ডা. ছরওয়ার আলম।
সৌদি আরব প্রবাসী মো. সেলিম (৪৫)। গোবিন্দপুর, নতুন বাজার, ফেনী সদর, ফেনী। দীর্ঘ বছর বিদেশে থাকেন। অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য দেশে এসেছেন ১৫ দিন পূর্বে। তার রোগ এবং চিকিৎসা নিয়ে বিষণ দুঃচিন্তায় আছেন। তার চিকিৎসার জন্য শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে বিভিন্ন জন বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে তাকে বিভ্রান্তের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। এর জন্য তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না কি করবেন। অবশেষে স্থানীয় কয়েক জন মুরুব্বির পরামর্শে আমাদের নিকট আসলেন।
রোগীর নিকট জানতে চাইলাম, আপনার প্রধান সসস্যা কি? তিনি জানালেন দীর্ঘ বছর ধরে তার পায়খানার রাস্তার বাহিরে একপাশে ফোড়া দেখা দেয়, ব্যাথা করে, পাঁকে, পুঁজ যায়। তখন চাকুরি করতে খুব কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে ব্যাথার জন্য ছুটি কাটাতে হয়, এর জন্য কোম্পানির বকা শুনতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে ঔষধ সেবন করে আসছি। স্থায়ী চিকিৎসা হচ্ছেনা। চিকিৎসকেরা অপারেশনের কথা বলেছেন কিন্তু আমার এক আত্মীয়েরও এই ধরনের সমস্যা আছে, বেশ কয়েকবার অপারেশন করেছে। কিন্তু স্থায়ী চিকিৎসা হচ্ছেনা। তাই তিনি বিষন দুঃচিন্তায় আছেন। আমাদের পরামর্শ চান।
আমরা বললাম প্রাথমিক কথাবার্তায় আপনার ফিস্টুলার সমস্যা মনে হচ্ছে। মূলত ফিস্টুলা একটি সার্জিক্যাল রোগ। অন্য কোন জটিলতা না থাকলে অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করানো উত্তম। তাই আমরা একজন ভাল সার্জারী চিকিৎসকের সাথে পরামর্শের অনুরোধ করলাম। এতে রোগীর চোখেমুখে হতাশার চিত্র ফুটে উঠলো। বললাম ভয় পাচ্ছেন কেন, এটাতো অনেক ছোট সমস্যা, মানুষের আরো অনেক বড় বড় সমস্যা অপারেশনের মাধ্যমে সুস্থ্য হচ্ছে। রোগী বললেন ডাক্তার সাহেব, অপারেশনের আমার প্রচন্ড ভয়। এছাড়া বিদেশে আমি ছোট চাকুরি করি। বাড়িতেও আমার ঘর ছাড়া বাড়তি কোন জায়গা সম্পত্তি নাই। আমি ঋনগ্রস্থ হলে আমার পরিবার পরিজন উপবাস থাকতে হবে। এছাড়া আমার বন্ধুবান্ধবদের মধ্যেও কয়েকজনকে একাদিকবার অপারেশনের পরও সুস্থ্য না হওয়ায় আমার মনে ভরসা কম। তাই আমি অপারেশন করাতে রাজি নই। দয়া করে আপনি আমাকে ঔষধ দিন। এছাড়া পান, চা, সিগারেটে আমার অভ্যাস নাই তাই আমি আশা করি হোমিওপ্যাথিক ঔষধের মাধ্যমে আমি সুস্থ্য হব। রোগীর সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে আমরা চিকিৎসা দিতে রাজি হলাম।
সেলিম সাহেবকে বললাম আপনার বর্তমান শারীরিক কষ্ট সমূহ বিস্তারিত আমাদের নিকট খুলে বলুন। তিনি বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে তার মলদ্বারের বাহিরে ডান পাশে প্রথমে চুলকায়, পিলপিল করে ব্যাথা করে, এর পর ধীরে ধীরে ছোট ফোড়ার মত হয়। তখন প্রচন্ড তাপ ব্যাথা থাকে, এর পর উক্ত ম্থানে মুখ হয়ে পুঁজ, রক্ত, পানি যাওয়ার পর আস্তে আস্তে কষ্ট কমে। এভাবে কিছু দিন পর পর একই স্থানে এই সমস্যা আবার দেখাদেয়। অতিরিক্ত পরিশ্রম, এলার্জি খাবার, অতিরিক্ত গরমে বাড়ে। রোগী আরো জানান, তার হাত পায়ের তালুতে তাপ ও জ্বালা আছে, ঠান্ডায় উপশম। মিষ্টি প্রিয়, মাংশ, ডিম, দুধ কম পচন্দ। ক্ষুধা অসহ্য, আবার একটু খেলে পেট ভরে গেছে মনে হয়। পেটে প্রচুর বাতাস হয়।
তিনি আরো জানান, সে সঞ্চয়ী মনোভাবের। প্রচন্ড আলসেমী আছে। কাজে সাহস কম। আবেগপ্রবণ। হতাশা ও দুঃশ্চিন্তা বেশী। কোষ্ঠকাঠিন্যে আছে। প্রস্রাব হলুদ। তার সব কষ্ট বিকালে বাড়ে।
ফিস্টুলার ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিতে ৫০ টির ও বেশী ঔষধ ব্যবহার হয়। রোগীর বর্তমান কষ্ট, মানসিক, সার্বদৈহিক ও চরিত্রগত লক্ষনাবলী মূল্যায়ন করে যে কোন একটি শক্তিকৃত ঔষধ পরিবর্তিত মাত্রায় ব্যবহার করতে হয়। উক্ত পদ্ধতিতে ঔষধ নির্বাচন যদি সঠিক হয় এবং ঔষধের গুনগত মান ঠিক থাকলে সার্জিক্যাল রোগ ফিস্টুলা সহ যে কোন জটিল রোগ অল্প ঔষধে, স্বল্প সময়ে হোমিওপ্যাথিতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ভাবে স্থায়ীভাবে আরোগ্য হয়। আমরা তার রোগ লক্ষন ও শারীরিক মানসিক অন্যান্য লক্ষনাবলী মুল্যায়ন করে ঔষধ নির্বাচন করলাম “ক্লাব-মস”। উক্ত ঔষধ সেবনেন ২ মাসের মধ্যে সেলিম সাহেবের ফিস্টুলা সৃষ্টিকর্তার অসীম কৃপায় সম্পূর্ণরুপে আরোগ্য হয়। ধন্যবাদ নিরাপদ এবং প্রাকৃতিক নীতিনির্ভর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের আবিষ্কারক চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. স্যামুয়েল হানেমানকে।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ, ফেনী জেলা।