হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় `চর্মরোগ' • নতুন ফেনীনতুন ফেনী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় `চর্মরোগ' • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় `চর্মরোগ’

রাশেদুল হাসানরাশেদুল হাসান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬
ডাঃ ছরওয়ার আলম।
মোঃ এস আলম। বয়স ২৫। ধলিয়া, ফেনী সদর, ফেনী। রোগী গত ১২ বছর ধরে বিভিন্ন প্রকার দুরারোগ্য চর্মরোগে কষ্ট পাচ্ছেন। এর জন্য চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ সহ বহু চিকিৎসা করে আসছেন। কিন্তু যতক্ষন ঔষধ সেবন করেন ততক্ষণ কিছুটা আরাম পেয়ে থাকেন। ঔষধ বন্ধ করে দিলে আবার আগের মত হয়ে যায়।
রোগী জানান, প্রথমে রানের গোড়ায় চুলকানি দেখা দেয়। পরে ধীরে ধীরে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এর জন্য বিভিন্ন প্রকার নামিদামী মলম লাগানো হয়েছে। স্থায়ী উপকার হচ্ছেনা। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে চর্মরোগের বিভিন্ন রুপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে শুকনো দাউদের মত আকৃতি ধারন করেছে। ইহা পুরো শরীরে বিচ্ছিন্ন ভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। আক্রান্ত স্থান থেকে প্রচুর চামড়া বা আঁইশ উঠে। বেশ চুলকায়, চুলকাতে চুলকাতে আক্রান্ত স্থান ছিড়ে ফেলতে মনে চায়। শরীরের ভাঁজ সমূহে চুলকানী বেশী। আক্রান্ত স্থান ঘামায়, হেজে যায় এবং তাতে ঝাঁঝালো গন্ধ আছে। রোগী আরো জানান, চুলকানি রাত্রে বাড়ে, গত ১০ বছর ধরে চোখে ঘুম নাই চুলকানির কারনে। রোগী হালকা পাতলা গঠনের। নাকের গোড়ায় ও মুখমন্ডলে কালচেদাগ দেখা দিয়েছে।
রোগী জানান, তার মনে ফুর্তির অভাব, নিজের পরিবার পরিজন ও আত্মীয়স্বজনের প্রতি উদাসীন ভাব। মায়া-মমতা কম। কোন কিছু ভাল লাগেনা। অলস ভাব, শারীরিক কাজ করতে মনে চায়না। কোন কাজে মন বসেনা। রোগযন্ত্রণায় ও হতাশার কারনে আত্মহত্যা করতে মনে চায়। তিনি জানান, পেটের মধ্যে খালি খালি ভাব, খাবার পরও উপশম হয়না।  বুকের ডানদিকে ব্যাথা। ক্ষুধা কম। মিষ্টি প্রিয়, দুধ, রুটি, মাংশ, চর্বি ও জাতীয় খাদ্যে অনিহা।বংশে শ্বাসকষ্ট, মানসিক রোগী, হৃদরোগ আছে। ঠান্ডা অসহ্য, হাত পায়ের তালুতে তাপ ও জ্বালাপোড়া আছে। আকাশে উড়ার ও পড়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। পায়খানা কষা। প্রস্রাব হলুদ।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সব চর্মরোগের এক ঔষধ হয়না। রোগীর মন মেজাজ, রোগের বৃদ্ধি ও উপশমের বৈশিষ্ট্য, খাবারের পচন্দ অপচন্দ, আবহাওয়া ঠান্ডা গরমের সহ্য অসহ্য এবং রোগের প্রকৃতি প্রভৃতি বিশ্লেষণ করে একই রোগেও বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে ঔষধ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। এটাই হোমিওপ্যাথির সাতন্ত্রতা।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের যে বদনামটি এখনো আছে, সেটি হল ঔষধ খেলে রোগ বেড়ে যায়। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এটা ঘটে চর্মরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে ভুল ঔষধ নির্বাচন হলেও রোগ বাড়ে। আবার ঔষধ নির্বাচন সঠিক হলেও রোগ বাড়ে, ঔষধের শক্তিমাত্রা যথোপযুক্ত না হওয়ার কারনে। তাই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় চর্মরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ঔষধ নির্বাচন, ঔষধের শক্তিমাত্রা ও পথ্যাপথ্যের উপদেশের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
আমরা উক্ত রোগীর বর্তমান কষ্ট, সার্বদৈহিক লক্ষনাবলী মুল্যায়ন করে ঔষধ নির্বাচন করলাম “সিপিয়া”। উক্ত ঔষধ সেবনে রোগী ধীরে ধীরে আরাম পেতে থাকে। ১২ বছরের দুরারোগ্য চর্মরোগ প্রায় ৩ মাসের মধ্যে আরোগ্যলাভ করে। শারীরিক অন্যান্য উপসর্গ উপশমিত হয়।
লেখক: সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ, ফেনী জেলা।
pradancy-school

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.