ডা. ছরওয়ার আলম।
মাওলানা মহিউদ্দিন, উত্তর ধলিয়া, ফেনী সদর, ফেনী। ১১ জুলাই ২০১৩ খ্রি. তারিখে তার স্ত্রীকে নিয়ে আমাদের চেম্বারে আসলেন। বললাম কি সেবা দিতে পারি? জানালেন তারা নব দম্পতি। তার স্ত্রী সন্তান সম্ভাবা। তাই তারা গর্ভকালীন সময়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের নিকট এসেছেন। রোগীনির স্বামী মোঃ মহিউদ্দিন আরো জানালেন, তার স্ত্রীর আরো বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা আছে, এর জন্য তারা এলোপ্যাথিক চিকিৎসকের নিকট গিয়েছিলেন। এলোপ্যাথিক চিকিৎসকেরা গর্ভকালীন সময় অন্যান্য সমস্যার জন্য চিকিৎসা দেওয়াটা নিরাপদ মনে করেনি। তাই তারা ভেবেচিন্তে সবকিছু মিলে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তিনি আরো বলে, তারা মুরুব্বীদদের নিকট শুনেছেন গর্ভকালীন সময় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা তুলনামূলক ভাল ও নিরাপদ। তাদের বিশেষ অনুরোধে আমরা চিকিৎসা সেবা দিতে রাজি হলাম।
রোগীনির নিকট জানতে চাইলাম আপনার বর্তমান শারীরিক অসুবিধা গুলি কি কি আমাদের নিকট খুলে বলুন। তিনি জানান, গত ১ মাস ধরে পিরিয়ড বন্ধ আছে। পরীক্ষায় প্রেগনেন্সী পজেটিভ এসেছে। বর্তমানে বমির ভাব ও বমি হয়। খাবারের গন্ধে ও খাবারের পর, সকালে এবং নড়াছড়া করলে বমি বাড়ে। কয়েকদিন ধরে কোমরে ব্যাথা, নড়াছড়া ও পরিশ্রমে বাড়ে, বিশ্রামে উপশম। ২ মাস ধরে নাভীর নীচে পেটে টান ধরা ব্যাথা, খাবারের পর বাড়ে, ইহা ১৫ থেকে ২০ মিনিট থাকে। কোন কিছুতেই আরাম পাইনা। বিশ্রামে কিছুটা ভাল লাগে। মাথাব্যথা আছে, রোদ্রে বাড়ে। উড়িয়া যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। নিদ্রার পর মন খারাপ থাকে।
রোগী আরো জানালেন, ছোট থেকে আর বড় কোন রোগ হয়নি। বংশে বোনের হাঁপানি আছে, মা বাবার ডায়াবেটিস আছে। তার অতি ঠান্ডা ও গরম অসহ্য। হাত ও পায়ের তালুতে তাপ ও জ্বালা। ঘাম স্বাভাবিক, ঘুম বেশী। ঝাল ও টক পচন্দ। ডিম ও দুধ প্রিয়। প্রচুর ক্ষুধা, ক্ষুধা অসহ্য, কিন্তু ক্ষুধা অনুপাতে খেতে পারেনা, একটু খেলে পেট ভরে গেছে মনে হয়। মেজাজ কিছুটা খিটখিটে, কাজে প্রচন্ড অলস। তুলনামূলক কথা কম বলে। রোগী দেখতে হালকা পাতলা, অপুষ্টি আছে। ওজন মাত্র ৩৫ কেজি।
প্রচন্ড দুর্বল এ রোগীর জন্য গর্ভকালীন বিভিন্ন সমস্যা সহ একক ঔষধ নির্বাচন বেশ জটিল মনে হল। তারপরও আমরা মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে বর্তমান সকল কষ্টকর লক্ষন মূল্যায়ন করে ঔষধ নির্বাচন করলাম “লাইকোপোডিয়াম”। উক্ত ঔষধ সেবনে তার দুর্বলতা কাটতে থাকে, ক্ষুুধা রুচি বাড়তে থাকে, ধীরে ধীরে সকল কষ্টকর উপসর্গ উপশমিত হয়। এতে যথা সময়ে নিরাপদে, স্বাভাবিকভাবে নিজ বাসায় কম কষ্টে তার সুপ্রসব হয়। তিনি এক কন্যা সন্তানে জননী হন। মা মেয়ে দু’জন সুস্থ আছেন। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে গর্ভকালীন সময়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাপদ প্রসবের জন্য তাদের পরিবারের সবাই সন্তুষ্ট।