পুরুষের বিয়ে ভীতি • নতুন ফেনীনতুন ফেনী পুরুষের বিয়ে ভীতি • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পুরুষের বিয়ে ভীতি

ডা. ছরওয়ার আলমডা. ছরওয়ার আলম
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৩:১৯ অপরাহ্ণ, ১৪ মার্চ ২০১৯

চল্লিশ বছর বয়সের যুবক। এসেছেন তার গোপন এবং যৌন রোগের চিকিৎসার জন্য। অধিকাংশ যৌন রোগীর রোগের ইতিহাস জেনে আমরা কোন প্রকার ঔষধ না দিয়ে শুধু কিছু নৈতিক উপদেশ এবং সাহস দিয়েই বিদায় দিই। কারণ রোগের পূর্ণ বিবরণ নেয়ার পর দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঔষধ সেবনের মত কোন অসুস্থতা থাকেনা। আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে পৃথিরীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের মানুষের যৌন অসুস্থতা তুলনামূলক কম থাকলেও আমাদের দেশের তরুনদের মধ্যে যৌন বিষয়ে ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার বেশি। তাই তারা সুবিধাভোগী বিভিন্ন প্রকার প্রতারক চিকিৎসকের খপ্পরে পড়ে অযাচিতভাবে মেডিক্যালি নিষিদ্ধ এবং ক্ষতিকারক ঔষধ সেবন করেন। এতে তাদের জীবন যৌবন দুটোরই অপুরনীয় ক্ষতি হয়।

গোপন বিষয় মনে করে রোগীরা প্রতারনার শিকার হয়েও লোক লজ্জা ও মান সম্মানের ভয়ে প্রতারনার কথা কখনো প্রকাশ করেনা। তাই আমরা যৌন রোগীর রোগীলিপি নিই অতি যত্ন সহকারে, তুলনামূলক বেশি সময় দিয়ে। যাতে আমাদের দ্বারা যেন রোগী কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

উক্ত রোগীর রোগীলিপি নিয়ে আমরা জানলাম তার আর্থিক দৈন্যতা নাই, সে বেকারও না, সুঠাম দেহের অধিকারী। অনাকাঙ্ক্ষিত কোন অভ্যাসও নাই। অনেক বছর বিদেশে থাকেন। দেশে আসার পর বিয়ে ঠিক হয়েছে কিছুদিন পর তার বিয়ে। কিন্তু তার মনে আত্মবিশ্বাসের অভাব। কোনভাবেই সে নিজের উপর আস্থা রাখতে পারছেন না। তার এই সমস্যার জন্য দেশে বিদেশে অনেক যৌন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন। সবাই বলে তার কোন সমস্যা নাই। আমাদেরও প্রাথমিক কথাবার্তায় তাই মনে হল। আমরা জানতে চাইলাম বেশি বয়সে বিয়ে করতে যাচ্ছেন কেন। রোগী প্রথমত এড়িয়ে গেলেও পরে স্বীকার করলেন- বিয়ে নিয়ে তার প্রচন্ড ভয়। ১০ বছর আগে পরিবাবের সিদ্ধান্তে এবং পছন্দে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার বিয়ে ঠিক হয়। যথারীতি বিয়ের দিন তারিখ যত ঘনিয়ে আসে তত তার মনে ভয় বাড়তে থাকে। বন্ধুদের পরামর্শে কয়েকজন যৌন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন। তারা সবাই বলেন বড় কোন সমস্যা নাই সামান্য ঔষধ এবং সাহস দিয়ে বিদায় দেন। এর মধ্যে বন্ধুরা সবাই সাহস দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তার পরও তার মনের ভয় কাটছেনা। অবশেষে গায়ে হলুদের রাতে তার মন বলছে সে বিয়ের জন্য সক্ষম পুরুষ নয়। এই কথা সে চিকিৎসক, পরিবারের লোকজন, বন্ধুবান্ধব কাউকে বলতে পারেনাই। সর্বশেষ মধ্যরাতে বন্ধুবান্ধব পরিবার পরিজন সকলকে ফাঁকি দিয়ে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। এদিকে শ্বশুর বাড়িতে ৪ শত বরযাত্রী সহ ১ হাজার আমন্ত্রিত অতিথির রান্নাবান্না চলছে অপর দিকে সে কাপুরুষের মত জীবনের কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তারা যেন কোনভাবেই তার খোঁজ না পায় তাই মোবাইল বন্ধ করে দেয়, দেশে থাকলে তাকে ধরে এনে বিয়ে পড়িয়ে দিতে পারে তাই পার্শ্বের দেশ হয়ে বিদেশ চলে যায়। বিদেশে ১০ বছর থেকে আবার দেশে আসেন। দেশে আসার পর বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সকলের অনুরোধ, তাকে বিয়ে করতে হবে। বন্ধুরা বলে, তার শারীরিক যে সুঠাম দেহ তাতে সে ইচ্ছা করলে একাদিক বউ রাখার মত পুরুষ বলে মনে হয়। তাই তাদের সাহস এবং উৎসাহে অতীতের কথা ভুলে গিয়ে সে বিয়ে করতে রাজি হয়। বিভিন্ন যায়গায় মেয়ে দেখা চলছে। তারপরও তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমাদের পরামর্শ নেয়ার জন্য পাঠিয়েছেন।

