এখন সব খাবার খেতে পারি • নতুন ফেনীনতুন ফেনী এখন সব খাবার খেতে পারি • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

এখন সব খাবার খেতে পারি

ডা. ছরওয়ার আলমডা. ছরওয়ার আলম
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ, ০৩ এপ্রিল ২০১৯

রোগীর বয়স ৪৫। এসেছেন এলার্জির চিকিৎসার জন্য। রোগী জানান, দীর্ঘ বছর ধরে তিনি খাবারের এলার্জিতে ভুগছেন। এর জন্য শুরু থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখিয়ে আসছেন। তারা পরীক্ষানিরীক্ষা করে রক্তে এলার্জির মাত্রা পরিমাপ করে সাধ্যমত চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। ফলাফল হল- যতদিন ঔষধ সেবন করেন ততদিন কিছু উপশম পান। ঔষধ ছেড়ে দিলে রোগ আগের অবস্থায় চলে যায়। দীর্ঘ দিন এলার্জির ঔষধ সেবন করতে করতে শারীরিক অক্ষমতা, নিদ্রাস্বল্পতা, শ্বাসকষ্ট সহ নানা অসুবিধা দেখা যাচ্ছে। অধৈর্য হয়ে কয়েকবার চিকিৎসক পাল্টিয়ে দেখেছেন। সব চিকিৎসক প্রায় একই প্রকারের ঔষধই দেন। এতে তিনি দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসকেরা সবাই বলেন, এলার্জিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে, এর কোন স্থায়ী চিকিৎসা নাই, উপশম পেতে হলে আজীবন এলার্জির ঔষধ খেয়ে যেতে হবে। রোগী বলেন, এভাবে কি আর জীবন চলে। আগে তিনি সব খাবার খেতে পারতেন। কোন কিছুই বাছতেন না। কিন্তু গত দশ বারো বছর ধরে তিনি ধীরে ধীরে অনেক খাবার খেতে পারেন না। বিভিন্ন প্রকার মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শাক সবজি সহ নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় খাবারই তিনি খেতে পারেন না। এগুলো খেলে সাথে সাথে পুরো গায়ে অসহনীয় চুলকানি ও চাকা চাকা হয়ে ফোলা দেখা দেয়, এতে উত্তাপ, জ্বালা ও ব্যথা থাকে। এলার্জির ঔষধ খেলে কিছুটা উপশম পান। পছন্দ ও পরিমান মত খাবার খেতে না পেরে পুষ্টিস্বল্পতায়ও ভুগছেন। তিনি শুনেছেন, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় অনেক সময় অনেক জটিল রোগ আরোগ্য হয়। তার এই সমস্যার হোমিওপ্যাথিতে কোন সমাধান আছে কিনা জানতে ও চিকিৎসা নিতে এসেছেন।

আমরা রোগীর প্রাথমিক কথা শুনে বললাম, চিকিৎসা বিজ্ঞানে এলার্জি একটি জটিল সমস্যা। এর সঠিক চিকিৎসা খুবই দুঃসাধ্য। রোগী প্রশ্ন করলেন কেন, আমরা বললাম সেটা এক রহস্যজনক ব্যাপার। রোগী বললেন ঠিকই তো মনে হচ্ছে। যে খাবারগুলি আমি আগে পর্যাপ্ত পরিমানে খেতে পারতাম, সে খাবারগুলি এখন আমি খেতে পারিনা। রোগী বললেন আমি এর কারণ জানতে চাই। আমরা বললাম, আমাদের শরীরে স্বয়ংক্রিয় একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আছে। শরীরের এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত পরিবেশের নানা রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। যেটা খুবই স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। এই প্রচেষ্টাকে রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া বা ইমিউন সিস্টেম বলে। কোন কারণে এই ইমিউন সিস্টেমে গণ্ডগোল দেখা দিলে ঘটে বিপত্তি। তখন আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং পুষ্টির জোগানদাতা, চিরচেনা এমন অনেক ধরনের খাদ্যবস্তু (এন্টিজেন) যেমন দুধ, মাছ, মাংস ইত্যাদিকে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শরীরের জন্য ক্ষতিকর ও শত্রু ভেবে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। সাধারণত ক্ষতিকর নয়, নির্দোষ বলে গন্য এমন বস্তুর প্রতি শরীরের এ অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াই এলার্জি।

