অধ্যক্ষ তাহমিনা বেগমের বিচারের দাবী • নতুন ফেনীনতুন ফেনী অধ্যক্ষ তাহমিনা বেগমের বিচারের দাবী • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অধ্যক্ষ তাহমিনা বেগমের বিচারের দাবী

নিজস্ব প্রতিনিধিনিজস্ব প্রতিনিধি
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০২:৪০ অপরাহ্ণ, ১৪ এপ্রিল ২০১৯

যৌন নীপিড়নের পর আগুন দিয়ে হত্যার শিকার সেনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুরসরাত জাহান রাফিকে নিয়ে কটুক্তি করায় বিচারের দাবী উঠেছে ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ তাহমিনা বেগমের বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ জানিয়েছেন অধ্যক্ষের এ দৃষ্টতাকে ক্ষমার অযোগ্য। তাকেও আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবী তাদের।

জানা যায়, ১৩ এপ্রিল শনিবার সকালে নুসরাতের হত্যাকারীদের বিচারের দাবীতে মানবন্ধনের অনমতি চেয়ে অধ্যক্ষের কাছে যায় সেখানকার শিক্ষার্থীরা। তিনি মানববন্ধনের অনুমতি না দিয়ে নুসরাতকে নিয়ে সমালোচনা শুরু করেন। অধ্যক্ষের আচারণে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওই দিনই বিষয়টি সামাাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে তাহমিনা রুমি ও স্নিগ্ধা জাহান রিতা নামে দুই ছাত্রী।

তারা স্ট্যাটাসে লিখেছেন, নুসরাত হত্যার বিচার দাবিতে ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের ব্যানারে আমরা একটা মানববন্ধন করতে কলেজের অধ্যক্ষ তাহমিনা বেগমের কাছে শনিবার সকাল ৯টায় অনুমতির জন্য গিয়েছিলাম। আমরা কয়েকজন ম্যাডামের রুমে যাই। তারপর ম্যাডাম যা বললেন তা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমরা কেউই।

‘ম্যাডাম আমাদের বললেন নুসরাতকে তার স্যার বলেছিল পরীক্ষার আগে প্রশ্ন দেবে, তাই নুসরাত নিজ ইচ্ছায় স্যারের কাছে গিয়েছিল। অথচ এতদিন ধরে আমরা জেনে আসছি কলেজের পিয়নকে দিয়ে নুসরাতকে ডাকা হয়েছে। তবে কি আমরা এতদিন ভুল জানতাম? আমাদের কাছে ভুল তথ্য দিয়েছে মিডিয়া? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছা হয় আমার। কে দেবে এসব প্রশ্নের উওর? কোথায় পাব এসবের উওর? আমাদের ম্যাডাম আরও বলেছেন, অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে ঘটতেছে, কারণ বর্তমান মেয়েরা অনেক লোভী। নুসরাত মেয়েটা ধোয়া তুলসী পাতা না। মেয়েটার সঙ্গে যেটা হয়েছে তার জন্য মেয়েটাই দায়ী। এটার জন্য মানববন্ধন করতে আমি কখনও অনুমতি দেব না। তোমরা ক্লাসে যাও।’

এদিকে নুসরাতকে নিয়ে অধ্যক্ষের কটুক্তির বিষয়টি জানাজানি হলে প্রতিবাদ ও অধ্যক্ষের বিচারের দাবী শুরু হয়। অধ্যক্ষ তাহসিনা বেগমের বিরুদ্ধের শিক্ষার্থীদের নানা অভিযোগ শেয়ার করে। অন্যান্য কর্মসূটিসহ কলেজ অভ্যন্তরে শিক্ষার্থীদের সাথে অশালিন ও রূঢ় ব্যাবহার করেন বলেও একাধিক শিক্ষার্থী জানান।

বিষয়টি অস্বিকার করে অধ্যক্ষ তাহমিনা বেগম নতুন ফেনী’কে বলেন, শিক্ষার্থীদের এ অভিযোগ সত্য নয়। আমি তাদের বলেছি- বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী দেখছেন। এখন মানবন্ধন করার কোন প্রয়োজন নেই। নুসরাতের বিরুদ্ধের কটুক্তি করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরণের কোন কটুক্তি আমি করিনি।

ফেনীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক ও নারীকর্মী মঞ্জিলা আক্তার মিমি বলেন, অধ্যক্ষের এমন আচারণে আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। তিনি একজন নারী হয়ে কিভাবে একজন নারীকে নিয়ে এমন কটুক্তি করতে পারেন। নুসরাতের বিষয়ে যেখানে সবাই প্রতিবাদ করছে সেখানে তার বাঁধা দেয়া কোন যৌক্তিকতা নেই।

আইনজীবি ও মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম নান্টু বলেন, নুসরাত হত্যাকান্ডের বিচার নিয়ে যেখানে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ মহলের তৎপর রয়েছে সেখানে রাষ্ট্রের একজন কর্মচারী হয়ে এমন মন্তব্য দৃষ্টতা। তিনি বলেন, আন্দোলন-প্রতিবাদ শিক্ষার্থীদের অধিকার। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে দায়িত্ব বহির্ভূত এমন মন্তব্য শোভা পায় না। তিনি আরো বলেন, একজন অধ্যক্ষ হয়ে আরেক অধ্যক্ষের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ ঘটনা তার পদত্যাগ উচিত বলে বলে মনে করেন তিনি।

ফেনী রিপোর্টাস ইউনিটির সভাপতি আরিফুল আমিন রিজভী বলেন, নুরসাত হত্যাকান্ডের ফলে গণবিস্ফোরণ সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে জাতি-বর্ণবেদে সকল শ্রেণিপেশার প্রতিটি মানুষ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠেছে সেখানে তিনি (অধ্যক্ষ) এত দু:সাহস পান কোথায়? নুসরাতকে নিয়ে অধ্যক্ষ তাহমিনা বেগমের এমন মন্তব্য ক্ষমার অযোগ্য বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও ফেনী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিকম নতুন ফেনী’কে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। যদি অধ্যক্ষ এমন মন্তব্য করে থাকেন তবে তিনি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে তিনি ঠিক এমন কথা বলেছেন কিনা সেটা দেখার বিষয়। এখনতো তিলকে তাল বানানো হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে সকালে জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামানের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনিও বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছেন।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনজেটি

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.