, আমি জ্যোষ্টপুরার কথা ভাবি। স্মৃতিগুলো ভাসিয়ে তুলি। এগুলো আমার কাছে স্মৃতিসম্পদ।

নতুন ফেনী : আমরা জানি, আপনার বাবা মাওলানা আবদুল জলিল মসজিদে যখন ওয়াজ করতেন তখন আরবি-উর্দু-পার্সি শের আবৃত্তি করতেন। তার আবৃত্তি করা শের শুনে মুসল্লিরা কাঁদতেন। বাবা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
স্বকৃত নোমান : আমি তো তার কাছ থেকেই উর্দু ফার্সি ও আরবি সাহিত্যের পাঠ নিয়েছি। এ তিনটি ভাষায় তার ভালো দখল ছিল। ফার্সি ভাষার প্রচুর শের ছিল তার মুখস্থ। এমন দরদ দিয়ে গাইতেন, যে কোনো সংবেদনশীল মানুষের চোখে পানি এসে  যেত। তিনি আসলে উদারপন্থী মুসলমান ছিলেন। কোনো ধরনের ধর্মীয় গোঁড়ামিকে সমর্থন করতেন না। হিন্দু-মুসলমান সবার কাছে তিনি শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। ভেতরে তিনি মরমীবাদকে লালন করতেন কিন্তু সামাজিকতার কারণে তাকে সামাজিক হয়ে চলতে হতো। তাকে প্রধান চরিত্র করে ভবিষ্যতে একটা বড় উপন্যাস লেখার ইচ্ছে আছে। হতে পারে সেটিই হবে আমার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস। উপন্যাসটি লেখার জন্য আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি।

নতুন ফেনী : লেখালেখির শুরুটা কী ছিল?
স্বকৃত নোমান : আমার লেখালেখি শুরু মূলত কবিতা দিয়ে। সঙ্গে সবসময় লাল একটা টালি খাতা রাখতাম। সুযোগ পেলেই কবিতা লিখতাম সেটিতে। নানা পত্রপত্রিকায় কবিতাগুলো ছাপা হতো। খাতাটি এখন কোথায় যে হারিয়ে গেছে! পরবর্তীকালে নাট্যকার সেলিম আল দীন বললেন, ‘তোর কবিতা হয় না। কবিতা লেখা বাদ দে। গদ্য লিখতে শুরু কর।’ তার কথা মতো গদ্যই শুরু করলাম।

নতুন ফেনী : শুরুতে দু-একটা নাটক লিখেছেন, তারপর নাটক লেখায় আর দেখা যায়নি আপনাকে।
স্বকৃত নোমান : যখন পরশুরাম ছিলাম তখন বিভিন্ন জাতীয় দিবসে মঞ্চায়নের জন্য নাটক লিখতাম। পরবর্তীকালে ঢাকায় এসে দুটি নাটক লিখি। একটি এনটিভিতে অন্যটি বিটিভিতে প্রচারিত হয়েছিল। আমার নাটকের একটা চাহিদা তৈরি হচ্ছিল ধীরে ধীরে। কিন্তু আমি সচেতনভাব নাটকের জগৎ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে এনেছি। কেননা আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমি যা লিখতে চাই তা নাটকের মধ্য দিয়ে পারব না, তার জন্য গল্প-উপন্যাসই লাগবে।

sowkrito-noman00
নতুন ফেনী : সেলিম আল দীনকে বলা হয় বাংলা নাটকের বরপুত্র। তার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন?
স্বকৃত নোমান : এক কথায়, এক বাক্যে তার মূল্যায়ন তো আসলে করা যাবে না। সংক্ষেপে এটুকু বলতে পারি, বহুমুখী জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন মানুষটা। জীবনে যে ক’জন জ্ঞানীর সান্নিধ্যে এসেছি, তাকে সবচেয়ে বেশি প্রতিভাবান মনে হয়েছে। আমাকে তিনি ধরে ধরে বিশ্বসাহিত্য পড়িয়েছেন। পৃথিবীটাকে চিনতে শুরু করেছি তার মধ্য দিয়েই। তিনি আমার নমস্য। গুরুজন।

