প্রবাসীদের ভোটাদিকার ও একটি জাল ভোটের গল্প • নতুন ফেনীনতুন ফেনী প্রবাসীদের ভোটাদিকার ও একটি জাল ভোটের গল্প • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রবাসীদের ভোটাদিকার ও একটি জাল ভোটের গল্প

রাশেদুল হাসানরাশেদুল হাসান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১২:৫৯ অপরাহ্ণ, ১৪ নভেম্বর ২০১৮

জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকার গঠনের ধারাবাহিকতার অংশ। নির্বাচনকে ঘিরে তরুণ ও যুবকদের মাঝে যে আগ্রহ থাকে আমার আগ্রহ ও কম ছিল না! যদি ও কাগজে কলমে ভোট দেয়ার বয়স না হলেও বাস্তবে ১৮ বছর বয়সী ছিলাম, তাই ২০০১ সালের নির্বাচনে জীবনের প্রথম ভোট দিয়েছিলাম। চট্টগ্রামে পড়ালেখা করলেও পরিচিত একজনের অনুরোধে ভোট দেয়ার জন্য গ্রামে চলে আসি।

আমার জীবনে প্রথম ভোট হলেও যদি ও প্রকৃত ভোটার ছিলাম না তাই সবার আগে ভোট দেয়ার ইচ্ছা থাকলে ও সকাল ১০ টায় পাঁয়ে হেটে ভোট কেন্দ্রে যাই। সবার সাথে আমাকে ও একটা নাম্বার দেয়া হয়েছিল, তবে কে বা কার নামবার আমি কিছুই জানতাম না! নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলে ও প্রার্থীতা নিয়ে মাথা ব্যাথা ছিলনা শুধু নৌকা, ধানের শীষ, দাড়িপাল্লা চিনতাম। দীর্ঘ সময় লাইনে দাড়িয়ে যখন ভোট কেন্দ্রের ভিতরে ঢুকলাম! তখন মাথায় আসলো কাকে ভোট দেব? একেতো অবৈধ! আবার নতুন ভোটার! সমিকরণ মেলাতে যখন সমস্যায়! ঠিক তখনি যার পরামর্শে ভোট দিতে গিয়েছিলাম তিনি বলে উঠলেন ফুটবল মার্কায় ভোট দিতে। তাই তার সিদ্ধান্তে ফুটবল মার্কায় ভোট দিয়ে কেন্দ্রত্যাগ করি।

নতুন ভোট দিয়েছিলাম বলে আর বাড়িতে যাইনি! কেন্দ্রের পাশেই আত্মীয় বাড়ী থাকাতে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার কেন্দ্রের পাশে ঘুরাপেরা করতে লাগলাম। ইতিমধ্যে অপরিচিত এক লোক আবারো ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে নিয়ে গেল! বললাম আমিতো ভোট দিয়েছি আগে, হাতে কালির দাগ আছে। লোকটি কোন কথা না শুনে আমাকে কেন্দ্রের ভিতরে নিয়ে গেল। আমি আবারো ফুটবল মার্কায় ভোট দিয়েছিলাম। কি জন্য ফুটবল মার্কায় ভোট দিয়েছি এখনো অজানা!

নতুন ভোট দিয়েছিলাম বলে আর বাড়িতে যাইনি! কেন্দ্রের পাশেই আত্মীয়-বাড়ী থাকাতে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার কেন্দ্রের পাশে ঘুরাপেরা করতে লাগলাম। ইতিমধ্যে অপরিচিত এক লোক আবারো ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে নিয়ে গেল! বললাম আমিতো ভোট দিয়েছি আগে, হাতে কালির দাগ আছে। লোকটি কোন কথা না শুনে আমাকে কেন্দ্রের ভিতরে নিয়ে গেল। আমি আবারো ফুটবল মার্কায় ভোট দিয়েছিলাম। কি জন্য ফুটবল মার্কায় ভোট দিয়েছিলাম তা এখনো অজানা!

সারাদিন বেশ কয়েকবার সেনাবাহিনীর দেখা মিললে তেমন কোন ঝামেলা দেখিনি! তবে শেষ বিকেলে সেনাবাহিনীর গাড়ি দেখে ভোট দিতে আসা মহিলাদের পালানোর কথা মনে আসলে হাঁসি আসে। শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত মহিলা কর্মীদেরকে সেনাবাহিনীর কেউ যেন বলেছিলেন, এদেরকে ফেরাও না হয় দুপুরের খাওয়ার পেট থেকে বের করে ফেলবো। অবশ্য ঐ মহিলারা পুনরায় ভোট দিতে এসেছিলেন। সে নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করেছিল। তবে সংসদ নির্বাচনের বিচিত্র যে ধারণা নিয়ে আমি বাসায় ফেরত আসি, তা এখনো মনে পড়ে। ২০০১ সালে প্রথম ভোট দিলেও ২০০৮ সালে ভোট দেয়ার সুযোগ মিলেনি!

