নারিকেল এ দেশের অন্যতম অর্থকরী একটি ফসল। এটি এমন একটি বৃক্ষ যার মূল, কা-, ফুল, ফল, পাতা সব অংশই জনজীবনে নানা কাজে ব্যবহার করা হয়। যা অন্য কোনো গাছ থেকে এ ধরনের সুবিধা পাওয়া যায় না। ডাব ও নারিকেলের সব অংশই আহার উপযোগী, শাঁস অতি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু।
এতে প্রচুর পরিমাণ চর্বি, আমিষ, শর্করা, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও খনিজ লবণে ভরপুর। মানুষের কিছু অসুখের সময় ডাবের পানি রোগীদের অন্যতম ঔষধ হিসেবে কাজ করে। এর মধ্যে ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিস, পানিশূন্যতা পূরণে ডাবের পানির অবদান অন্যন্য। ঘন ঘন বমি ও পাতলা পায়খানার কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়লে এ সময় ডাক্তার স্যালাইনের বিকল্প হিসেবে ডাবের পানি পান অব্যাহত রাখতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যার কারণে এটি পৃথিবীর অপূর্ব গাছ, তথা স্বর্গীয় গাছ হিসেবে সবার কাছে সমাদৃত ও সুপরিচিত। নারিকেল বিক্রি ও মাছ চাষই একমাত্র ভরসা নোয়াখালী মুসাপুর উপকূলীয় অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াসিন’র।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নোয়াখালীর প্রত্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চল গুচ্ছগ্রামে কর্মচারীদের সাথে ঘূর্ণিঝড় তিতলী’র কারনে ক্ষয়ক্ষতি হওয়া নারিকেল বাগানে আবার নিজেকে ঘুরে দাঁড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন মুসাপুরের স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ ইয়াসিন।
নতুন ফেনী’র এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, আজ থেকে ২২ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯৬ সালে তার নিজের ১৯ একর জায়গার উপর বিভিন্ন জায়গা থেকে এনে চার শতাধিক নারিকেলের চারা রোপন করেন। রোপনের আগে জমিতে নালা কেটে মাটি উর্বর করে আইল তৈরি করেন।
এরপর প্রতিটি চারার জন্য এক ফুট গর্ত করে পঁচা গোবর, ছাই ও মাটি একসাথে মিশিয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট দুরত্ব রেখে নারিকেলের চারাগুলো লাগানো হয়। চারা রোপনের পাঁচ বছর পর থেকে গাছে নারিকেল ধরা শুরু হয়। এরপর কোন গাছে নারিকেলের রঙ সবুজ আবার কোন গাছে ধরা ডাবের রঙ হলুদ দেখা যায়। প্রতিটি গাছে ১’শ’২০ থেকে ১’শ’৫০ টি নারিকেল ধরে। এগুলো প্রতি বছর বর্ষা ও শীত মৌসুমে স্থানীয় পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন।
বর্ষাতে গরমের কারনে ডাবের প্রচুর চাহিদা থাকে। তখন শরীরের বিভিন্ন রোগবালাই ও শরীরকে সতেজ রাখতে ডাবের পানিই একমাত্র ভরসা। প্রতি বছর নারিকেল বাগান থেকে শুধু বর্ষা মৌসুমে দেড় থেকে দুই লক্ষাধিক টাকা আয় করেন। বিগত দুই থেকে তিন বছর যাবত জোয়ারের পানিতে নদী ভাঙ্গনের কারনে অনেক গাছ ভেঙ্গে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তাছাড়া কিছুদিন আগে জোয়ার ও জ্বলোচ্ছাসের সময় বাগানের ভিতরে লোনা পানি প্রবেশ করায় অনেক গাছের ডাব নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে এই দু-তিন বছর তাকে অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে। এবছরও তিনি ডাবের আকারভেদে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে ১’শ প্রতি তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে প্রায় ৬০ হাজার টার ডাব বিক্রি করেন।
পাশাপাশি তিনি একই জায়গায় পুকুর খনন করে কোরাল মাছ, চিংড়ি, রুই, কাতল, মৃগা, পাবদা ও বাগধারা মাছের চাষ করেন। মাছ বড় হয়ে যাওয়ার পর এগুলো জাল দিয়ে ধরে স্থানীয় আড়তদারদের কাছে পাইকারি দামে বিক্রি করেন। প্রতি বছর মাছ চাষ থেকে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করলেও এবছর তার এনেক টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়। কারণ কিছুদিন আগে বয়ে যাওয়া বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলী’র’ প্রভাবে বৃষ্টি ও জ্বলোচ্ছাসের কারনে জোয়ারের পানির সাথে তার পুকুরের সব মাছ ভেসে চলে যায়। সেখানেও তাকে দুই লক্ষাধিক টাকার লোকসান গুনতে হয়। নারিকেল বিক্রি ও মাছ চাষ করেই উপকূলীয় অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দ মোঃ ইয়াসিন স্ত্রী ও নয় ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোনরকমে দিন কাটছে তার।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনকে