‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো’ • নতুন ফেনীনতুন ফেনী ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো’ • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো’

রাশেদুল হাসানরাশেদুল হাসান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৫:৪০ অপরাহ্ণ, ১৩ নভেম্বর ২০১৮

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও একজন সফল রাজনীতিবিদ অধ্যাপক জয়নাল আবদিন (ভিপি)। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ফেনী-২ আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে জাসদের টিকিট নিয়ে ও পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শিষ নিয়ে ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে জেলার অন্যতম ভরসা এবারো ফেনী-২ আসনে তিনি নির্বাচনে অংশ নিবেন।

বৈচিত্রপূর্ণ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার জয়নাল আবদিন ভিপি’র। ১৯৬২ সালে পাইলট হাই স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন ঐতিহাসিক ঘটনা হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের দাবীতে সারাদেশের ন্যায় ফেনীতে বিক্ষোভ ও রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে প্রথম পুলিশের হাতে গ্রেফতার এর মধ্য দিয়েই তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু। ১৯৬৪ সালে কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এর ছোট বোন মোহতারামা মিস ফাতেমা জিন্নাহ এর পক্ষে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে সক্রীয়ভাবে রাজনীতিতে সংযুক্ত হন এবং মামলার শিকার হন। তিনি ১৯৬৪-১৯৬৫ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয়দফা আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি পুলিশি হামলার শিকার হন এবং গ্রেফতার হয়ে নোয়াখালী কারাগারে দীর্ঘ সময় কারাবন্দী ছিলেন।

সে সময় ফেনী কলেজ থেকে তিনিসহ ৩/৪ জন ছাত্র বহিস্কার হন। ১৯৬৯ এর ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুথানে তখনকার ছাত্রনেতা তোফায়েল আহামেদ, আসম আব্দুর রব, নুরে আলম সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ ও আব্দুল কুদ্দুস মাখন ঢাকায় যখন নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তখন ফেনীতে এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ফেনীর তখনকার ছাত্রনেতা এই বর্ষীয়ান নেতা। ভিপি জয়নাল। এ আন্দোলনের পর তিনি পুনরায় ফেনী কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। ১৯৬৯ সালে প্রথম ফেনীকে তৎকালীন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হলে পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের শাসনামলে তিনিই ফেনী জেলা ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন দিবস পালন করতে গিয়ে মিজান রোড থেকে গ্রেফতার হয়ে ৩ মাড কারাবন্দী ছিলেন।

১৯৫৯ সালে ফেনী জেলার কাজিরবাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় দিয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ। পরবর্তীতে ১৯৬৪ সালে ফেনী সরকারী পাইলট হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৯ সালে ফেনী সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৭২ সালে বিএ পাশ করেন। এরপর ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি শিক্ষা জীবনে রাজনৈতিক মামলা ও হয়রানী এবং বহুবার জেলে থাকার কারণে অনেকগুলে শিক্ষাবর্ষ তাঁকে হারাতে হয়েছে। কারাবন্দী থাকাকালীন তিনি ফেনী কলেজের ভিপি নির্বাচনের জন্য মনোয়ন পান এবং এ নির্বাচনে কয়েকটি জোটের প্রার্থী থাকা সত্বেও তিনি একক প্যানেলের সকল আসন নিয়ে ১৯৭০ সালে প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন। নির্বাচনের কয়েকদিন আগেই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। এ দায়ীত্ব তিনি ১৯৭০-১৯৭২ সাল পর্যন্ত পালন করেন। আর এ কারণেই তিনি ‘ভিপি জয়নাল’ নামে পরিচিত।

জয়নাল আবদিন ভিপি ১৯৪৮ সালের ১মে ফেনী জেলার সদর উপজেলার ফলেশ্বর গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলীম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। পিতা মরহুম চান মিয়া আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। মাতা মরহুমা অজিবেন নেছা ছিলেন একজন ধর্মভিরু গৃহিনী। পিতা-মাতার ৫ সন্তানের মধ্যে ভিপি জয়নাল ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। তিনি ব্যবসা বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেন। তিনি ছাত্র জীবন শেষ করেই একজন প্রথম শ্রেনীর ঠিকাদার হন এবং সে সময় চট্টগ্রামে তার একটি ইনডেন্টিং ফার্ম এবং ফেনীতে একটি ব্রিক ফিল্ডের ব্যবসা ছিল। এসবের পাশাপাশি ১৯৭৭ সালে তিনি নোয়াখালী সোনাইমুড়ী কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করেন।

১৯৮০ সালের ৮ জানুয়ারী নিজ গ্রাম ফলেস্বর মজুমদার বাড়ীর জেলা কৃষি কর্মকর্তা মরহুম মমতাজ উদ্দীন আহম্মেদ মজুমদারের কন্যা শাহানা আক্তারের সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের দূর্দিনে স্ত্রী শাহানা আক্তার অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তাদের দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে উচ্ছ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন। বড় ছেলে জাবেদ ইকবাল, ছোট ছেলে রাশেদ ইকবাল ও বড় মেয়ে শামিমা আক্তার ও ছোট মেয়ে রোকসানা আক্তার। চারজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাফল্যের সাথে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। বর্তমানে বড় ছেলে ব্যাংক কর্মকর্তা, ছোট ছেলে ব্যবসায়ী, বড় মেয়ে এবং ছোট মেয়ে বিবাহিতা।

১৯৭১ সালে ফেনী সরকারী কলেজের ভিপি থাকার কারণে তিনি সর্বদলীয় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ফেনী জেলা ছাত্রদের সংগঠিত করতে তিনি বিশাল ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও তিনি ফেনীর হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষকে সংগঠিত করেন। তিনি ১৯৭১ সালে ২মার্চ তারই নেতৃত্বে সর্বপ্রথম ফেনী সরকারী কলেজ থেকে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর তারই নেতৃত্বে ফেনী মহকুমা কার্যালয়, ফেনী থানাসহ সরকারী-বেসরকারী গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

২৫ মার্চ পাক হানাদার বাহিনী নারকীয় তান্ডব চালানোর প্রেক্ষাপটে ফেনীর এমপি খাজা আহম্মেদ এর নেতৃত্বে ভিপি জয়নাল সহ দলের বিশ্বস্ত কয়েকজন নেতৃবৃন্দকে নিয়ে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কোরআন শফথ করেন। খাজা সাহেবের নেতৃত্বে জেলার পিটিআই ও পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে দুটি ক্যাম্প স্থাপন করেন। এর পরপরই সেখানে হানাদার বিরুদ্বে যুদ্বে যাপিয়ে পড়েন।

জয়নাল আবদিন (ভিপি) বলেন, নির্বাচনে অংশ নিতে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছি। দলের মনোনয়ন পাবেন বলেও তিনি শতভাগ আশা করেন তিনি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে অতীতের মতো তিনি এ আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন বলেও প্রত্যাশা করেন জয়নাল আবদিন।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনজেটি

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.