শীতে শিশুর সুস্থতায় • নতুন ফেনীনতুন ফেনী শীতে শিশুর সুস্থতায় • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শীতে শিশুর সুস্থতায়

রাশেদুল হাসানরাশেদুল হাসান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০২:৪৭ অপরাহ্ণ, ২২ নভেম্বর ২০১৭

লাইফস্টাইল ডেস্ক>>
দিনে গরম, সন্ধ্যা ও রাতে শীতের আমেজ। এই মৌসুমের মিশ্র আবহাওয়ায় বড়দের খাপ খাওয়াতে সমস্যায় পড়তে হয়। সেখানে ছোটদের আরও বেশি সমস্যা। স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে প্রথমে চলে আসে সাধারণ জ্বর, ঠান্ডাজনিত সর্দি-কাশির কথা বা কমন কোল্ড। বিশেষত শীতের শুরুতে তাপমাত্রা যখন কমতে থাকে, তখনই এর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এটা মূলত শ্বাসতন্ত্রের ওপরের অংশের রোগ। চিকিৎসা করলেও ৭ দিন লাগে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাশি কয়েক সপ্তাহ থাকতে। আর শীতে শিশুরা একটু বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে দুশ্চিন্তা না করে এ সময়টাতে শিশুদের বিশেষ পরিচর্যা নিলে শীতেও আপনার সোনামণি থাকবে সুস্থ।

শীতের সময়টা শিশুর বিশেষ যত্ন সম্পর্কে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আল আমিন মৃধা বলেন, শীতে শিশুরা সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, জ্বর, নিউমোনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। শীতে আবহাওয়া শুষ্ক ও ধুলাবালু থাকার কারণে মূলত শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হয়। এ সময়টা অভিভাবকদের কিছুটা সচেতন থাকতে হবে। শিশুদের ঠান্ডা বাতাস এবং ধুলাবালু থেকে দূরে রাখতে হবে। যেহেতু শীতে এ রোগগুলো সংক্রামিত হয়, তাই যতটা সম্ভব শিশুদের জনসমাগমপূর্ণ জায়গায় কম নেওয়া ভালো। শিশুদের গামছা, রুমাল, তোয়ালে প্রভৃতি আলাদা হওয়া উচিত। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সময় শিশুদের দূরে রাখা উচিত।

দিনে গরম, শেষ রাতে ঠান্ডা?
এই সময়টা খুব খারাপ। দেখা যায় যে শোয়ার সময় ফ্যান জোরে দিয়ে ঘুমিয়েছেন কিন্তু শেষ রাতে খুব ঠান্ডা লেগে গেছে। তাই শোয়ার সময় কাঁথা বা লেপ বা গরম কাপড় পাশে নিয়ে ঘুমান। ফ্যান একেবারে জোরে না দিয়ে আস্তে চালিয়ে দিন। রাতের বেলায় শিশুদের ক্ষেত্রে একটু বাড়তি নজর দিন।

১ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর যত্ন
শিশুকে প্রয়োজন অনুযায়ী উষ্ণ রাখুন। ঠান্ডা পরিবেশে রাখা যাবে না। স্যাঁতসেঁতে ঘরেও তাকে রাখা ঠিক হবে না। বাচ্চাকে বুকের দুধ নিয়মিত খাওয়ান। ফিডারে খাওয়ালে অল্প গরম দুধ দিন। ঘুমের মধ্যে ঠান্ডা দুধ দেবেন না। ছয় মাসের বেশি হলে বাচ্চাকে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার দিন। খিচুড়িতে ডিমের সাদা অংশ, লাল শাক, পালং শাক অল্প করে দিতে পারেন। লেবুর রস দেবেন, কমলার রস খাওয়াবেন। এতে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়বে।

যেসব বাচ্চা হামাগুড়ি দেয়, দেখবেন তারা যেন ঠান্ডা মেঝেতে হামাগুড়ি না দেয়। কার্পেট ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ কার্পেটের রোয়া বা ধুলা থেকে অ্যালার্জি হয়। তাই মাদুর বা ম্যাট ব্যবহার করা ভালো।

ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ১ দিন অন্তর গোসল করান। গোসলের পর বেবি লোশন লাগাবেন। তেলজাতীয় কিছু লাগাবেন না। অনেকে নবজাতককে নিয়মিত গোসল করান না। ফলে বাচ্চার গায়ে ফুসকুড়ি ওঠে এবং এর মধ্যে পুঁজ জমে যায়। এ সময় খুব গরম কাপড় পরানোর দরকার নেই। মোটা সুতি কাপড় পরানো যেতে পারে। আঁটসাঁট বা উলের কাপড় পরালে শিশুর শরীর ঘেমে ঘামাচি উঠতে পারে। বাচ্চাকে নরম কাপড়ের জুতা পরানোর অভ্যাস করুন। শোয়ানোর সময় মোজা পরিয়ে শোয়ান। উলের মোজা পরানোর প্রয়োজন নেই।

এ বয়সী বাচ্চার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকে। সর্দি, কাশি সহজেই লেগে যায়। বাচ্চাকে খুব জনবহুল জায়গায় (মেলা, পিকনিক) না নিয়ে যাওয়াই ভালো।

১ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুর যত্ন
এই বয়সে শিশুরা অনেক খেলাধুলা ও দৌড়াদৌড়ি করে থাকে। তাই খুব বেশি গরম ও ভারী কাপড় পরার প্রয়োজন হয় না। তবে সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় ও বিকেলে খেলতে যাওয়ার সময় পর্যন্ত উষ্ণতা নিশ্চিত করুন। স্কুলে পরস্পরের মাধ্যমে শীতকালে কিছু ছোঁয়াচে চর্মরোগ হতে পারে। বাচ্চার ত্বকের প্রতি খেয়াল রাখুন। নিয়মিত লোশন লাগান, যেন ত্বক শুষ্ক হয়ে না যায়।

গোসলের আগে সরিষার তেল ব্যবহার না করে জলপাই তেল ব্যবহার করা ভালো। গোসলের পর বেবি লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন সাবান এবং এক দিন শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে। শীতকালীন শাকসবজি ও ফল-কমলা, বরই বেশি করে খেতে দিন। ত্বকের যত্নে শিশুর গায়ে বেবি ওয়েল বা ভ্যাসলিন ব্যবহার করুন।

সতর্কতা
শীতের শুরুতে এবং রোদ উঠলে মাঝে মাঝেই শিশুর লেপ, তোশক, কম্বল, চাদর ইত্যাদি রোদে দিতে হবে। রোদ থেকে তোলার পর তা ঝেড়ে ঘরে রাখতে হবে। আর ধুলাবালু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এসবের ওপর কাপড়ের কভার ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।

যা করবেন না
অযথা শিশুকে অতিরিক্ত সোয়েটার পরিয়ে রাখবেন না। এতে ঘাম জমে সেই ঘাম শীতকালীন ঠান্ডা বাতাসে শুকিয়ে শিশুর সমস্যা তৈরি করতে পারে।

শীতকালে নবজাতকের মাথা ন্যাড়া না করা ভালো। শিশুর নাক বা মুখের ওপর কাপড়, লেপ, কম্বল ইত্যাদি দেবেন না। জ্বর হলে শিশুকে অতিরিক্ত জামাকাপড় পরাবেন না। এতে শরীরের তাপ আরও বেড়ে যায়।
সম্পাদনা: আরএইচ

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.