সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রকৃত সৌন্দর্য পানির নীচে • নতুন ফেনীনতুন ফেনী সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রকৃত সৌন্দর্য পানির নীচে • নতুন ফেনী
 ফেনী |
১৯ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রকৃত সৌন্দর্য পানির নীচে

ডা. ছরওয়ার আলমডা. ছরওয়ার আলম
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১২:১০ অপরাহ্ণ, ১৬ মার্চ ২০১৯

গত কয়েক বছর আগে আমরা সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমনে যাই। দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার মাত্র দুটি প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপের এটি ১টি, অন্য প্রবাল দ্বীপটি অবশ্য ভারতের রামেশ্বরে অবস্থিত।সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়ে সেখানকার দ্বীপবাসীদের নানা বিষয়ে নানা কথা হয়। এমন বহু কথা হয় যা আমাদের অনেকেরই অজানা। সবার জানার খাতিরে সে সব অজানা বিষয় নিয়ে লিখার ইচ্ছা বহুদিনের কিন্তু নিজের পেশাগত ব্যস্ততার কারণে সময় হয়ে উঠেনা। তাই আজ লিখতে বসলাম।

আমরা যে লঞ্চে সেন্টমার্টিন যাই সেই লঞ্চে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়ায় সেন্টমার্টিন পৌঁছতে অনেকক্ষণ দেরি হয়। ততক্ষণে অন্যান্য লঞ্চের পর্যটকেরা সেন্টমার্টিনে ঘন্টা দু’য়েক অবস্থান ও খাওয়া দাওয়া সেরে ঐ লঞ্চে উঠার জন্য আসছেন। আমরা যারা প্রথমবারের মত সেন্টমার্টিন ভ্রমনে যাই তারা অভিজ্ঞতা নেয়ার জন্য আগের লঞ্চের যাত্রীদেরকে জিজ্ঞেস করি আপনারা এখানে এসে কি দেখলেন। তাদের অধিকাংশ পর্যটক যারা কিছুক্ষণ আগে এসে আবার তাড়াতাড়ি লঞ্চে উঠতে যাচ্ছেন তাদের সবার চেহারায় হতাশার ছাপ, বললেন এত কষ্ট করে এত টাকা পয়সা খরচ করে এখানে আসাটাই ভুল হল, সেন্টমার্টিন এসে আমরা এখানে অসংখ্য বেওয়ারিশ কুকুর আর সমুদ্রের পাশে দুপুরের উত্তপ্ত বালু ছাড়া আর কিছুই দেখলাম না। এতে আমাদেরও প্রথমত মন ভেঙ্গে গেল। যাক তারপরও এগিয়ে গেলাম। আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখা কর্টেজে উঠে আমরা সেন্টমার্টিন দ্বীপে ২ দিন থাকলাম। দুই দিনে আমরা পুরো সেন্টমার্টিন দ্বীপ ঘুরে সেখানকার বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে মিশলাম, সেন্টমার্টিন দ্বীপের ইতিহাস ঐতিহ্য, তাদের সুখ-দুঃখের কথা, দ্বীপের বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে তাদের উৎকন্ঠা- আতঙ্ক, তাদের সামাজিক রীতিনীতি, জীবনযাপন পদ্ধতি প্রভৃতি শুনলাম। তার মধ্য থেকে যেসব কথা আমাদের অনেকেরই অজানা শুধু সেসব কথা পাঠকের উদ্দেশ্যে তুলে ধরার ইচ্ছা আছে। লিখার কলেবর বেড়ে যাবে, পাঠক হয়তো রিরক্ত হবেন, তাই আজ শুধু সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রকৃত সৌন্দর্য কোথায়, দ্বীপবাসীদের মুখ থেকে শুনা তার কিছু কথা তুলে ধরলাম। সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসীর অন্যান্য অজানা কথা গুলো আরেকদিন লিখব।