নতুন ফেনী : একজন ঔপন্যাসিক হিসেবে আপনার কাছে জানতে চাই, এখন আসলে কোন ধরনের কাহিনি নিয়ে উপন্যাস লেখা জরুরি? প্রেমের কাল্পনিক উপন্যাস, নাকি ইতিহাসনির্ভর উপন্যাস?
স্বকৃত নোমান : যে কেউ যে কোনো বিষয় নিয়ে উপন্যাস লিখতে পারেন। সাহিত্যে জরুরি বলতে কিছু নেই। সাহিত্যে সবই জরুরি আবার কিছুই জরুরি নয়। কেউ প্রেম নিয়ে উপন্যাস লিখতে পারেন, কেউ আবার ইতিহাসনির্ভর উপন্যাসও লিখতে পারেন। যার যা ইচ্ছে। দেখার বিষয় হচ্ছে উপন্যাসের ভাষা, আঙ্গিক। কেননা সাহিত্যের ইতিহাস আঙ্গিকের ইতিহাস, ভাষার ইতিহাস।

নতুন ফেনী : সমাজের অবহেলিত মানুষদের নিয়ে রাষ্ট্র তেমন ভাবে না, অথচ আপনি রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটা উপন্যাস লিখেছেন। উপন্যাসটির মধ্য দিয়ে আপনি কী বার্তা দিতে চেয়েছেন?
স্বকৃত নোমান : রোহাঙ্গিরা আমাদের সমাজের কেউ নয়। তারা পরদেশি। মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে তারা এই দেশে আশ্রয় খুঁজছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র তাদের জন্য যা করছে তা অনেক বেশি। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ শরণার্থীদের ব্যাপারে এত উদার হয় না। আমি মানবিক জায়গা থেকে তাদের নিয়ে ‘বেগানা’ উপন্যাসটা লিখেছি। দেখাতে  চেয়েছি, একুশ শতকের এই বিশ্বে দেশহীন মানুষ আছে।

নতুন ফেনী : আপনার গল্পে লোকজীবন উঠে আসে, তাদের বাস্তবে দেখার কখনো সুযোগ হয়েছে?
স্বকৃত নোমান : বাস্তবে না দেখলে লিখি কেমন করে? যে জীবন নিয়ে আমি লিখি সেই জীবন তো আমাকে প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। সেই জীবনে গলিগুঁজিতে আমাকে হাঁটতে হয়। আমার গল্প-উপন্যাসের চরিত্ররা অলীক মানুষ নয়, বাস্তব মানুষ। বাস্তবতাকে নিয়েই আমার কারবার। সে করিণেই আমি সায়েন্স ফিকশন লিখতে পারি না, ভূতের গল্প লিখতে পারি না।

নতুন ফেনী : আপনার উপন্যাস অনেকটা ইতিহাসনির্ভর। নিম্নবর্গীয় মানুষ থেকে শুরু করে গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি পেশাজীবীরা আপনার উপন্যাসের চরিত্র হয়ে আসে। আপনার গল্পে নাগরিক জীবন এলেও উপন্যাসে কিন্তু তা দেখা যায় না। যে দুই-একটি আছে, পাঠক মনে করে সেগুলোও ইতিহাসনির্ভর।
স্বকৃত নোমান : তোমার কথাটা আংশিক সত্য। আমার ইতিহাসনির্ভর উপন্যাস মাত্র দুটি, রাজনটী ও হীরকডানা। এই দুটি উপন্যাস প্রচার পেয়েছে বেশি। ফলে সবাই মনে করে আমি ইতিহাসনির্ভর উপন্যাস লিখি। আমার প্রথম উপন্যাস নাভি কিন্তু ইতিহাসনির্ভর নয়, বংশীয়ালও ইতিহাসনির্ভর নয়, বেগানা বা কালকেউটের সুখও ইতিহাসনির্ভর নয়।
ইতিহাসের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা অনেক। বর্তমানকে বুঝতে হলে ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাতেই হবে। আমাদের তো এখনো ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানোটা, ইতিহাসটাকে দেখে ওঠাটাই শেষ হয়নি। বর্তমানকে বুঝতে হলে ইতিহাস বোঝা জরুরি। ইতিহাসের পুনর্মূল্যায়ন ও পুনর্বিবেচনা করতে হবে। এটা সময়ের দাবি। ইতিহাসের প্রচলিত মতকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে। গতানুগতিক ইতিহাস শুধু সামনে থেকে আলো ফেলেছে। এখন শুধু সামনে থেকে নয়, আলো ফেলতে হবে পেছন থেকে, ওপর থেকে, নিচ থেকে, ডান থেকে, বাঁ থেকে। ইতিহাস যে বাজে বিষয়গুলো মহৎ করে তুলে ধরেছে, যে বিষয়গুলো গোপন করেছে বা এড়িয়ে গেছে, সেগুলো খুঁড়ে বের করে আনতে হবে। তুমি বলতে পারো, এটা তো ঐতিহাসিকের কাজ, ঔপন্যাসিকের নয়। আমি বলব, ঐতিহাসিক উপন্যাস ইতিহাসের প্রতিপক্ষ নয়, ইতিহাসের পরিপূরক। সুতরাং ইতিহাসের ফায়সালা আগে করতে হবে। ইতিহাসের ফায়সালা আমরা এখনো করে উঠতে পারিনি। ইতিহাসের ফায়সালা না করলে আমাদের মেরুদ সিধা হবে না। যেদিন ইতিহাসের ফায়সালা শেষ হবে সেদিন রচিত হবে সমকালের ভিত এবং সেদিনই শুরু হবে আমাদের বর্তমানের জয়যাত্রা।

