রোগীর বয়স ৪৫ বছর। রোগী জানালেন দীর্ঘ বছর ধরে তিনি আমেরিকায় থাকেন। অনেক টাকা পয়সার মালিক কিন্তু তিনি দাম্পত্য জীবনে সুখী নন। পরীক্ষা নিরীক্ষায় তার বীর্যে শুক্রানু কম ধরা পড়ে, সাথে যৌন দুর্বলতাতো আছেই। সব কিছু নিয়ে বিষম দুশ্চিন্তায় আছেন। এর মধ্যে দেশে বিদেশে নানা চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু কোন দিকেই আরোগ্য হচ্ছেন না। না উন্নতি হচ্ছে শুক্রানুর সমস্যার, না ভাল হচ্ছে যৌন দুর্বলতা। এই বিষয়টা যখন তার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুকে অবহিত করেন তিনি তাকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ে দেখতে বলেন এবং তারই পরামর্শে হতাশ জীবনে অনেক আশা নিয়ে আমাদের নিকট আসেন। আমাদেরকে অনুরোধ করেন, তার ব্যাপারটা আমরা যেন যত্নসহকারে এবং গুরুত্ব দিয়ে দেখি।
আমরা অনেক সময় দিয়ে যত্ন সহকারে রোগীর রোগীলিপি নিলাম। রোগীলিপি নেয়ার আগে ধারণা করেছিলাম এই রোগীর ক্ষেত্রে হয়তো সঠিক ঔষধ নির্বাচন করা অত্যন্ত কঠিন হবে। রোগীলিপি নেয়ার পর দেখলাম খুব সুন্দরভাবে ঔষধের চিত্র ফুটে উঠেছে যা সাধারণত এই ধরণের রোগীর ক্ষেত্রে সহজে পাওয়া যায়না।
আমরা রোগীর রোগীলিপি মূল্যায়নে ঔষধ নির্ণায়ক যে লক্ষণসমূহ পেলাম তা হল রোগী হালকা পাতলা গঠনের। কথা কম বলার স্বভাব। নিজের সমস্যা সহজে কারো নিকট প্রকাশ করেন না। শান্তনায় কষ্ট বাড়ে। রাগ বেশি। কাজে চালু। হিসাব করে চলেন। স্বরণশক্তি ভাল, সাহস বেশি, সন্দেহ নাই। মানসিক পরিবর্তনশীলতা আছে। বিবেক ও বুদ্ধি বিচারে ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা আছে। অতি আবেগ প্রবণ, নিজের স্ত্রী থাকা শর্তেও পর নারীর প্রতি অনুরক্ততা আছে, সে বোঝে এটা অপরাধ, তারপরও সে তাতে জড়িয়ে পড়ে। অকারণে স্বপ্নদোষ বেশি হয়। গরম অসহ্য, ঘাম বেশি, ঘামে মাঝে মাঝে লবনের দাগ পড়ে। ঘুম ভাল, ঘুমে মাঝে মাঝে বাসায় চোর ঢোকার স্বপ্ন দেখেন তাই রাতে উঠে আবার সব কিছু চেক করেন। খাবারের মধ্যে লবন বেশি নেন, মাংস ও ঝাল প্রিয়। বংশে সন্তান না হওয়ার ইতিহাস নাই। পূর্বে হাতে শুকনো শক্ত প্রকৃতির চর্মরোগ ছিল। ক্রিম মলমে ও অন্য চিকিৎসায় উপশম। পায়খানা কষা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া আছে। দিনে খারাপ লাগে রাত্রে ভাল লাগে।
যত কঠিন রোগই হোক না কেন, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগ ধরে কোন চিকিৎসা হয়না। চিকিৎসা দিতে হয় রোগীর সার্বদৈহিক লক্ষণাবলী, মানসিক লক্ষাবলী, চরিত্রগত লক্ষণাবলী মূল্যায়ণ করে। আমরা এই রোগীর ক্ষেত্রে তার মানসিক, চরিত্রগত ও সার্বদৈহিক লক্ষণ সমূহ হোমিওপ্যাথিক যে ঔষধটির সাথে বেশি মিলাতে পেরেছি তা হল “নেট্রাম মিউর”। উক্ত ঔষধ সেবনে অল্প দিনের মধ্যে তার স্ত্রী সন্তান সম্ভাবা হয়েছে এবং সে যৌন দুর্বলতা থেকে আরোগ্য লাভ করে। এই নিরাশ রোগী অল্প সময়ে তার শুক্রানুর সমস্যা থেকে আরোগ্য লাভ করে তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হওয়াতে ও তার যৌন রোগ আরোগ্য হওয়াতে সে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
লেখকঃ সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ, ফেনী জেলা।