ফেনীতে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছে দম্পতিরা • নতুন ফেনীনতুন ফেনী ফেনীতে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছে দম্পতিরা • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ফেনীতে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছে দম্পতিরা

রাশেদুল হাসানরাশেদুল হাসান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৯:০৩ অপরাহ্ণ, ২০ মার্চ ২০১৯

ফেনীতে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করেন ৭২.২ শতাংশ সক্ষম দম্পতি। এদের মধ্যে এদের মধ্যে ফেনী সদরে ৭৩.৯১ শতাং, সোনাগাজীতে ৭৪.৭৯ শতাংশ, দাগনভূঞায় ৭১.০২ শতাংশ, ছাগলনাইয়ায় ৬২.৫৮ শতাংশ, ফুলগাজীতে ৭৩.৪৯ শতাংশ ও পরশুরামে ৭৫.০৬ শতাংশ সক্ষম দম্পতি পরিবার-পরিকল্প গ্রহণ করে থাকেন।

জেলা পরিবার-পরিকল্প বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় ৪২টি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে দুটি পদ্ধতিতে সেবা প্রদান করা হয়। ক্লিনিকেল ও মাঠ পর্যায়ে ভাগ হয়ে গ্রামীন প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের কর্মীরা তাদের সেবা কার্যক্রম ছড়িয়ে দেন। এখান থেকে মানুষ পরিবার পরিকল্পনা সেবা, জরুরী প্রসূতি সেবা, প্রসব পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা, গর্ভবর্তী সেবা, নবজাতক ও শিশু সেবা, কৈশোরকালিন প্রজনন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা পেয়ে থাকেন।

জেলার ৬টি উপজেলায় একজন করে পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সহকারী পরিবার-পরিকল্পনা অফিসার, মেডিকেল অফিসার ও সহকারী পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা রয়েছেন। এছাড়াও জেলায় ২৪ জন উপসহকারী মেডিকেল অফিসার, ৩ জন ফার্মাসিস্ট, ৫৫ জন পরিদর্শিকা, ৪০ জন পরিদর্শক ও ১৮০জন পরিবার কল্যাণ সহকারী জেলার ৬টি উপজেলার সব কটি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে এ সেবা দিয়ে থাকেন। পরিবার-পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণে উদ্বুদ্ধ ও সন্তান উৎপাদনে সক্ষম দম্পতিদের এ সেবা প্রদান করে থাকেন এ বিভাগের কর্মীরা।

সূত্র জানায়, জেলায় ২ লাখ ৭৮ হাজার ৫শ’ ৬০ জন সক্ষম দম্পতি রয়েছে। এদের মধ্যে ৮৮ হাজার ১শ’ ৬৫ জন খাবার বড়ি, ২০ হাজার ৫শ’ ২৪জন কনডম, ৪২ হাজার ২১জন ৩ মাস মেয়াদী ইনজেকশন, ১০ হাজার ৩শ’ ৫৮ জন ১০ বছর মেয়াদী ইউবি, ১১ হাজার ৭শ’ ১৩ জন ৩ বছর মেয়াদী ইমপ্লান্ট ও ১ হাজার ৭শ’ ৮৩জন পুরুষ ও ২৪ হাজার ৫শ’ ৩৮ জন নারী স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন।

প্রসূতি সেবা এ বিভাগের অন্যতম আরেকটি প্রধান সেবা। গর্ভধারণের পর থেকে পরিবার কল্যাণ সহকারীরা তালিকা সংগ্রহ করে কমপক্ষে চার বার স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে পরামর্শ নিতে উদ্বুদ্ধ করেন। এছাড়া প্রসূতিকে নানা ভাবে সচেতন করার চেষ্টা করেন। শুধু মাত্র জানুয়ারী মাসে স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মীদের তত্বাবধানে ৪শ’ ১৯টি স্বাভাবিক প্রসব ও ২শ’ ৮৩টি সিজার অপারেশন করা হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে দূরবর্তী সেবাগ্রহিতাদের জন্য জেলায় ৩১২টি স্যাটেলাইট ক্লিনিক রয়েছে। এ সকল স্যাটেলাইট ক্লিনিকে সকল যন্ত্রপাতি নিয়ে কেন্দ্রে আসতে অক্ষম রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের কর্মীরা। পরিবার-পরিকল্প পদ্ধতির বাইরেও সেবা প্রদান করে থাকেন। গড়ে প্রতি মাসে ৪ হাজারের অধিক নারী, দেড় থেকে ২ হাজার পুরুষ ও ৫ হাজারের অধিক শিশুকে সাধারণ সেবা দিয়ে থাকেন। এছাড়াও প্রত্যেক কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মাসে কমপক্ষে ৪টি প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম করে থাকেন।

ফেনী সদর উপজেলার পাঁছগাছিয়া ইউনিয়নে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সহকারীর কাজ করছেন বৈশাখী রানী দাস। তিনি বলেন, মাঠে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় আমাদের হিমসিম খেতে হয়। এখনকার মানুষ অনেক বেশি শিক্ষিত তাদের পরিবার পরিকল্পা বিষয়ে বুঝাতে অনেক কষ্ট হয়। মোটিভেশনাল ও টেকনিকেল প্রশিক্ষণ দিলে এমন সমস্যা কিছুটা হলেও কমবে বলে তার ধারণা।

দু:খ প্রকাশ করে তিনি বলেন, মানুষের সেবার উদ্দেশ্যে কাজটি আন্তরিকতার সাথে করি। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি পরিবারে ছুটে যাই কোন না কোন সেবা দিতে। মানুষের কাছ থেকে অনেক ভালোবাসা পাই কিন্তু আমাদের প্রতি উদাসিন সরকার। দেখুন আমাদের কোন পদোন্নতি নাই। অথচ সরকারের দুটো মন্ত্রনালয়ের কাজ আমাদের করতে হয়।

ফেনী সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক দিদারুল আলম বলেন, প্রত্যেকটা ইউনিয়নে একজন করে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডবিøউপি) থাকেন যিনি সন্তান প্রসবে সহযোগিতা করেন। কিন্তু একজন পরিদর্শিকার পক্ষে গোটা ইউনিয়নে কাজটি করা সম্ভব নয় বলে সাধারণ মানুষ দাত্রিদের মাধ্যমে কাজটি করে নানা সমস্যায় পড়েন। সিএসবি প্রশিক্ষণটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সহকারীদের দেয়া হলে মানুষ নিরাপদ সন্তান প্রসব নিশ্চিত হবে বলে তিনি জানান।

ফেনীস্থ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম জানান, এ বিভাগের কার্যক্রমকে আরো বেশি সহজতর করতে প্রত্যেকটি ঘরে পরিবার কল্যাণ সহকারী, পরিদর্শক, মেডিকেল অফিসার ও পরিদর্শিকার নম্বর সম্বলিত স্টিকার লাগানো হচ্ছে। যাতে করে একজন সেবাগ্রহিতা যে কোন সময় তার প্রয়োজনে আমাদের কর্মীদের কাছে পায়।

তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক কর্মীকে মোবাইল ট্রেকিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। মনিটরিং আরো বেশি জোরদার করা হচ্ছে যাতে করে মানুষ সেবা বঞ্চিত না হয়। মাঠকর্মীদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত পরিমান প্রশিক্ষণ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাদের এসব প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনজেটি

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.