ডাঃ ছরওয়ার আলম|
আনোয়ারা বেগম। বয়স ৫৭।স্বামী- বদিউল আলম।ঠিকানাঃ মোহাম্মদ আলী, ফেনী সদর, ফেনী। তার এক নিকট আত্মীয়ের পরামর্শে আমাদের নিকট চিকিৎসা নিতে আসেন। জিজ্ঞেস করলাম আপনার কি কষ্ট? রোগীনি জানালেন- ১. মাথাব্যথা ২. বুকে পিঠে টানধরা ৩. চোখে ঝাপসা দেখা।
মাথা ব্যাথা
জানতে চাইলাম আপনার মাথাব্যথা কবে থেকে। রোগীনি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে জানালো ২৮ বছর ধরে তার মাথাব্যথা। ব্যাথা মাথার তালু এবং মাথার বামদিকে বেশী। মাথাব্যথার সাথে চোখমুখ ফুলে যায়। মাথার, কপালের রগ ফুলে যায়। মগজ পঁচে গেছে মনে হয়। মাথা টিপলে, বেঁধে রাখলে, চুল টেনে দিলে ভাল লাগে। রোদ্রে, শব্দে, টেনশন করলে, উপবাসে মাথাব্যথা বাড়ে। সাথে বমির ভাব হয়। এই রোগের জন্য ২৮ বছর ধরে ঔষধ খেয়ে যাচ্ছি। যতক্ষণ ঔষধ সেবন করি ততক্ষণ কম থাকে। এখন ঔষধও আর আগের মত কাজ করেনা। তাই মাথাব্যথা নিয়ে বিষণ দুঃশ্চিন্তায় আছি।
পিঠে ধরা
পিঠে ধরা প্রথমে ডান দিকে ছিল। বর্তমানে পুরো পিঠে ধরা ব্যাথা, সাথে বুকে টান ধরা আছে। পেরেক ঠোকার মত ব্যাথা, হঠাৎ বাডে এবং ঔষধ সেবন ছাড়া যায়না।
চোখে ঝাপসা দেখা
গত ৫ বছর ধরে চোখে ঝাপসা দেখি, যার কারনে এখন ঠিকমত কুরআন শরিফ পডতে পারিনা। কাছের জিনিস, ছোট অক্ষর ঝাপসা লাগে। রোদ্রে, গরমে, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে এবং মাথাব্যথার সময় বেশি ঝাপসা দেখি।
রোগীনিকে জিজ্ঞেস করলাম মা আপনার ছোট থেকে আর কি কি রোগ হয়েছিল। রোগীনি জানালেন আমার আর কোন রোগ নেই। সকল রোগ বিয়ের পরে শুরু হয়, বিয়ের পূর্বে বেশ ভাল ছিলাম।
আমরা জানতে চাইলাম আপনার বংশে কার কি রোগ আছে। তিনি জানালেন মাথাব্যথা কারো নাই তবে নানার অরিশ ছিল এবং মায়ের বাত ও প্যারালাইসিস আছে। রোগীনি আরো জানালেন গরম আবহাওয়া তার অসহ্য, ঘাম স্বাভাবিক, ঘুম কম, হাতপায়ে জ্বালাপোড়া আছে।
খাওয়া-দাওয়া সম্পর্কে বললেন, খাবারে অতিরিক্ত লবন নেয় না, ঝাল ও মাংস পচন্দ। টক মিষ্টি, মাছ, ডিম, দুধ, সবজি কম পচন্দ। পিপাসা কম, ক্ষুধা-রুচি কম। রোগীনি শান্ত ও চাপা স্বভাবের, স্মরণশক্তি কম, সাহস কম তবে সন্দেহ আছে। পায়খানা প্রস্রাব স্বাভাবিক। তার সকল কষ্ট দিনে, রোদ্রে বাডে।
আমরা রোগীনির বর্তমান কষ্ট, অতীত ইতিহাস, সার্বদৈহিক লক্ষন, পচন্দ-অপচন্দ, বৃদ্ধি -উপশম সবকিছুু মূল্যায়ন করে ঔষধ নির্বাচন করলাম ‘নেট্রাম মিউর’। উক্ত ঔষধে রোগীর ২৮ বছরের দূরারোগ্য মাথাব্যথা, ৫ বছরের চোখে ঝাপসা দেখা এখন সম্পুর্ন সুস্থ্য। পিঠর ব্যাথাও আর নেই। রোগীনি আত্মতৃপ্তি সহ জানালেন এখন আমি নিয়মিত কোরআন শরিফ পড়তে পারি।
লেখক: ডাঃ ছরওয়ার আলম
সেবা হোমিও ক্লিনিক, সমবায় সুপার মার্কেট, এস এস কে সড়ক, ফেনী।