ডাঃ ছরওয়ার আলম|
ফেনী সদর উপজেলার আফতাব বিবি ফাজিল মাদ্রাসার বাংলা বিভাগের প্রভাষক কামাল উদ্দিন এবং তার স্ত্রী নুর নাহার বেগম। দু’জনে ২৫ এপ্রিল ২০০৯ খ্রি. তারিখে তাদের একমাত্র আড়াই বছর বয়সের শিশু সন্তান তানিমকে নিয়ে আমাদের চেম্বারে আসলেন। তাদের দু’জনের চোখে-মুখে উৎকন্ঠা ও বিষন্নতার ছাপ। তারা জানালেন তাদের এই শিশু সন্তান নিয়ে দু’জনে বিষণ দুঃচিন্তায় আছেন।
কি কষ্ট জানতে চাইলাম। তানিমের মা জানালেন তার ছেলে কোষ্ঠবদ্ধতায় ভূগছে। কোন ঔষধে তেমন কোন উপকার হচ্ছেনা। এলোপ্যাথি ঔষধ যতদিন সেবন করাই ততদিন কিছুটা ভাল থাকে। কিন্তু ঔষধ সেবন করতে করেত শিশু নিজেই বিরক্ত হয়ে গেছে। এখন আর এই অবুঝ শিশু ঔষধ সেবন করতে চায়না। ঔষধ দেখলে ভয়ে দাঁত মুখ খিঁচে রাখে। অনেক অত্যাচার করে ঔষধ সেবন করাই। এভাবে কি চলে?
জানতে চাইলাম বাবুর কোষ্ঠবদ্ধতা কবে থেকে? মিসেস নুর নাহার বেগম জানালেন জন্মের ২ মাস পর থেকে। ঔষধ সেবন ছাড়া পায়খানা হয়না। ঔষধ, পানের বোঁটা কত উপায়ে যে চেষ্টা করি। জানতে চাইলাম এতে শিশুর কি অসুবিধা হয়। তিনি জানালেন পেট ফেঁপে থাকে। দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস যায়। শিশু খেতে চায়না। কান্নাকাটি করে। বিরক্ত করে। ৫/৬ মাস ধরে পেট ব্যাথা করে। প্রস্রাব স্বাভাবিক, বিছানায় করেনা।
আর কি কষ্ট জানতে চাইলে তানিমের মা জানালেন, ১ বছর ধরে জিহ্বায় ঘা আছে। ঘা একবার একদিকে হয়। ঘা বাড়লে মুখে ঝাল ও শক্ত খাবার নিতে চায়না। তিঁনি আরো জানালেন মুখের লালা পড়েনা। মুখে গন্ধ করেনা জানতে চাইলাম ছোট থেকে বাবুর আর কি কি রোগ হয়েছে? তিঁনি জানালেন আর বড় কোন রোগ হয়নি। বংশে কারো কোষ্ঠবদ্ধতা নেই। তানিমের গরম কম সহ্য হয়। ঘুম কম।ঘাম বেশী। মাথার তালু গরম থাকে। ক্ষুধারুচি কম। জোর করে খাওয়াতে হয়।
তানিমের মন মেজাজ সম্পর্কে জানতে চাইলাম তাঁরা জানালেন সে সাধারনত চুপচাপ থাকে। কথা কম বলতে চায়। মানুষের সাথে কম মিশতে চায়। ভীতু স্বভাবের। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর বেশী বিরক্ত করে।
আমরা তানিমের বর্তমান কষ্ট, সার্বদৈহিক লক্ষনাবলী ও মানসিক অবস্থা প্রভৃতি মূল্যায়ন করে ঔষধ নির্বাচন করলাম ‘ম্যাগনেশিয়া মিউরিকাম’। উক্ত ঔষধ কয়েক মাস সেবনের পর রোগীর কোষ্ঠবদ্ধতা সম্পুনরূপে আরোগ্য হয়, মুখের ঘা ভাল হয়, চুপচাপ মনোভাব কেটে যায়, শিশু মনে চাঞ্চল্যতা ফিরে আসে। এখন সে সবার সাথে মিশে।
তানিমের সুস্থতায় কামাল সাহেব এবং তার স্ত্রী নুরনাহার বেগম বেশ খুশী। তাঁরা ছেলের সুস্থতায় সৃষ্টিকর্তার কৃতজ্ঞতা স্বীকারপূর্বক হোমিওপ্যাথিকে ধন্যবাদ জানান। তানিমের বয়স এখন ১০ বছর। সে এখন স্কুলে পড়ে।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক পরিষদ, ফেনী।