প্রথম ভোটদানের অভিজ্ঞতা • নতুন ফেনীনতুন ফেনী প্রথম ভোটদানের অভিজ্ঞতা • নতুন ফেনী
 ফেনী |
১৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রথম ভোটদানের অভিজ্ঞতা

রাশেদুল হাসানরাশেদুল হাসান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০২:২৩ অপরাহ্ণ, ১৪ নভেম্বর ২০১৮

আমি ভোটার হয়ে প্রথম ভোট দিয়েছিলাম ২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। কিন্তু তার অনেক আগেই অর্জিত হয়েছিলো প্রথম ভোট দানের অভিজ্ঞতা। আজকে সেটাই লিখবো। ভোটার হওয়ার আগেই দিয়েছিলাম জীবনের প্রথম ভোট। সেই প্রথম ভোট দেওয়ার অনুভুতিটা ছিলো অনেক অনেক বেশি চিত্তচাঞ্চল্যকর

ঘটনাটা ১৯৯১ সালের। তখন সম্ভবত ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি। ঐ বছর ২৭ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তার পরপরই সংবিধানের ১২তম সংশোধনী আনা হয়। সেই সংশোধনীতে গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো বিষয় ছিলো। প্রধান বিচারপ্রতি সাহাবুদ্দিন আহমদ অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান হয়েছিলেন এরশাদের পদত্যাগের সময়ে। সেটা ছিলো জরুরী মুহুর্তের সাংবিধানিক সংকট। সে বিষয়টার সমাধান করে উনাকে আবার স্বপদে ফেরত যাওয়ার জন্য সংবিধানের সংশোধনীটা জরুরী ছিলো। একই সাথে প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকার পদ্ধতি থেকে সংসদীয় সরকার প্রদ্ধতি প্রবর্তন করা হয় ঐ সংশোধনীতে।

যাহোক, কথা হচ্ছে, কেন জানি ঐ সংশোধনীর পর একটি ‘হ্যাঁ/ না’ ‘গণভোট’ এর আয়োজন করা হয়। অনেক ছোট ছিলাম বলে বিষয়গুলো বুঝতেছিলাম না। টেলিভিশনে বারবার গণভোট দেয়ার জন্য প্রচারণা চলছিলো। আমার প্রতিবেশী ও মামাত ভাই এমাম ছিলো বল্য বন্ধু ও ক্লাসমেট। সে সাইজে আমার থেকে কিছুটা লম্বা ছিলো, দুষ্টও ছিলো বেশ। সে বললো সে এবার ভোট দেবে। আমাকে বললো আমি যদি ভোট দিতে চাই তবে যেন তার সাথে কেন্দ্রে যাই। সেদিন ১৫ সেপ্টেম্বর ভোটের দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো সেহেতু আমি এমামের সাথে টান টান উত্তেজনা আর উৎসাহ নিয়ে গেলাম ভোট কেন্দ্রে ‘ফেনাপুষ্করনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়’ ভোট কেন্দ্রটা আমার বাড়ি থেকে বেশ দূরেই ছিলো। আমরা পায়ে হেটে চলে গেলাম। ভোট কেন্দ্রে খুব একটা ভোটারের উপস্থিতি দেখতে পেলাম না। ক’জন পুলিশ আর আনসার বসে আছে। দু’ একজন লোক আসে আবার ভোট দিয়ে চলে যায়। মাত্র কদিন আগে অনুষ্ঠিত ৫ম সংসদ নির্বাচনে যে উৎসাহ উদ্দিপনা ছিলো এখানে তার লেশমাত্রও নাই।

আমরা বুথ বরারবর জানালার রড ধরে দাড়িয়ে রইলাম। ভেতরের একজন লোক, নির্বাচনী কর্মকর্তা হবে হয়তো, আমাদেরকে ডেকে বললো ভোট দিবি? আরে, আবার জিগায়! আমরাতো এরকম একটা কথার অপেক্ষাতেই ছিলাম। অমি অপেক্ষাকৃত লাজুক হওয়ার চুপ রইলাম। এমাম সুজোগটা লুফে নিয়ে বললো, জ্বী দেবো। লোকটা বললো, পারবি ঠিক মতো দিতে? সে বললো, পারবো। এবার আমাদেরকে ভেতরে নিয়ে ব্যালট আর সীল দিয়ে উনি দেখিয়ে দিলেন কিভাবে ভোট দিতে হয় উনি আমাদেরকে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিতে বলেছিলেন। কিন্তু এমাম আমাকে আগেই শিখিয়ে দিয়েছিলো না ভোট দেয়ার জন্য। আমরা দুজনই ‘না’ ভোট দিলাম আমি না বুঝেই ‘না’ দিলাম বাড়িতে আসার পর আব্বা এবং ভাইদেরকে খুব আগ্রহ নিয়ে বললাম আমি ভোট দিয়েছি। উনারা জানতে চাইলেন ‘হ্যাঁ’ নাকি ‘না’? আমি বললাম ‘না’ দিয়েছি। আমার ঘরের সবাই ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়ে এলেন। অথচ আমি ‘না’ দিলাম। উনারা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করলেন। আমি বেশ বিব্রতবোধ করলাম। উনারা বললেন ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হবে। সুতরাং আমার ভোট পঁচে যাবে। এটা নিয়ে বেশ কয়েকদিন আমার মন খারাপ ছিলো। এমামের উপর কিছুটা রাগও হয়েছিলো আমার চিন্তা হচ্ছে, এমামের কুবুদ্ধির কারণে ভোটটা পঁচে গেছে!

তখনকার সময়ে মানুষের মাঝে ভোট পঁচা একটা কথা বেশ চালু ছিলো মানুষ বলতো, ঐ প্রার্থীতো জিতবে না, ওকে ভোট দিয়ে লাভ কী, ভোট পঁচে যাবে। কিন্তু গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আসলেই দ্ধিমত করাটা এবং পছন্দের প্রার্থী হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তাকে ভোট দেয়াটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ
লেখক : শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক।

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.