নানা সমস্যায়ও বদলে যাচ্ছে ছাগলনাইয়া পৌর শহরের প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত সরকারি কলেজ। শিক্ষক সংকট এই কলেজের সবচেয়ে বড় সমস্যা। ২৪ জন শিক্ষকের মধ্যে ৭ জন শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। এরমধ্যে কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে উদ্ভিদ বিদ্যা ও পদার্থ বিজ্ঞান এ দুটি বিষয়ে কোন শিক্ষক না থাকায় বিপাকে শিক্ষার্থীরা। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কোন ক্যান্টিনের ব্যাবস্থা নেই। বিজ্ঞানাগার ল্যাব থাকলেও রয়েছে তা অকার্যকর। এরমধ্যে আরেকটি সমস্যা হচ্ছে বর্ষাকালে কলেজের মাঠ সামান্য বৃষ্টি হলেই এক হাটু পানির নিচে তলিয়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমে পরিনত হয় গোচারণ ভূমিতে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলাধুলা বা বসতে পারেনা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এ কলেজ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হলেও বর্তমানে উন্নতির পথে এগুচ্ছে বলে জানান কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সদ্য ইন্টারমিডিয়েট পাশ করা জহির উদ্দিন তারেক নামের এক শিক্ষার্থী নতুন ফেনী’কে বলেন, আগে এক সময় দেখা যেতো কলেজে নিয়মিত ক্লাস হতো না। ইউনিফর্ম, ব্যাজ, আইডি কার্ড ছাড়াই ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজে প্রবেশ করতো। ক্লাসের সময় শিক্ষার্থীরা কলেজ আঙ্গিনায় বিভিন্ন আড্ডায় মেতে থাকতো এবং অন্য কলেজের ছাত্ররা এসে মেয়েদেরকে উত্ত্যক্ত করতো। কলেজ ক্যাম্পাসে আসা যাওয়ার পথে প্রতিনিয়ত বহিরাগতদের ইভটিজিংয়ের শিকার হতো মেয়েরা। কিন্তু গত বছরের শেষের দিকেই প্রফেসর মোঃ রুহুল আমিন স্যার এ কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি আসার পর থেকে কলেজে শিক্ষার পরিবেশ অনেকটা পরিবর্তনে আসে। নিয়মিত ক্লাস ও শিক্ষকদের সঠিক তত্ত্বাবধানের ফলে আমরা এবছর আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করতে পেরেছি।
কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক সালাহ উদ্দিন জাফর’র সাথে কথা বলে জানা যায়, কলেজে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে নিয়ে আসতে অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ রুহুল আমিন নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। উনার দিকনির্দেশনায় আমাদের শিক্ষক পরিষদ শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পাঠদান করতেছি। যার কারনে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা মোটামুটি রেজাল্ট করেছে। এছাড়াও শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য এবছর জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কলেজ অধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়ে সংবর্ধিত হয়েছেন প্রফেসর মোঃ রুহুল আমিন।
তিনি আরো বলেন, উপজেলায় শ্রেষ্ঠ কলেজ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন সহকারী অধ্যাপক মোঃ আনোয়ার হোসেন, শ্রেষ্ঠ প্লাটুন শিক্ষক বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোঃ পেয়ার আহমেদ, শ্রেষ্ঠ বিএনসিসি প্লাটুন ও শ্রেষ্ঠ রোভার স্কাউট গ্রুপ সহ ১৭ টি ইভেন্টে বিজয়ীরা নির্বাচিত হয়ে পুরস্কার লাভ করেন।
এব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ রুহুল আমিন নতুন ফেনী’কে বলেন, আমি এ কলেজে নিয়োগ পাওয়ার পর সর্বপ্রথম শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকাল ১০ টার পরে ইউনিফর্ম, ব্যাজ, আইডি কার্ড ছাড়া শিক্ষার্থীসহ সকল বহিরাগতের অনুপ্রবেশ বন্ধ করে দিই। শিক্ষার্থীরা যাতে নিয়মিত ক্লাস ও পড়াশোনা করে বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরনে ভালো রেজাল্ট করতে পারে সেদিকে খেয়াল রেখেছি। ক্যাম্পাসের ভিতরে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য সিসি ক্যামেরা এবং প্রতিটি শ্রেনীকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও অন্যান্য বিষয় তদারকি করার জন্য শিক্ষকদের দিয়ে মনিটরিং টিম গঠন করেছি।শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের মেধা বিকাশে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারে সেজন্য ক্যাম্পাসের ভিতরে একটি কম্পিউটার ল্যাব, ডিবেটিং ক্লাব, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ও একটি সুসজ্জিত লাইব্রেরী স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য অনার্স কোর্স চালু করতে ইতিমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলা ও হিসাব বিজ্ঞান এ দুটি বিষয় চালুর জন্য অনুমোদন দিয়েছেন। বাকি বিষয়গুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে চালু হবে এবং বরাদ্দ পেলে কলেজের বাকি সমস্যাগুলোও সমাধান করা হবে। এছাড়াও কলেজে গতবছর পাশের হার ছিলো ১৯%। এবার সবার সহযোগিতায় ৪৫.৩৮% নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সহযোগিতা পেলে শিক্ষার্থীরা আগামীতে আরো ভালো রেজাল্ট করতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনজেটি