খালেদা আক্তার (ছদ্ম নাম)। কাতালিয়া, বালিগাঁও, ফেনী সদর, ফেনী। রোগীনি এসে জানান, ৩ বছর ধরে তার পায়খানা রাস্তার বাম দিকে মাংসের মত ফোলা দেখা দিয়েছে। পায়খানা করতে প্রচন্ড ব্যথা করে, সাথে মাংসের মত ফোলা বের হয়, এতে জ্বালাপোড়া আছে। পায়খানা শক্ত হলে টাটকা লাল রক্ত যায়। পায়খানা ক্লিয়ার হয় না, অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। এর জন্য নানা প্রকার চিকিৎসা করেছেন কিন্তু কোনভাবেই আরোগ্য হচ্ছে না। দিন দিন এই সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। এই সমস্যার জন্য একদিন যন্ত্রনায় খুব কাতরাচ্ছেন। কোন এক কারণে পাশের বাড়ির জোস্না ভাবী (ছদ্ম নাম) তার নিকট এসেছেন। তার অবস্থা দেখে তিনি জানতে চান তার কি সমস্যা, জোস্না ভাবীর কাছে তিনি তার রোগ কষ্টের কথা জানালেন।তিনি তাকে বলেন তারও এই রোগ ছিল। অনেক বছর কষ্ট করেছেন। নানা প্রকার চিকিৎসা নিয়েছেন, কোনভাবেই ভাল হচ্ছেন না, অবশেষে তার স্বামী খোঁজখবর নিয়ে তাকে আপনাদের নিকট এনেছেন এবং আপনাদের চিকিৎসায় সে এখন সম্পূর্ণভাবে সুস্থ্য আছে। তার নিজের মুখে সুস্থ্তার কথা শুনে আল্লাহর উপর ভরসা করে সুস্থ হওয়ার আশা নিয়ে তিনি আমাদের নিকট এসেছেন। তিনি বলেন দয়া করে আমার এই রোগের চিকিৎসা দিন। আমরা বললাম আপনার পাইলস রোগে শুধু এই কথার উপর নির্ভর করে সঠিক ঔষধ নির্ণয় করা যায়না। আপনার রোগের ক্ষেত্রে আরো বিস্তারিত জানাতে হবে এতে সময় লাগবে অন্তত আধাঘন্টা। রোগীনি আগ্রহ সহকারে সময় দিতে রাজী হলেন। তিনি বলেন রোগ কষ্টের কারণে বর্তমানে আমার কাছে এক একটা দিন যেন বছরের সমতূল্য যাচ্ছে, তাই আপনি যা জানতে চান, তাই আমি জানাবো।
আমরা দীর্ঘ সময় ধরে তার পূর্ণাঙ্গ রোগীলিপি নিলাম। রোগীলিপি নিয়ে তার পাইলস রোগের ক্ষেত্রে ঔষধ নির্ণায়ক যে লক্ষণাবলী পেলাম তা হলঃ রক্তস্রাবী অর্শ (পাইলস), তাতে সার্বক্ষণিক মৃদু ব্যথা করে, পায়খানার পর অনেকক্ষণ পর্যন্ত ব্যথা থাকে। পায়খানা রাস্তায় জ্বালা, তা পায়খানার পর বাড়ে। পায়খানার রাস্তায় উত্তাপ, এবং তাতে ভারবোধ। পায়খানার রাস্তায় কাঠি থাকার অনুভূতি, মনে হয় তাতে বালি বা কাঁকর আছে। পায়খানার রাস্তা দিয়ে উজ্জ্বল লাল বর্ণের রক্ত নির্গত হয়, পায়খানা শক্ত হলে বাড়ে। নরম পায়খানাও ক্লিয়ার হয়না। পায়খানা খুব ধীরগতিতে বের হয়। শক্তি দিয়ে মল বের করতে হয়। মলনালীতে ভারবোধ ও টিউমার বা কোন কিছু থাকার অনুভূতি। শরীর খুবই দুর্বল, কাজে কর্মে বল পান না।
জিহ্বা হলুদ, স্বাদ তিক্ত। প্রায় পেট ফাঁপা থাকে। পেটব্যথা আছে, পেটে শব্দ করে।বংশে মা ও ভাই’র বাত আছে।ভাই’র পাইলস আছে । ডায়াবেটিস মায়ের। আবহাওয়া ঠান্ডা গরম স্বাভাবিক সহ্য হয়। ঘাম কম। ঘুম স্বাভাবিক। মাঝে মাঝে ঘুমে লালা পড়ে। মুখে গন্ধ করে। হাত পায়ের তালু গরম থাকে। খাবারের সময় কাঁচা লবন বেশি খান। ঝাল, টক, মিষ্টি কম খান। মাছ, ডিম, দুধে তেমন আগ্রহ নেই। মাংস প্রিয়। সবজি পছন্দ। পিপাসা বেশি। ক্ষুধা রুচি ভাল। রোগী শান্ত মেজাজের। স্বরণশক্তি ভাল। কথা কম বলেন। কাজে ধীরু। সকালে ও রাত্রে বেশি খারাপ লাগে।
আমরা রোগীর রোগীলিপি মূল্যায়ণ করে তার পাইলস রোগের ক্ষেত্রে ঔষধ নির্বাচন করলাম “কলিনসোনিয়া”। উক্ত ঔষধ সেবনে অতি অল্প দিনের মধ্যে বিনা কষ্টে রোগীনির পাইলস রোগ আরোগ্য হয়। এতে রোগী খুবই খুশি এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ, ফেনী জেলা।