আইবিএস এর চিকিৎসার সন্ধানে • নতুন ফেনীনতুন ফেনী আইবিএস এর চিকিৎসার সন্ধানে • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আইবিএস এর চিকিৎসার সন্ধানে

নতুন ফেনীনতুন ফেনী
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৪:৫৭ অপরাহ্ণ, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মো. খুরশিদ আলম (২৯)। সিলেট, জালালাবাদ সেনাক্যাম্পের এক কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে কর্মরত আছেন। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে আইবিএস’এ কষ্ট পাচ্ছেন। এত বছর ধরে এই রোগের অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা নিয়ে আসছেন। অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করিয়েছেন, কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। ফলাফল হতাশাজনক। চিকিৎসকদের সকলের প্রায়ই একই কথা, এই রোগ আরোগ্য হবার নয়। ঔষধ খেয়ে যেতে হবে। কিন্তু আমিতো ঔষধ খেয়েও স্বস্তি পাচ্ছিনা, অতিরিক্ত ঔষধ খেতে খেতে দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছি, এমন দুর্বল হয়ে যাচ্ছি যে আমার হাড়গোড় এখন গোনা যায়। স্মৃতি দুর্বলতা ও কাজে অনাগ্রহ দেখা দিয়েছে। একসময়ে গায়ে প্রচুর শক্তি ছিল, প্রচুর খেতে পারতাম। আমাদের অনেক গরু এবং ক্ষেত খামার আছে। দৈনিক কয়েক মন দুধ পেতাম। আল্লাহর রহমতে প্রচুর খেতে পারতাম। দৈনিক ৩/৪ লিটার দুধ খেতাম। দৈনিক ৪/৫ কেজি মাংস খাওয়া আমার জন্য কোন ব্যাপারই ছিল না। আইবিএস রোগে ভুগে এখন কোন খাবারই হজম করতে পারিনা। কোনমতে জীবন বাঁচানোর জন্য সতর্কতার সাথে বেচে বেচে খুব সামান্য খাই। তারপরও যে, কি কষ্টে জীবনযাপন করতেছি তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। হতাশ হয়ে পৃথিবীর কোথায় আইবিএসের চিকিৎসা পাওয়া যায় ইন্টারনেটে খুঁজতেছি। এই কষ্ট থেকে বাঁচার জন্য, পৃথিবীর যে দেশেই চিকিৎসা থাকে প্রয়োজনে সেই দেশে যাওয়ার চিন্তা নিয়ে ইন্টারনেটে খুঁজতে খুঁজতে আপনার একটি লিখা আমার চোখে পড়ল, লিখাটি ছিল “২০ বছরে এমন প্রশান্তি পাইনি!” আপনার রোগীর ডায়েরী থেকে লিখা জনৈক মাষ্টার আবুল কালামের অসুস্থতা এবং চিকিৎসার গল্প বেশ কয়েকবার ভাল করে পড়লাম। পড়ে দেখি আমার অসুস্থতাও তার মত, প্রায একই রকম। তার সুস্থতার গল্প শুনে নিজের মধ্যে আশার সঞ্চার হল। মনে মনে বলতে লাগলাম মাষ্টার সাহেবের ২০ বছরের পুরানো রোগ ভাল হলে আমার ৮ বছরের রোগ ভাল হবেনা কেন?

আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, আপনি তাকে যেভাবে চিকিৎসা দিয়েছেন, সেভাবে আমাদের এলাকার চিকিৎসকেরা রোগীদের প্রচুর সময় দিয়ে চিকিৎসা দেয়াতে অভ্যস্থ নয়। তাই আমি আপনার লিখাটি যে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেই পত্রিকা “নতুন ফেনী’র” সম্পাদককে ফোন করে আপনাদের ঠিকানা নিয়ে চিকিৎসার জন্য মনঃস্থির করেছি বলে একদিন খুরশিদ সাহেব ফোন করে জানান। আমরা বললাম আপনার পছন্দমত স্থানীয় ভাল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। রোগী নাছোড়বান্দা। বললেন কোম্পানিতে ছুটির জন্য আবেদন দিয়ে রেখেছি। যখনই ছুটি পাই, ইনশাআল্লাহ আমি চিকিৎসার জন্য আসতেছি। আপনি আমাকে নিরাশ করবেন না। এতদিন ধরে চিকিৎকেরা আমাকে যতই নিরাশ করুক না কেন, মাষ্টার সাহেবের চিকিৎসার গল্প শুনে আমার বিশ্বাস ইনশাআল্লাহ আমি ভাল হব। রোগী তার কথামত ৩০ আগষ্ট ২০১৮ খ্রি. তারিখ সকালে ৮ ঘন্টা জার্নি করে সিলেট থেকে ফেনীতে আমাদের চেম্বারে আসলেন। আমরা খুরশিদ সাহেবকে অনেক সময় দিয়ে তার রোগের বিস্তারিত বিবরণ শুনলাম। রোগী জানান, ছোটকাল থেকেই তার আমাশয়ের সমস্যা ছিল। বর্তমানে ৮ বছর ধরে আইবিএস (ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম) ধরা পড়ে। প্রথম প্রথম পায়খানার সাথে মিউকাস বা আমাশয় ছিল। কোথাও যেতে পারতাম না, কখন যে পায়খানার বেগ হয়। এখন পায়খানার উপদ্রব কম, দৈনিক একবার হয়, কষা পায়খানা। আমাশয় পূর্বে থোকায় থোকায় যেত, এখন পায়খানার সাথে মিশে যায়। পায়খানা ক্লিয়ার হয়না।মলে টক গন্ধ। কোন খাবারই হজম হয়না। মাংস, দুধ, শাকসবজি সহ সকল খাদ্য, খাবার পর কোনভাবেই হজম হয়না। তলপেটের ডান পাশে একটা গোলকের মত মনে হয়, তারপর বামে যায়, তারপর পুরো পেটে ছড়িয়ে যায়, বর্তমানে বুকের বামপাশে হার্ট বরাবর ব্যথা। এখন কয়েক বছর ধরে খাবার পর পর উপরের পেটে প্রচুর বাতাস জমে। এই বাতাসের জন্য নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে মনে হয়। বিকট শব্দে লম্বা লম্বা ঢেকুর উঠে। এই ঢেকুরে বিশ্রী গন্ধ। সহকর্মী, পরিচিত অপরিচিত সকলে এতে অসম্ভব বিরক্ত হয়। কিন্তু ঢেকুর না উঠলে দম বন্ধ হয়ে, হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে আমি মরে যাব মনে হয়। এই গ্যাসের চাপ এবং ব্যথা অসহ্যকর। কোথায় থেকে যে এত গ্যাস তৈরি হয় বুঝে আসেনা। এখন আর কোন ঔষধেই কাজ হচ্ছেনা। তাই সব সময় পরিবেশ পরিস্থিতির এবং মানুষের বিরক্তির কারণ বুঝা শর্তেও আমি, কষ্টকর ঢেকুর তোলা এই কাজটি প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি। আমি এই সমস্যা থেকে বাঁচতে চাই। পেটে টানা একটা বান দেয়া আছে মনে হয়। লবন ও মিষ্টি প্রিয়। মুখ তিতা থাকে। শরীরে জ্বালাপোড়া আছে । অতি ঠান্ডা ও অতি গরম অসহ্য।হাটুতে বল পাইনা, হাটু থেকে পায়ের তালু পর্যস্ত সব সময় ঠান্ডা থাকে। ঘুম কম। মুখে গন্ধ আছে। মেজাজ খিটখিটে। স্বরণশক্তি কম। সাহস ভাল। সন্দেহ নাই। কাজে চালু ছিলাম এখন বল পাইনা। মিশুক প্রকৃতির। প্রস্রাব ঘন হয়, রাত্রে বাড়ে। দুপুরে ঘুমের পর এবং সকালে খারাপ লাগে।

আইবিএস সহ সকল রোগে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সুনির্দিষ্ট কোন ঔষধ হয়না। ঔষধ নির্বাচন করতে হয় রোগীর রোগ লক্ষণ, সার্বদৈহিক লক্ষণ, রোগের হ্রাস-বৃদ্ধি, রোগীর খাবারের ইচ্ছাঅনিচ্ছা, আবহাওয়াগত সহ্য-অসহ্য ক্ষমতা, রোগীর মানসিক লক্ষণাবলী প্রভৃতি বিচারে। এই লক্ষণসমূহ হোমিওপ্যাথিক পরীক্ষিত যে ঔষধটির লক্ষণের সাথে সর্বাদিক মিল পাওয়া যাবে একমাত্র সেই ঔষধেই ঐ রোগী তুলনামূলক অল্প সময়ে, বিনা কষ্টে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীনভাবে, দৃশ্যমান যুক্তিসংগত উপায়ে এবং স্থায়ীভাবে আরোগ্য হবে। এর বাহিরে চলমান হোমিওপ্যাথিক নামধারী কোন চিকিৎসাই প্রকৃত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নয়।

আমরা উক্ত রোগীর আইবিএস এর ক্ষেত্রে লক্ষণসাদৃশ্যভাবে ঔষধ নির্বাচন করলাম “কার্বোভেজ”। এক মাসের ঔষধ দিয়ে ১৫ দিন পর খবর জানাতে বললাম। রোগী ১৫ দিন পর ফোন করে জানান, আল্লাহর অশেষ রহমতে আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন অনেক ভাল। তার মুখে প্রশান্তির হাসি। তার দুরারোগ্য রোগ আরোগ্যের দিকে থাকায় সে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ, ফেনী জেলা।

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.