নতুন ফেনী : একজন কণ্ঠশিল্পীকে মানুষ যেভাবে চেনে একজন লেখককে পাঠক সেভাবে চেনে না। এটার কারণ কী বলে মনে করেন?
স্বকৃত নোমান : লেখককে সবাই চিনবে কেন? চেনার তো কোনো কারণ নেই। সাহিত্য কখনো গণমানুষের জন্য হয় না। সাহিত্যের পাঠক সবসময়ই সীমিত। আমরা শরৎচন্দ্র বা হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তার কথা জানি। কিন্তু গ্রামের একজন কৃষককে জিজ্ঞেস করো, তিনি শরৎ বা হুমায়ূনের নাম শুনেছেন কিনা? উত্তরে বলবে, শুনিনি। তাদের এই জনপ্রিয়তা আসলে নির্দিষ্ট একটা শ্রেণির কাছে। তুমি এটাকে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বলতে পারো, পাঠক শ্রেণি বলতে পারো। গণমানুষের কাছে লেখক কোনোদিনই পৌঁছাতে পারে না। কারণ গণমানুষ সাহিত্যের পাঠক নয়। সাহিত্য উচ্চমার্গীয় একটা ব্যাপার। কিন্তু একজন কণ্ঠশিল্পী খুব সহজেই গণমানুষের কাছে পৌঁছতে পারেন। গান খুব সহজেই মানুষের হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করতে পারে।

sowkrito-noman01
নতুন ফেনী : বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কণ্ঠশিল্পী আর অভিনয় শিল্পীদের নামের সাথে তাদের ছবিও ছাপা হয়। এতে দর্শক তাদের চেনার সহজ উপায় থাকে। অথচ একজন পাঠক একটি গল্প পড়ে লেখকের নাম ছাড়া আর কিছুই দেখছে না। এতে কি পাঠক আর লেখকের মাঝে দূরত্ব তৈরি করে?
স্বকৃত নোমান : না, কোনো দূরত্ব তৈরি করে না। ছবি ছাপা হওয়াটা একটা চটকদারি ব্যাপার। সিনেমা বলো, নাটক বা গান বলো, এসবের মধ্যে এক ধরনের চটকদারি ব্যাপার আছে। সাহিত্যে চটকদারির ব্যাপার নেই। লেখক পাঠকের কাছে পৌঁছেন লেখা দিয়ে, ছবি দিয়ে নয়।

নতুন ফেনী : শুরু থেকে আপনি অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ লেখকদের গভীর সংস্পর্শে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এই অধিক, সুসম্পর্ক পাওয়ার নজির বাংলা সাহিত্যে নেই বললেই চলে। এই দেখা এবং জানা থেকে তিনজন লেখককে যদি আলাদা করে দেখেন।
স্বকৃত নোমান : আমি বহু সিনিয়র লেখকের সান্নিধ্য পেয়েছি, কথাটা সত্য। কিন্তু বাংলা সাহিত্যে এই সান্নিধ্য পাওয়ার নজির নেই, কথাটা সত্যি নয়। আর আলাদা কিভাবে করব? সবাই তো আমার নমস্য। তবু যদি সাহিত্যিক গুণাবলির কারণে আলাদা করতে বলো, তা হলে এই তিনজনের নাম বলতে পারি, হাসান আজিজুল হক, সৈয়দ শামসুল হক, সেলিম আল দীন।

