ডা. ছরওয়ার আালম >>
ওমর ফারুক (৩২)। ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া বাজারের ফুল ও কসমেটিক ব্যবসায়ী। ৩ জানুয়ারি ২০১৫ খ্রি. তারিখে আমাদের নিকট তার মেরুদন্ড, কোমর ও পিঠের ব্যথার চিকিৎসার জন্য আসেন। তিনি জানান, এর জন্য বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখিয়েছন। ঔষধ যতদিন সেবন করেন ততদিন ব্যথা কম থাকে কিন্তু স্থায়ী আরোগ্য হচ্ছেনা। তাই তার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের পরামর্শে আমাদের নিকট এসেছেন।
তার অসুন্থতার কথা শুনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সকল রিপোর্ট এবং প্রেসক্রিপশন সমূহ ভাল করে দেখলাম। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় লাম্বার লর্ডোসিস (মেরুদন্ডের বক্রতা) ও লাম্বার অস্টিওআর্থাইটিস (মেরুদন্ডের বাত) চিহ্নিত হয়। পূর্বের চিকিৎসকবৃন্দ সবাই আন্তরিকভাবে সাধ্যমতো চিকিৎসা দিয়েছেন। কিন্তু রোগীর বড় অভিযোগ হল, দীর্ঘদিন ব্যথার ঔষধ খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে গেছেন, এছাড়া ব্যথানাশক ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়েও ভয় আছে। তাই হোমিওপ্যাথিক ঔষধে অধিকাংশ ক্ষেত্রে, স্থায়ীভাবে রোগের আরোগ্য হয় এবং সাধারণত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নাই শুনে, তার এই সমস্যার জন্য উপায়ান্ত না দেখে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তার বিশ্বাস হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় তিনি আল্লাহর রহমতে সুস্থ্য হবেন। আমরা যেন তাকে ফিরিয়ে না দিই।
রোগী অনেক আশা নিয়ে তার মেরুদন্ডের হাড় বাঁকা এবং মেরুদন্ডের বাত রোগ চিকিৎসার জন্য আমাদের নিকট এসেছেন। কিন্তু আমাদের তথা চিকিৎসা বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতাও অনেক। সাধারণত এই দুইটি জটিল অসুখ। সঠিক ঔষধ নির্বাচন করা না গেলে ইহা চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য দুরারোগ্য ব্যাধি। যাক তারপরও রোগীর বিশেষ অনুরোধে আল্লাহর উপর ভরসা করে রোগীর পূর্ণাঙ্গ বিবরণ শুনতে রাজি হলাম।
রোগী জানালেন, দীর্ঘদিন ধরে তার শরীরে ব্যথা, প্রথম প্রথম তলপেটের নীচে ব্যথা করতো সাথে তাপ ছিল, বর্তমানে কোমরে ও পিঠের হাড়ে, মাংসপেশিতে ব্যথা করে। মেরুদণ্ডের হাড় পেটের দিকে বেঁকে যাচ্ছে। ঠান্ডায় বাড়ে, গরম স্যাকে উপশম। সাথে মাথা ঘুরানো আছে। তিনি আরও জানান, ছোটকালে কানে ব্যথা ও ঘাড়ে ব্যথা ছিল। বংশে বাবার বাত, প্যারালাইসিস, বড় ভাই ও বাবার যক্ষা রোগ ছিল। রোগী জানান, তুলনামূলক ঠান্ডা কম সহ্য হয়, ঘাম বেশী, ঘুম কম, পায়ের তালুতে জ্বালাপোড়া আছে। ঝাল, মাছ, মাংস, সবজি পচন্দ। লবন, টক, মিষ্টি, ডিম, দুধ অপচন্দ। পিপাসা ও ক্ষুধারুচি স্বাভাবিক। রোগী আরও জানান, তার রাগ বেশি, স্বরণশক্তি ভাল, কাজে সাহস বেশি। পায়খানা কষা, প্রস্রাব স্বাভাবিক। বসলে কষ্ট বাড়ে।
লাম্বার লর্ডোসিস এবং লাম্বার অস্টিওআর্থাইটিস রোগ ধরে হোমিওপ্যাথিতে সুনির্দিষ্ট কোন ঔষধ নেই। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে সকল রোগের ক্ষেত্রে ঔষধ নির্বাচন করতে হয়, প্রত্যেকে রোগীর ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ রোগীলিপি নিয়ে। অর্থাৎ রোগীর শারীরিক রোগকষ্ট সহ তার মেজাজ, মনের পচন্দ- অপচন্দ, সার্বদেহিক অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যসমূহ, আবহাওয়াগত পচন্দ-অপচন্দ বা সহ্য- অসহ্য, ঘাম, ঘুম প্রভৃতির অস্বাভাবিক বৈশিষ্টসমূহ মূল্যায়ন, খাবারের পচন্দ- অপচন্দ এবং সহ্য- অসহ্য প্রভৃতির লক্ষণাবলীর সাথে হোমিওপ্যাথিক পরীক্ষিত যে ঔষধের লক্ষনাবলীর সাথে সর্বাধিক মিল পাওয়া যাবে একমাত্র সেই ঔষধেই উক্ত রোগীর কষ্টকর অস্বাভাবিক লক্ষনাবলীর আরোগ্য প্রাপ্ত হয়।রোগী হারানো স্বাস্থ্য ফিরে পায়। ইহাই হোমিওপ্যাথিক নিয়মে আদর্শ আরোগ্য। অর্থাৎ বিনা কষ্টে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীনভাবে, অল্প সময়ে, স্বল্প খরছে, স্থায়ীভাবে চিকিৎসা। এইজন্য হোমিওপ্যাথিকে প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি বলা হয়।
উক্ত নিয়মে ফারুক সাহেবের ক্ষেত্রে আমরা তার রোগীলিপি মূল্যায়ন করে, তার মেরুদন্ডের হাড় বাঁকা ও মেরুদণ্ডের হাড়ের বাত রোগ সহ তার বর্তমান অসুন্থতার জন্য ঔষধ নির্বাচন করলাম “ক্যাল্কেরিয়া ফস”। উক্ত ঔষধ সেবন করে ওমর ফারুক সাহেব জটিল অসুখ থেকে আরোগ্য লাভ করে এখন সুস্থ্য আছেন। সকল প্রশংসা একমাত্র মহান আরোগ্যদানকারীর।
লেখকঃ সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ, ফেনী জেলা।