দ্বীপে বসবাসকারী বিজ্ঞ ও প্রবীণ অধিবাসীরা জানান, তারা প্রায় শত বছর ধরে বংশ পরম্পরায় এই দ্বীপে বসবাস করে আসছেন। সেন্টমার্টিন দ্বীপে বসবাসের অভিজ্ঞতা থেকে তারা দেখেছেন এই দ্বীপের প্রকৃত সৌন্দর্য পানির নীচে। পানির নীচে আছে দৃষ্টিনন্দন এবং বাহারি রং এর ৫০-৬০ প্রকারের প্রবাল, প্রায় দেড়’শ প্রকারের শৈবাল, প্রায় ২’শ প্রকারের মোলাস্কা বা কড়ি, শামুক, ঝিনুক, প্রায় ৩০-৪০ প্রকারের বাহারী রং এর কাঁকড়া, প্রায় ২’শ প্রকারের নানা রং এর মাছ, এছাড়া আছে নানা রং এর কচ্ছপ, প্রায় দেড়’শ প্রকারের রং বেরং এর উদ্ভিদ সহ আরো নানা প্রানী। এই সব কিছু মিলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর প্রকৃতির এই বিষ্ময়কর দান বাংলাদেশের জন্য যেন একটা স্বর্গ। এটা যেন জীবন্ত এ্যাকুরিয়াম, যা না দেখলে বুঝার উপায় নাই। এখানে আসা পর্যটকেরা এর প্রকৃত সৌন্দর্যের ১ ভাগও দেখতে পায়না। পানি যখন খুব স্বচ্ছ থাকে তখন এর ক্রিয়দংশ দেখার সুযোগ হয় তবে এই সুন্দর্য এখন আর খুব বেশি দেখা যায়না। তাদের ধারণা প্রতিদিন এই দ্বীপে আসা ১০ হাজারের বেশি পর্যটকের অপরিকল্পিত বৈজ্য, জাহাজ, ট্রলার, নৌকা, স্প্রীডবোর্টের পোড়া তেল মবিল সহ নানাবিধ কারণে সেন্টমার্টিন দ্বীপঅঞ্চলের পানি আর আগের মত স্বচ্ছ নয়। আগে ২০ -৩০ ফুট পানির নীচ পর্যন্ত সবকিছু দেখা যেত, তখন তারা প্রবাল শৈবালের প্রকৃত সৌন্দর্য দেখতে পেত। এখন ঐ সৌন্দর্য দেখাতো দুরের কথা, পানির নীচে ৫ ফুট গভীরও ঠিকভাবে দেখা যায়না।

দ্বীপবাসীরা বলেন এক ধরনের সামুদ্রিক প্রানীর শরীরের নিঃসৃত রস থেকে প্রবাল সৃষ্টি হয়। এদের থেকে নিঃসৃত রসের রং প্রজাতিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। হাজার হাজার বছর ধরে এসব প্রবালের শরীরে সঞ্চিত রস জমতে জমতে একসময় তা শক্ত হয়ে যায়। এভাবেই বছরের পর বছর প্রবাল জমে আস্তে আস্তে গড়ে উঠতে থাকে প্রবাল প্রাচীর। মাইলের পর মাইল জুড়ে থাকা এ প্রবাল প্রাচীর সামুদ্রিক ঝড় থেকে রক্ষা করে দ্বীপবাসীদের। সুনামি কিংবা জলোচ্ছ্বাসের বিপরীতে প্রাকৃতিক দেয়ালের মতো কাজ করে থাকে এ প্রবাল প্রাচীর। পানির নীচে অবস্থিত প্রবাল দ্বীপ সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বনাঞ্চল যেমন বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল, প্রবাল ও প্রবাল প্রাচীর তেমনি সামুদ্রিক মাছের আশ্রয়, খাবার যোগান ও নিরাপত্তার স্থল।

দ্বীপবাসীদের মতে, আপনারা যারা এই প্রবাল দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন তারা শুধু দ্বীপের উপরিভাগে অবস্থিত কিছু চুনা ও বেলে পাথর, কিছু মরা কড়ি, শামুক, ঝিনুক, পানির ঢেউ এর সাথে ভেসে আসা প্রবালের কিছু ভাঙ্গা টুকরা, কিছু মরা শৈবাল ছাড়া আর কিছুই দেখতে পান না। অথচ আমরা পর্যটকেরা এগুলি দেখেও তো বিমোহিত হই। না জানি প্রকৃত সৌন্দর্য আরো কত সুন্দর।
লেখকঃ সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ, ফেনী জেলা।

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.