ভাগ্য বিড়ম্বনায় ২০০৯ সাল থেকে প্রবাস জীবনের সূচনা মধ্যপ্রাচ্যের স্বর্ণ নগরী দুবাই। আরব সাগরের কোলে গড়ে উঠা চোখ জুড়ানো আকাশচুম্বী দালান, রাতের আলো ঝলমলে আতিথীয়তা, নিরাপত্তা, আভিজাত্য, নামি-দামি গাড়ি, সহজলভ্য স্বর্ণ, আয়েশী জীবন-যাপনসহ আধুনিক সভ্যতার প্রায় সব ধরনের সুযোগ সুবিধার নগরী বলা হয় দুবাই শহরকে। কল্পনার প্রায় সব কিছুই পাওয়া যায় মধ্যপ্রাচ্যের এই শহরে। এক সময়ের মৎস্য নগরী দুবাই এখন বিশ্বের সবচেয়ে দামি শহরগুলোর মধ্যে একটি।

একই বছর অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২রা ডিসেম্বর মাত্র ১৪ দিনের ব্যবধানে স্বাধীন হওয়া আরব আমিরাত বর্তমান বিশ্বের রাজধানী হিসেবে ইতিমধ্য সবার নজর কেড়েছে। স্থানীয়দের তুলনায় আধীবাসীদের সংখ্যা এখানে বেশি হলে ও রাজতন্ত্রের শাসন এ জনপদে। স্থানীয়দের জনগণের পাশাপাশি আধীবাসীরা ও এখানে নিরাপদ। যে যার অবস্থান নিয়ে খুঁশি। যার ফলে দিনে দিন আমিরাতের প্রতি মানুষের ভালবাসা বাড়ছে। রাজতন্ত্র অথচ সবাই সমান অধিকার পায়, নেই কোন বৈষম্য বা ভেদাভেদ! অগ্রযাত্রায় অবদান রাখছে যে যার অবস্থান থেকে। এমনকি নির্মাণ শ্রমিকরাও এ উন্নয়নের অংশিদার।

আমাদের দেশীয় অর্থনীতির অন্যতম উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স! পরিবারের ভরন পোষণের পর দেশীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে। অথচ প্রবাসীরা এখনো ভোট দেয়ার অধিকার অর্জন করতে পারেনি। সরকার আসে সরকার যায়! সরকারের পরিবর্তন আসে, প্রবাসীদেরকে ভোটাধিকার আসেনা!

প্রবাসীদেরকে সোনার ছেলে বলা হলে ও মুলত তা কথার মাঝেই সীমাবদ্ধ ! সংবিধানে সব নাগরিকের ভোটাধিকারের কথা বলা হলেও স্বাধীনতার এত বছরে পৃথিবীর ১৬৩ দেশে বসবাসকারী প্রায় সোয়া কোটির অধিক প্রবাসী বাংলাদেশীর মৌলিক এই অধিকার আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ৭১ পরবর্তী সব সরকারই কৌশলে প্রবাসী জনগণকে বঞ্চিত করে রেখেছে ভোটের অধিকার থেকে। স্বাধীনতা যুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন ও জনমত গঠনে প্রবাসীদের অবদান এবং পরবর্তীতে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি যাদের হাত দিয়ে তৈরি হয়েছে, সেই প্রবাসীরা সবসময়ই থেকেছে অনাদরে অবহেলায়। রেমিটেন্স বৃদ্ধি ও প্রবাসী বিনিয়োগ বাড়াতে সব সরকারগুলো প্রয়োজনে প্রবাসীদের ভোটের অধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও তা অধরা রয়ে গেছে।

আমার মত এমন অনেক প্রবাসী আছেন, যাদের কেউ জীবনে একবার ভোট দিয়েছেন! দীর্ঘ সময়ের প্রবাসী হওয়ার কারণে আবার কেউ কোন সময়ে ভোট দেয়ার সুযোগ পায়নি। অথচ আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত, মালদ্বীপ ও ভুটানসহ এশিয়ার ২০টি দেশ তাদের প্রবাসী নাগরিকদের ভোট প্রদানের সুযোগ করে দিয়েছে। তাই বাংলাদেশের সকল প্রবাসীদেরকে ভোটাধিকার প্রদানে সরকার, স্থানীয় প্রশাসনসহ সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসার আহবান জানাই।
লেখক: প্রবাসী গণমাধ্যমকর্মী।

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.