আকলিমা জাহান (২৬)। ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। অনেক দিন ধরে নানা রোগে কষ্ট পাচ্ছিলেন। এর জন্য যথানিয়মে অনেক রকমের ঔষধ সেবন করেন। এতে রোগ কিছুটা উপশমিত হয়। কিন্তু সমস্যাটা দেখা দিয়েছে তার অন্তঃসত্ত্বার কারণে। গাইনী চিকিৎসক বলেছেন, গর্ভাবস্থায় দীর্ঘদিন বিভিন্ন ব্যথানাশক ও এন্টিবায়োটিক ঔষধ মাত্রাতিরিক্ত সেবনে গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু আমার ৭/৮টি রোগে সব মিলিয়ে হিসাব করলে দৈনিক অনেক ঔষধ খাওয়া লাগে। কিন্তু স্বল্প ঔষধে সব রোগের আরোগ্য কোথায় পাওয়া যেতে পারে, আমরা খুঁজতে থাকি। অবশেষে আমাদের এক আত্মীয় পরামর্শ দেন, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার জন্য। ঐ আত্মীয় বলেন, গর্ভাবস্থার জন্য তুলনামূলক নিরাপদ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত চিকিৎসা হল হোমিওপ্যাথি। তার স্ত্রীর গর্ভকালীন সময়েও তিনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শে থেকে তুলনামূলক অনেক সুফল পেয়েছেন। তার পরামর্শ আমাদের মনে ধরল। তাই আমরা অনেক খোঁজখবর নিয়ে আপনাদের নিকট এসেছি।
আমরা আকলিমা জাহানের পূর্ণাঙ্গ রোগীলিপি নিলাম। রোগীনি লম্বা, হালকা পাতলা গঠনের, কিছুটা এনিমিক সাইন আছে। তার অন্যান্য কষ্টের মধ্যে ১) বমি, বমির সময় বুক গলা যেন চিরে যাচ্ছে মনে হয়, শক্ত করে বুক চেপে ধরে বমি করতে হয়, বমির পর মুখ তিতা থাকে। ২) পিঠে ব্যথা, নড়াছড়ায় বাড়ে, আক্রান্ত পার্শ্ব চেপে শুইলে আরাম লাগে,। ৩) গ্যাষ্টাইটিস, বুকজ্বালা ও বুকে সুঁচফুটানো ব্যথা করে, চুপচাপ শুয়ে থাকলে কমে। ৪) মাথাব্যথা, মনে হয় মাথা ফেটে যাবে, শব্দে আলোতে মাথাব্যথা বাড়ে। ৫) মাথা ঘুরানো আছে, পরিশ্রমে ঔ গরমে বাড়ে। ৬) কাসি, কাসিবার সময় বুকে ব্যথা করে, বুক চেপে ধরে কাশতে হয়, কথা বললে কাসি বাড়ে। ৭) হাতে টান ধরা আছে, জোরে টেনে ধরলে ভাল লাগে। ৮) পায়খানা কষা, ৩/৪ দিন পর পায়খানা হয়।
আমরা রোগীনির সার্বদেহিক লক্ষণের মধ্যে পেলাম, সমগ্র শরীরে শুষ্কতার ছাপ, নড়াছড়ায় কষ্ট বাড়ে, সুঁচফুটানো ব্যথা, ব্যথাযুক্ত স্থান চাপে উপশম। পিপাসা বেশি, অনেকক্ষণ পর বেশি পানি পান করেন। রোগীনি প্রচন্ড খিটখিটে, স্বরণশক্তি ভাল। সাহস বেশি। সন্দেহ নাই। কথা কম বলতে চান। হিসাব করে খরচ করেন।গরম অসহ্য। ঘাম স্বাভাবিক। ঘুম কম। হাত পায়ের তালুতে তাপ ও জ্বালাপোড়া আছে। সকালে ও রাত্রে বেশি খারাপ লাগে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগ যত বেশিই হোক না কেন, রোগীকে একবারে একটি মাত্র ঔষধ দিতে হয়। এটা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার অন্যতম বিশেষত্ব। তবে এইজন্য চিকিৎসকের কষ্ট করতে হয় প্রচুর। রোগীর পূর্ণাঙ্গ রোগ বিবরণ নিয়ে, হোমিওপ্যাথিক পরীক্ষিত যে ঔষধটির মানসিক লক্ষণ, সার্বদৈহিক লক্ষণ, চরিত্রগত লক্ষণ, আঙ্গিক লক্ষণের সাথে তুলনামূলক রোগীর রোগ লক্ষণের বেশি মিল পাওয়া যাবে সেই ঔষধটি সুক্ষ্ণ ও পরিবর্তিত মাত্রায় রোগীকে সেবন করতে দিতে হয়। এতে রোগীর রোগ আরোগ্য হয় অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ে, বিনা কষ্টে, স্থায়ীভাবে।
আমবা উক্ত রোগীর রোগীলিপি পর্য্যালোচনা করে ঔষধ নির্বাচন করলাম “ব্রায়োনিয়া”। উক্ত ঔষধ সেবনে তার কষ্টকর উপসর্গসমূহ দ্রুত আরোগ্য লাভ করে। দীর্ঘদিনের নানা অসুস্থতা থেকে আরোগ্যলাভ করাতে সে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ, ফেনী জেলা।