নতুন ফেনী : মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি আমরা। এই স্বাধীন দেশে আমাদের সাহিত্যিকরা কতটা স্বাধীন?
স্বকৃত নোমান : লেখকদের স্বাধীনতা নেই বললেই চলে। মুক্তচিন্তার পথ ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। একটা রাষ্ট্রের জন্য এটা খুবই ভয়ানক। মুক্তচিন্তা ছাড়া সাহিত্য এগোয় না। সাহিত্য না এগোলে সভ্যতা এগোয় না। দেশে এখন চাপাতির যে  দৌরাত্ম্য চলছে, এর মধ্যে বসে সাহিত্যচর্চা করাটা কঠিন হয়ে উঠছে। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। সাহিত্যিকদের স্বাধীনভাবে সাহিত্যচর্চা করতে দিতে হবে।

নতুন ফেনী : একজন ছোটকাগজের লেখক আর দৈনিকের লেখকের মাঝে পার্থক্য কি?
স্বকৃত নোমান : লেখক লেখকই। লেখক ছোটকাগজ বড়কাগজ যে কোনো কাগজেই লিখতে পারেন। কিংবা কোনো কাগজে নাও লিখতে পারেন। এমনো হতে পারে, কোনো প্রচারমাধ্যমে না লিখে তিনি শুধু বই লেখেন। এতে তার লেখকত্ব খারিজ হয়ে যায় না।

নতুন ফেনী : ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে আমরা দেখি সেখানকার মানুষরা অনেক স্বাধীনতা ভোগ করেন। তাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি অনেক উন্নত। সেদিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান  কোথায়?
স্বকৃত নোমান : ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে। তারা অগ্রসর হয়েছে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার মধ্য দিয়ে। তাদের শিক্ষা বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা। আমাদের শিক্ষা পরকালমুখী। ইহলোক নিয়ে আমাদের ভাবনা কম। আর আমাদের সংস্কৃতিও কম উন্নত নয়। বাঙালির সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। কিন্তু আধিপত্যবাদী সংস্কৃতির প্রভাবে আমরা ভুলে যাচ্ছি আমাদের সংস্কৃতিকে। বিজ্ঞানের পাশাপাশি আমাদের শিক্ষাকে যদি সংস্কৃতি সম্ভূত করা হয়, আমরা যদি সবার ওপরে মানুষকে স্থান দিতে পারি, মানবিকতার চর্চাকে বাড়িয়ে তুলতে পারি, তাহলে পশ্চিমা বিশ্বের মতো আমরাও দ্রুত এগিয়ে যেতে পারব।

নতুন ফেনী : সম্প্রতি ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল পুরস্কার এবং ২০১২ সালে এইচএসবিসি-কালি ও কলম পুরস্কার পেয়েছেন আপনি। একজন লেখকের পুরস্কার পাওয়া কতটা জরুরি? শোনা যায়, কেউ কেউ পুরস্কার পাওয়ার জন্য তদবিরও নাকি করে থাকেন?
স্বকৃত নোমান : পুরস্কার লেখককে অনুপ্রাণিত করে। আমার লেখা হচ্ছে কি হচ্ছে না, তার একটা মূল্যায়ন ঘটে পুরস্কারের মধ্য দিয়ে। তা ছাড়া পুরস্কারের একটা আর্থিক মূল্য থাকে। এই দেশে লেখকরা লিখে তো খুব বেশি টাকা আয় করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে পুরস্কারের অর্থটা লেখকের কাজে লাগে বৈকি। আর এসব ছোটখাটো পুরস্কারের জন্য তদবির করতে হয় না। লেখার প্রতি নিষ্ঠা থাকলে পুরস্কার এমনিতেই আসবে। পুরস্কারের জন্য কারা তদবির করেন, পুরস্কার আদৌ তদবির করে হয় কিনা, এসব ব্যাপারে আমার জানাশোনা কম।

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.