হাড়ের টিউমার চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি • নতুন ফেনীনতুন ফেনী হাড়ের টিউমার চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাড়ের টিউমার চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি

রাশেদুল হাসানরাশেদুল হাসান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৫:৩৬ অপরাহ্ণ, ০২ আগস্ট ২০১৮

রেহানা আক্তার (২৭)। সেনবাগ, নোয়াখালী। ১১ অক্টোবর ২০১৪ খ্রি. তারিখে আমাদের নিকট আসেন তার হাড়ের টিউমারের চিকিৎসার জন্য। তিনি জানান, কিছুদিন ধরে তার ডান পায়ের গোড়ালিতে শক্ত প্রকৃতির টিউমার দেখা দিয়েছে, এটাতে কোন ব্যথা-বেদনা নাই। দিন দিন বড় হচ্ছে। এর জন্য এখনো পর্যন্ত কোন চিকিৎসা নেন নাই। তাদের বিশ্বাস হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় এ ধরনের টিউমার স্থায়ী আরোগ্য হয়, তাই তিনি তার স্বামীসহ আমাদের নিকট এসেছেন হাড়ের (বোন) টিউমারের চিকিৎসা নিতে। আমরা তার টিউমার ভালভাবে দেখলাম, দেখে বিনাইন টাইপের অস্টিওক্লাসটোমা বলেই মনে হল।

যাক, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে যে টাইপের টিউমারই হোক না কেন, চিকিৎসা হবে রোগীর সার্বদৈহিক, চরিত্রগত লক্ষণের ভিত্তিতে। আমরা জানতে চাইলাম আর কি সমস্যা আছে। তিনি বললেন, আরো কয়েকটা সমস্যা আছে, সেগুলোর চিকিৎসা পরে নেব, আগে টিউমারের চিকিৎসা হোক। আমরা বললাম হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার একটি আলাদা বিশেষত্ব আছে, যা সাধারণত অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে নাই। তিনি জানতে চাইলেন সেই বিশেষত্বটা কি ? আমরা বললাম হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগীর লক্ষণের সাথে ঔষধের লক্ষণ মিললে, রোগীর অন্য রোগও একই ঔষধে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আরোগ্য হয়ে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগী বলেন নাই এমন রোগ আগে আরোগ্য হয়ে যায়, রোগী যে রোগের চিকিৎসার জন্য আসেন সেটা পরে আরোগ্য হয়! এর জন্য চিকিৎসকের নিখুঁত রোগ বিবরণী নেয়ার অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। তিনি বললেন, তাহলে তো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার অনেক সুবিধা। আমরা সাধারণত একই রোগীর বিভিন্ন রোগের জন্য একই সময়ে আলাদা আলাদা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিকট যাই। অনেক ক্ষেত্রে তাদের পরামর্শমত আলাদা আলাদা রোগের জন্য একই সময় ২০/ ২৫ প্রকারের ঔষধ সেবন করা লাগে। এটা অনেক কষ্টকর ও অনেক ব্যয়বহুল। এবার তিনি অন্যান্য রোগের কথা বলতে অনেক আগ্রহী হয়ে উঠেন। বললেন তার কোমরে ব্যথা আছ ৫ বছর ধরে। পরিশ্রমে বাড়ে। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া আছে, প্রস্রাব হলুদ, গরমে বাড়ে।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় শুধু আঙ্গিক লক্ষণের উপর নির্ভর করে ঔষধ নির্বাচন করা যায় না। রোগীর মানসিক, সর্বাঙ্গীক ও হ্রাস-বৃদ্ধিমূলক লক্ষণের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই আমরা রোগীর পূর্ণাঙ্গ রোগীলিপি নিয়ে ঔষধ নির্ণায়ক যে লক্ষণসমূহ পেলাম তা হল, রোগীনির ডান পায়ের গোড়ালিতে টিউমার, কোমরে ব্যথা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, রোগী মিষ্টি প্রিয়। ক্ষুধা অনুপাতে খেতে পারেনা, একটু খেলে পেট ভরে গেছে মনে হয়। সব সময় খাবারদাবার গরম পছ্ন্দ করেন। ক্ষুধা সহ্য করতে পারেনা, মাথা ঘুরে, দুর্বল লাগে। পেটে প্রচুর বাতাস জমে। স্বরণশক্তি কম। রোগীনির সঞ্চয়ী মনোভাব, হিসাবের বাহিরে খরচ করেন না। তুলনামূলক কথা কম বলেন। প্রথমে কথা বলতে জড়তা কাজ করে, কথা শুরু করলে সেই ভয় আর থাকেনা। হাত পায়ের তালুতে জ্বালাপোড়া আছে। প্রায়ই পায়খানা কষা থাকে। বিকাল থেকে সন্ধ্যারাত পর্যন্ত তার সব কষ্ট বাড়ে। উপরোক্ত লক্ষণাবলী মুল্যায়ন করে সব দিক বিচারে তার ক্ষেত্রে ঔষধ নির্বাচন করলাম “লাইকোপোডিয়াম”। লাইকোপোডিয়াম সাধারণত বোন টিউমারের ক্ষেত্রে খুব কমই ব্যবহৃত হয়। রোগ যাহাই হোক না কেন, আমাদের লক্ষণের বাহিরে যাওয়ার কোন সুযোগ নাই।

তাই আমরা তাকে মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে “লাইকোপোডিয়াম” দিলাম। উক্ত ঔষধ সেবনে অল্প কিছুদিনের মধ্যে ধীরে ধীরে তার ডান পায়ের গোড়ালির শক্ত টিউমার আরোগ্য লাভ করে। এর সাথে তার কোমরের ব্যথা ও প্রস্রাবের জ্বালাপোড়াও আরোগ্য হয়। তুলনামূলক অল্প সময়ে, বিনা অপারেশনে তার হাড়ের টিউমার আরোগ্য হওয়াতে সে খুবই খুশি এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ। এখনো মাঝে মাঝে সে নিজে ও তার ছেলে মেয়েদের চিকিৎসার জন্য আমাদের নিকট আসেন।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ, ফেনী।

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.