ইমিউন সিস্টেম শত্রু-মিত্র চিনতে না পারার কারণে, যেসব দ্রব্য এলার্জি সৃষ্টি করে তাকে বলা হয় এলারজেন বা এন্টিজেন এবং এসব দ্রব্য দেহে প্রবেশের ফলে দেহের অভ্যন্তরে যে দ্রব্য সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় এন্টিবডি। এন্টিজেন ও এন্টিবডি পরস্পর মিলিত হলে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় এন্টিজেন-এন্টিবডি বিক্রীয়া। এই বিক্রিয়ার ফলে উক্ত কোষসমূহ থেকে প্রদাহ সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পদার্থ হিস্টামিন বের হয়। এই হিস্টামিনের কারণে শরীরে চুলকায়। যতদিন পর্যন্ত শরীরের ইমিউন সিস্টেমে ঐ গন্ডগোল বলবৎ থাকবে ততদিন পর্যন্ত নির্দোষ খাদ্যবস্তুকে রোগজীবাণু ভেবে দেহ প্রতিরোধের চেষ্টা করতে থাকবে। ফলাফল হিসাবে শরীরে হিস্টামিন তৈরী হতে থাকবে। এই হিস্টামিনের উৎপাদন বন্ধ করা যায় না। তখন সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে শুধু এন্টি হিস্টামিন ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে উপশম দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এখনো পর্যন্ত সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতির এটাই সর্বশেষ প্রচেষ্টা।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে সেভাবে কখনো চিকিৎসা হয়না। রোগীর অস্বাভাবিক আচরণ বা লক্ষণগুলি খুজে বের করে সেগুলির সাথে হোমিওপ্যাথিক পরীক্ষিত যে ঔষধের লক্ষণের সাথে বেশি মিল পাওয়া যাবে সেই ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে এলার্জি সহ যে কোন রোগ স্থায়ীভাবে আরোগ্য সম্ভব।আমাদের ব্যাখ্যা রোগীর নিকট অধিক যুক্তিসংগত মনে হল। তার মনে আশার সঞ্চার হল যে, তার এলার্জি রোগ হোমিওপ্যাথিতে আরোগ্য সম্ভব।

আমরা বললাম, অন্যান্য রোগ হোমিওপ্যাথিতে দ্রুত সময়ে আরোগ্য হলেও এক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি সময় লাগতে পারে। এতে রোগী চিকিৎসা নিতে রাজি হলেন। আমরা যত্নসহকারে তার পূর্ণাঙ্গ রোগীলিপি নিয়ে লক্ষণসাদৃশ্যভাবে দীর্ঘদিন চিকিৎসা দিই। আমরা এই রোগীর লক্ষণ বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন সময় যে ঔষধগুলি ব্যবহার করি তা হল রাসটক্স, নেট্রাম মিউর, মার্কসল। এতে তার বিভিন্নপ্রকার খাদ্যের এলার্জি থেকে ধীরে ধীরে
আল্লাহর রহমতে আরোগ্য লাভ করে। তার দীর্ঘদিনের পুরানো এলার্জি রোগ আরোগ্য হওয়াতে সে খুবই খুশি এবং সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞ। সে এখন আগের মত সব খাবার খেতে পারে। দীর্ঘ দিন ধৈর্যসহকারে ঔষধ সেবনের জন্য উক্ত রোগীকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
লেখকঃ সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ, ফেনী জেলা।

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.