শাহ আলম (৪০) , কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা। বিষণ দুশ্চিন্তা ও হতাশাগ্রস্থ অবস্থায় আমাদের নিকট আসলেন, তার দীর্ঘ বছরের পুরানো মাথাব্যথার চিকিৎসার জন্য। তিনি জানালেন দীর্ঘ ২০ বছর ধরে মাথাব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন। এর জন্য নানা চিকিৎসা করিয়েছেন, যতদিন ঔষধ সেবন করেন ততদিন ব্যথার কিছুটা উপশম হয়। ঔষধ সেবন বন্ধ করলে আবার ব্যথা বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমত মাথার সিটিস্ক্যান, এম.আর.আই সহ নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন, কিন্তু বড় কোন সমস্যা ধরা পড়েনাই। শাহআলম সাহেব পেশাজীবনে একজন ব্যবসায়ী। মাথাব্যথার কষ্টের জন্য ঠিকভাবে ব্যবসায়ে মন দিতে পারেন না। অনেক চিকিৎসা নিয়েও তার এ রোগ আরোগ্য না হওয়ায় হোমিওপ্যাথিতে কোন উপকার পাওয়া যায় কিনা তা জানতে ও প্রয়োজনে চিকিৎসা নিতে আসেন।
আমরা বললাম, হোমিওপ্যাথি সম্পূর্ণরূপে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি। মাথাব্যথা সহ যে কোন রোগ লক্ষণাবলী হোমিওপ্যাথিক ঔষধের লক্ষণের সাথে মিলে গেলে তা আরোগ্য হবে খুব অল্প সময়ে, স্থায়ীভাবে, বিনা কষ্টে, স্বল্প খরছে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীনভাবে। এর বাহিরে হোমিওপ্যাথিতে রোগ আরোগ্যের কোন সুযোগ নাই, এটাই হোমিওপ্যাথির বিশেষত্ব। এতে আপনি সন্তুষ্ট হলে এবং ইচ্ছা করলে আপনার পছন্দমত যে কোন ভাল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎকের পরামর্শ নিতে পারেন।
রোগী বললেন, সর্বপ্রকারের চিকিৎসা যেহেতু করে দেখেছি, সকল চিকিৎসকও যত্নসহকারে যথাসাধ্য চেষ্টা করে দেখেছেন, আমার রোগ আরোগ্য হচ্ছেনা, তাই আমি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দেখতে চাই। রোগীর বিশেষ অনুরোধে আমরা তার রোগীলিপি নিলাম। দীর্ঘ সময় ধরে যত্নসহকারে নেয়া রোগীলিপিতে ঔষধ নির্ণায়ক যে লক্ষণাবলী আমরা পেলাম তা অনেকটা গল্পের মত, রোগী বলেন- ২০ বছর আগের কথা, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশের হোটেল দোকানে, মালিক পক্ষ ও কাস্টমারের মধ্যে সামান্য ভুল বুঝাবুঝি থেকে মারামারি লাগে। পাশের ব্যবসায়ী হিসাবে মারামারি থামাতে দিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে আমার মাথার সামনের দিকের কয়েক স্থানে লাঠির আঘাত পাই, আঘাতের স্থান বেশ ফোলে যায়, কিন্তু ফাটেনাই কোন রক্তপাতও হয়নাই। এর জন্য তখন প্রাথমিক চিকিৎসা নিই। এতে ব্যথা ফোলা উপশমীত হয়। এর কিছুদিন পর থেকে ধীরে ধীরে মাথাব্যথা দেখাদিতে থাকে। এর পূর্বে কখনো মাথাব্যথা ছিলনা। মাথাব্যথার কষ্টের কারণে এখন জীবন বিতৃষ্ণ মনে হয়। অসহ্য হয়ে মাঝে মাঝে আত্মহত্যা করতে মন চায়। মেজাজ খিটখিটে। কোন কাজে উৎসাহ পাইনা। মানুষের সাথে মিশতে ইচ্ছা করেনা।ঠান্ডা আবহাওয়ায়, ঠান্ডা খাবারে, সকালবেলায় ও বিকালে, শব্দে, টেনশনে মাথাব্যথা বাড়ে। এই ব্যথা টিপে দিলে, গরমে, হাত দিয়ে চেপে ধরলে আরাম লাগে। পায়খানা নরম, সকালে বেশি হয়। গ্যাস্টাইটিস আছে, মুখ তিতা থাকে। শাকসবজি কম হজম হয়, পেট খারাপ করে। জিহ্বা হলুদ। মাংস কম পছন্দ।
আমরা উপরোক্ত লক্ষণাবলী মূল্যায়ণ করে তার ক্ষেত্রে ঔষধ নির্ণয় করলাম “নেট্রাম সালফ”। উক্ত ঔষধ সেবনে তার ২০ বছরের পুরানো মাথাব্যথা অল্পদিনের মধ্যে আরোগ্য লাভ করে। তিনি ভাবতে পারেননি অতি দ্রুত সময়ে তার মাথাব্যথা ভাল হবে। অল্প ঔষধে স্থায়ীভাবে তার মাথাব্যথা আরোগ্যলাভ করাতে সে খুবই সন্তুষ্ট এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
লেখকঃ সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ,