চর্ম রোগের চিকিৎসা • নতুন ফেনীনতুন ফেনী চর্ম রোগের চিকিৎসা • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চর্ম রোগের চিকিৎসা

রাশেদুল হাসানরাশেদুল হাসান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১২:৩৫ অপরাহ্ণ, ২০ নভেম্বর ২০১৮

আবরার মাহমুদ (১১)। মধুপুর, ফেনী। কিছুদিন ধরে গায়ের নানা জায়গায় মশার কামড়ের মত উদ্ভেদযুক্ত চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। উদ্ভেদের স্থানে ঘামাচির মত ছোট মুখ হয়ে তাতে সামান্য পানি জমে কিন্তু পুঁজ হয়না। প্রচন্ড চুলকায়, চুলকালে অনেক সময় ছিড়ে রক্ত যায়, পরে জ্বলে ও ব্যথা করে। কিছুদিন পরে উক্ত স্থানে স্থায়ী কাল দাগ পড়ে। এটা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, দেখতে খুবই খারাপ লাগে। এই সমস্যার জন্য নানা চিকিৎসা করেছেন, ঔষধ খেলে কিছুটা কমে, কোনভাবেই স্থায়ী আরোগ্য হচ্ছেনা। কাল দাগগুলি যাচ্ছে না। আবরার মাহমুদের বাবা বললেন এটাই তার মূল সমস্যা।

আমরা বললাম হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে শুধু আঙ্গিক বা বাহ্যিক লক্ষণের উপর নির্ভর করে সঠিক ঔষধ নির্ণয় করা যায় না। সঠিক ঔষধ নির্বাচন করতে হলে বাহ্যিক লক্ষণের পাশাপাশি রোগীর মানসিক লক্ষণ, সার্বদৈহিক লক্ষণ, চরিত্রগত লক্ষণ, খাবারের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, রোগের হ্রাস-বৃদ্ধি এবং কাতরতা ইত্যাদি জানতে হয়। এই লক্ষণগুলির সাথে হোমিওপ্যাথিক পরীক্ষিত যে ঔষধটির লক্ষণের সাথে বেশি মিল পাওয়া যাবে, হোমিওপ্যাথিক নিয়মে শুধু সেই ঔষধেই রোগীর ঐ রোগ আরোগ্য হবে। এর বাহিরে অন্যভাবে যত চেষ্টা করা হোক না কেন, আদর্শ আরোগ্য হবে না। এর জন্য চিকিৎসককে সময় নিয়ে রোগীর পূর্ণাঙ্গ রুগীলিপি নিতে হবে।

আবরার মাহমুদের বাবা আমাদের কথা খুবই যুক্তিযুক্ত মনে করলেন এবং দুঃখ করে বললেন আমরা যত চিকিৎসকের নিকটই যাইনা কেন, তারা সর্বোচ্চ দুই তিন মিনিটের মধ্যে রোগের সামান্য দুই একটি কথা শুনে ঔষধ লিখে বিদায় দিয়ে দেন। এতে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেনা। যাক এটা তার ব্যক্তিগত অভিমত।

আমরা দীর্ঘ সময় ধরে রোগীর পূর্ণাঙ্গ রোগীলিপি নিয়ে, ঔষধ নির্ণায়ক যে লক্ষণাবলী পেলাম তা হলঃ শরীরের নানাস্থানে চর্মরোগ, উদ্ভেদের মুখে সামান্য পানি থাকে কিন্তু পুঁজ নেই। তার এই চর্মরোগ পানিতে, ঠান্ডায় এলার্জি খাবারে ও রাত্রে বাড়ে। গরমে উপশম। প্রায়ই সর্দ্দি ও ঠান্ডা লাগে। টনসিল ফোলে ব্যথা করে।পায়ের হাটু থেকে গোড়ালী পর্যন্ত হাড়ে ব্যথা করে, টিপে দিতে বলে, এটা রাত্রে বাড়ে।

রোগী প্রচন্ড চঞ্চল, কোন কাজে স্থিরতা নাই, সব কিছুতে তাড়াহুড়া করে। এক কথায় বেশি অস্থির। তার অস্থিরতার জন্য পরিবারের সবাই উদ্বিগ্ন, লজ্জিত ও বিব্রত। অস্থিরতাই যেন তার স্বভাব, সকল প্রকার শাসন ও বকাঝকা করে দেখেছেন, কোনভাবেই তার অস্থিরতা কমে না। রোগী ধীরস্থিরভাবে বেশিক্ষণ পড়তে পারেনা, বলে চোখ গরম হয়ে যায়, পড়া ঝাপসা দেখে। পড়া মনে থাকেনা।

ঘুম কম, স্থির হয়ে ঘুমায় না, পুরো বিছানায় গড়াগড়ি করে। রাত্রে ঘুমের মধ্যে গলা শুকিয়ে যায়। জিহ্বা শুষ্ক সামনের অংশ লাল। রাত্রে প্রায়ই জ্বর আসে, মাঝে মাঝে জ্বরঠুসো পড়ে।ক্ষুধারুচি কম। টক, মিষ্টি পছন্দ, দুধ পছন্দ তবে গরম দুধ খায়না ঠান্ডা করে খায়। রুটি খেতে চায়না, মাংস কম পছন্দ।পানির পিপাসা বেশি। পায়খানা পাতলা, রাত্রে বেশি হয়। তুলনামূলক প্রস্রাব বেশি করে। সব কষ্ট রাত্রে বাড়ে।

আমরা রোগীর রোগীলিপি মূল্যায়ণ করে তার চর্মরোগের ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক সর্বাদিক সাদৃশ্যপূর্ণ ঔষধ নির্বাচন করলাম “রাসটক্স”। উক্ত ঔষধ সেবনে অতি অল্প সময়ে বিনা কষ্টে আবরার মাহমুদের চর্মরোগ আরোগ্যলাভ করে। উদ্ভেদের স্থানের দীর্ঘদিনের কাল দাগগুলিও আরোগ্য হয়। তার চর্মরোগের আদর্শ আরোগ্য হওয়াতে তার মাতা-পিতা খুবই খুশি এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ, ফেনী জেলা।

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.