গত শুক্রবার কাশেম ভাইর চা দোকান (ফেনী মডেল থানার ক্যানটিন) এ প্রতিদিনের মতো বন্ধুভাই সজীব দেবনাথসহ চা খাওয়ার জন্য গেলাম। এই ক্যানটিনে চা খাওয়া সাথে আড্ডা দেয়া অনেক আগ থেকেই আমার। বলেরাখা ভালো, ক্যানটিনটি আগের চেয়ে বর্তমানে অনেক আধুনিক হয়েছে। পরিবেশ এককথায় দারুণ। টিনের চালা বদলে ওয়ালে পরিণত হয়েছে এ ক্যানটিন। সজীব আর আমি চা খাচ্ছি, এমন সময় একটা অদ্ভুত আওয়াজ কানে ঢুকলো, ঘাড় ফিরিয়ে দেখি ২৬/২৮ বছরের একজন মহিলাÑতার কোলে একটা বাচ্ছা সাথে বয়স্ক একটা পুরুষ। মহিলাটি তখনো কেঁদে কেঁদে ফোনে অপরপ্রান্তে কাকে যেনো বারবার বলে যাচ্ছে, ‘আঁরে মিস্টার ভাইর কাছে লই যা, আঁরে মিস্টার ভাইর কাছে লই যা। মিস্টার ভাই ছাড়া আঁর কোনো উপায় নাই। আঁরে মিস্টার ভাইর কাছে লই যা, আঁরে মিস্টার…।’
মহিলাটির এমন আর্তচিৎকার আর ‘মিস্টার’ ভাইয়ের নামটি তার মুখে মুখে আওড়ানোটাই মূলত তখন আমাকে কৌতূহল করে তোলে। পরক্ষণে আন্দাজ করলাম, মহিলাটির স্বামীকে পুলিশ থানায় নিয়ে এসেছে। আর স্বামীকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য মহিলাটি বারবার ‘মিস্টার এবং মিস্টার’ নামটি বারবার মুখে নিচ্ছে।
পৃথিবীর সাধারণ-অসহায় মানুষগুলো এমনি, তারা বড়ো কিছু চায় না। বড়ো কিছু আশা করে না। শুধু বিপদে মহত কাউকে পাশে পেতে চায়। বিপদে কেউ এসে শান্তনা দিক-এটাই চায়। হয়ত মহিলাটি মনে করেছে, মিস্টার ভাই তার কাছে মহত ব্যক্তি। হয়ত মহিলাটি এও মনে করেছে, মিস্টার ভাই তার কাছে একজন মহান পুরুষ। হয়ত মহিলাটির আশা এমন, মিস্টার ভাইকে তার বিপদের কথা বললে-একটা সুরাহা হয়ে যাবে। এই মনে করাটা যুক্তিক। কারণ পৃথিবীর (সে যে শ্রেণীর হোক) একেকজন একেক মানুষের কাছে ঈশ্বরতুল্য। বিপদজনক অবস্থায় প্রার্থনার মতো করে সেই ঈশ্বরতুল্য মানুষগুলোকে সহজে পেতে চায়। চায় এই জন্যে, ঈশ্বরতুল্য মানুষগুলো যদি একবার ফিরে তাকায়, তবে অসহায় মানুষগুলো সমস্যা থেকে দ্রæত বেঁচে যাবে এই আশায়।
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সজীবকে বললাম, দেখছেন মিয়া আপনাদের মিস্টার ভাইকে অজানা অচেনা কত মানুষ ভক্তি করে, শ্রদ্ধা করে।
সজীব হাত থেকে চায়ের কাপটি দ্রæত টেবিলে রেখে সাথে সাথে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো আমাকেÑ ‘আমাদের মিস্টার ভাই মানে?’
