ফেনীতে শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কে ইবনে হাসমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় শিশু মাহফুজা সুলতানার (৮ মাস) মৃত্যুর ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।সোমবার পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবদুল খালেককে প্রধান করে ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির অপর সদস্যরা হলেন— ফেনী জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. কামরুজ্জামান, অ্যানেস্থেসিয়া ডা. মো. ইলিয়াস ভূঞা, দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) নুরুল আবসার মামুন, ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) ডা. তানভীর আহমেদ।
ওই কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগ তদন্ত করে সুনির্দিষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে।
নিহত ওই শিশুর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে এ ঘটনায় ঘটিত তদন্ত কমিটি সোমবার হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে। এ সময় তদন্ত কমিটির সভাপতি পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবদুল খালেক ভুক্তভোগীর কথা শোনেন।
পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবদুল খালেক জানান, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। তদন্তের প্রথমে আমরা অনেক গরমিল পেয়েছি। বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখা হবে।
জানা যায়, বুধবার বিকালে শিশু কন্যাকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন পরশুরাম উপজেলার উত্তর শ্রীপুর গ্রামের মো. আকবর হোসাইন।
তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. এসএসআর মাসুদ রানা পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবদুল খালেককে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির গঠন করেন।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২৩ মার্চ বেসরকারি সংস্থা এসএনএডি উদ্যোগে হাসপাতালটিতে আয়োজিত বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিতে একমাত্র শিশু কন্যাকে নিয়ে আসেন পরশুরাম উপজেলার উত্তর শ্রীপুর গ্রামের আকবর হোসাইন।
তার শিশুর মুখের ভেতর আলাজিহ্বা অপারেশনের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা, সৈয়দ সামছুদ্দীন আহমেদের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হয়।
বিকাল ৪টায় রক্তের একটি পরীক্ষা করিয়ে তাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানো হয়। এর ১ ঘণ্টা পর সুলতানাকে বের করে আনা হলে তার অবস্থার অবনতি হয়। সঙ্গে সঙ্গে কর্তব্যরত চিকিৎসককে বিষয়টি অবহিত করা হলে পুনরায় তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায় হাসপাতালের লোকজন।
প্রায় ৩ ঘণ্টা পর শিশুর নিথর দেহটিকে আইসিইউতে ভর্তির জন্য চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দেয়া হয়।
শিশুটির বাবা আকবর হোসেন জানান, ওইদিন অপারেশন থিয়েটার থেকে আনার পর আমার মেয়ের নড়াচড়া ছিলো না। আমাদের কাছে তখনই মনে হয়েছে আমার মেয়ে আর নেই। তাড়াহুড়ো করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নেয়ার আগেই আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে তারা মৃত্যু সনদ দেয়নি। বুধবার দিনভর নানা চেষ্টা করে ইবনে হাসমান থেকেও আমার মেয়ের মৃত্যুর সনদ নেয়া যায়নি।
শিশুটির কাকা শাহাদাত হোসেন জানান, লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আমরা আদালতে হত্যা মামলা করবো। হাসপাতালের ভেতরেই আমার ভাতিজি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা গেছে। আমরা এর বিচার চাই।
এদিকে হাসপাতালের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন জানান, চিকিৎসায় কোনো ভুল হয়নি। চট্টগ্রামে নেয়ার পথে অন্য কোনো সমস্যায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।