রক্তাক্ত বিজয় • নতুন ফেনীনতুন ফেনী রক্তাক্ত বিজয় • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রক্তাক্ত বিজয়

রাশেদুল হাসানরাশেদুল হাসান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৫:১৬ অপরাহ্ণ, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮

১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালির বিজয় সূচিত হয়। এই দিনে ঢাকায় ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে)ঘটে ইতিহাসের অন্যতম গৌরময় ঘটনা -পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মাথা নিচু করে অস্ত্র মাটিতে ফেলে আত্মসমর্পণ করে আমাদের বীর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর কাছে।

কবি বলেছেন- এবার মোছাব মুখ তোমার আপন পতাকায়। /হাজার বছরের বেদনা থেকে জন্ম নিল /রক্তিম সূর্যের অধিকারী যে শ্যামকান্ত ফুল /নিঃশব্দ হাওয়ায় আজ ওড়ে, দুঃখভোলানিয় গান গায়/মোছাব তোমার মুখ আজ সেই গাঢ় পতাকায়।

স্বাধীনতার ঘোষণা, সুদীর্ঘ শোষণ বঞ্চনায় বাঙ্গালিরা যখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে, ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর নির্দেশিত বাণীতে একটি স্বাধীনতার স্বপ্ন উন্মোচিত হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ঘোষণা করেন-‘ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহবান জানাইতেছি যে,যে যেখানে আছ,যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও,সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ কর।পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চুড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।

বাঙ্গালি শক্তি পশমিত হয় স্বাধীনতার বিরল গাথা দৃষ্টান্ত উন্মোচিত হয়। বিজয়ের সানাই বেজে উঠে সবার অন্তরে।
ও ংবব ঃযরং ারপঃড়ৎু ধং ধ ারপঃড়ৎু ধমধরহংঃ রহলঁংঃরপব, ঃুৎধহহু ধহফ ভধষংবযড়ড়ফ. ঞযরং ফধু রিষষ ৎবসধরহ বাবৎমৎববহ রহ ঃযব যবধৎঃ ড়ভ বধপয ইধহমষধফবংয.

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালি রেজিমেন্ট প্রতিরোধ সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়।বহু ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক শ্রমিক ও আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য দলের নেতৃবৃন্দ ও সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন।

২৫মার্চ রাতে হানাদার বাহিনী প্রায় ৫০ হাজার হাজার নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে। দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ,সাপ্তাহিক গণবাংলা ও ডেইলি পিপলস পত্রিকা পুড়িয়ে দেয়। নৃশংস গণহত্যার সংবাদ যেন বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য হানাদার বাহিনী ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ২৫জন বিদেশি সাংবাদিককে আটকে রাখে এবং সংবাদ প্রেরণের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। ঐদিন রাত ১:৩০টায় পূর্ব পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির ৩২নম্বর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৫মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ ও নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষের উপর যে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়, তা ছিল ইতিহাসের অন্যতম এক নারকীয় ঘটনা।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি সার্বজনীন গণযুদ্ধ। মুক্তিবাহিনীর সীমাহীন ত্যাগ ও রক্তপাতের মাধ্যমে, সর্বোপরি বিশ্বজনমত ও বিদেশি বন্ধু রাষ্ট্রের সহায়তায় মাত্র নয় মাসের মধ্যে পাকিস্তানের পরাক্রমশালী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে ফেলে।

দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে হাজার হাজার মাথবোনের সম্ভ্রমহানি এবং লক্ষ লক্ষ লোকের আত্মদানের বিনিময়ে বাংলার জনগণ লাভ করল একটি পতাকা এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখ- বাংলাদেশ। বিশ্ব মানচিত্র স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে অভ্যুদয় ঘটল বাংলাদেশ। পূর্ণ হলো বাঙালির জাতির স্বাধীনতার স্বপ্নসাদ। আর এই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানের ২৪বছরের স্বৈরশাসন ও শোষণের বেড়াজাল ভেঙে ১৯৭১সালের ১৬ডিসেম্বর বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এইভাবে সূচিত হয় একটি রক্তাক্ত বিজয়।
লেখক: শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারী কলেজ।

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.