সজীবকে একটা মিষ্টি ধমক দিয়ে উত্তর দিলামÑ ধুর মিয়া, মিস্টার ভাইয়ের বাড়ি মাস্টার পাড়া। আর আপনার বাড়ি সহদেবপুর। দুজন তো একই পথদিয়ে হাঁটেন…। এলাকাও তো প্রায় এক। আমার কথা শুনে, সজীব মেয়ে মার্কা একটা হাসি দিয়ে চায়ের কাপটিতে পুনরায় হাত রাখে।
মহিলাটিকে ব্যক্তিগভাবে চিনি না বলে মহিলাটির পরে কী হয়েছে আমরা আর জানিনা। মহিলাটির স্বামীকে কী কারণে পুলিশ থানায় নিয়ে এসেছে তাও আমরা জানতে চাই না। মহিলাটি বা তার স্বামী ভালো না খারাপ কিংবা তাদের সমাজে কোন পরিচয়ে তারা বসবাস করে, তাও আমরা জানতে চাই না। তবে ওইসময় ওই স্থানে যতটুকু বুঝলাম, একজন বিপদে পড়া মানুষ কিভাবে কোন ভাষায় আরেকজন মানুষকে ডাকতে পারে তা ভালোই আন্দাজ করেছি। মহিলাটি তার রুহ থেকে মিস্টার ভাইর নামটি বারবার মুখে নিয়েছে বলে এতে কোনো সন্দেহ নেই। পরক্ষণে চা খেয়ে আমি আর সজীব চলে এসেছি আমাদের গন্তব্যে।
এখানে আরেটু বলেরাখা ভালো যে, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার সন্ধ্যা ঠিক ছয়টার সময়ে দারুণ এক সত্য ঘটনা থেকে এই লেখাটির জন্ম। অবশ্য তখন আমি আর সজীব ছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলো, ক্যানটিনের মালিক কাশেম ভাই ও তার কর্মচারী রাকিবসহ দশ বারোজন লোক। সবাই আমাদের মতো মহিলাটির কাকুতি লক্ষ্য করেছিলো। আবার উপস্থিত দু-একজনের ফিসফিস করাটাও শোনা গেছে। এই ফিসফিস করাটা খারাপ হলেও মানুষ সব কালেই এটা থাকে! এটা মানুষের জন্মগত স্বভাব! কারণ পৃথিবীর কিছু মানুষ সুন্দর কথা বলার চেয়ে ফিসফিস কথা বলা পছন্দ করে। অতএব যতদিন না মানুষ ক্লিয়ার এবং সামনে কথা বলা না শিখবে ঠিক ততদিন এই ফিসফিস শব্দটা পৃথিবী থেকে যাবে না।
মিস্টার ভাইয়াকে আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে সম্মান করি। এই সম্মানটা তৈরি হওয়ার বড়ো কারণ, আমি ছোটবেলা থেকে দেখেছি তাঁর বাবা দিদার আঙ্কেল আর আমার বাবার দারুণ বন্ধুতা। মূলত সেই সময় থেকে মিস্টার ভাইকে আমার চেনা জানা। দিদার আঙ্কেল আর আমার বাবা দুজনকেই আল্লাহ নিয়ে গেছেন, একই সময়-অকালে।
একটি আহবানের মধ্য দিয়ে এই লেখাটি শেষ করবো, অনেকের মতো আমিও আশা এবং কামনা করছি, জিয়াউল আলম মিস্টার ভাইকে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে। উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার সে যোগ্যতা মিস্টার ভাইয়ের আছে বলে ব্যক্তিগতভাবে আমি সাধারণ মনে করি। যেমন বলতে চাই, মহিলাটির মতো সাধারণ মানুষের অন্তরে থাকা একজন মিস্টারের জয় হোক। জয় আসুক রাজনীতির শুরু থেকে দেশের একটি বড়ো দলের নিবেদিত প্রাণ এ-কর্মীর। আশাকরি এ সুযোগটা মিস্টার ভাই পাবেন। অবশ্যই জয়টা একজন জিয়াউল আলম মিস্টার’দের হওয়া উচিত। কারণ এই মিস্টারেরাই সমাজের সাধারণ মানুষের অন্তরে পজিটিভ চরিত্র নিয়ে সবসময় জিইয়ে থাকেন।
লেখক : গল্পকার