এই নিরাশ রোগীর অতীত ইতিহাস শুনে আমাদের মনে আশার সঞ্চার হল। আশা করা যাচ্ছে আল্লাহর রহমতে এই রোগী আরোগ্য হবে। তার বিয়ে ভীতি দুর হবে। সে একজন সফল পুরুষের মত দাম্পত্য জীবনে সুখী হবে। রোগী জানান, তার সকল কাজের প্রথমে ভয় কাজ করে কিন্তু শুরু করলে পারেন। কিন্তু কোন কাজ শুরু করা তার জন্য মহা কষ্টকর। সে মনে করে এটা তার দ্বারা হবেনা। তার জীবনে এই রকম বহু দুর্ঘটনা আছে। একবার এই ভয়ে অংক পরীক্ষায় অংশগ্রহন না করে চলে এসেছেন। পরীক্ষার পর দেখেন সবগুলি অংক তার জানাশুনা থেকে এসেছে। লিখাপড়া শেষে কয়েকজন বন্ধু মিলে ইউরোপ যাওয়ার সময় বিমান বন্দর থেকে সে ফেরত এসেছেন, তিনি তখন ধারনা করেছিলেন বিদেশ যেয়ে কিছুই করতে পারবেন না, বন্ধুরা তাকে অনেক বুঝিয়েসুজিয়েও প্লেনে উঠাতে পারেনি। পরে দেখেন বন্ধুরা সবাই সফল। তারা অনেক টাকা পয়সা কামিয়ে সুখে শান্তিতে আছেন। এই রকম সব কাজের শুরুতে তার মনে একটা বাধা এসে দাঁড়ায়। কিছু ক্ষেত্রে তা ডিঙ্গিয়ে আগাতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে কোনভাবেই মনের এই বাধা দুর করতে পারেননা। তার এই সমস্যাটা ডাক্তার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন কেউ বুঝেনা। তিনি চাপা মনোভাবের, কথা কম বলেন, মানুষের সাথে মিশেন কম। মনের কথা সহজে প্রকাশ করতে পারেন না। আত্মবিশ্বাস খুবই কম। সঞ্চয়ী মনোভাবের, টাকা-পয়সা কম খরচ করেন। খাবারের মধ্যে মিষ্টি বেশি পছন্দ, দুধ অপছন্দ। খাবার ও পানীয় খুব গরম পছন্দ। ক্ষুধা পেলে সাথে সাথে কিছু খেতে হয়, না খেতে পারলে দুুুর্বল লাগে, মাথাব্যথা করে। বিকালে তার খারাপ লাগে।

আমরা উক্ত রোগীর সবগুলি অস্বাভাবিক লক্ষণ হোমিওপ্যাথিক যে ঔষধটির লক্ষণের সাথে বেশি মিলাতে পেরেছি সেই ঔষধটি “ক্লাব মস”। উক্ত ঔষধ সেবনে ধীরে ধীরে তার বিয়ে ভীতি দুর হয়। এবার বিয়ের রাতে সে আর পালিয়ে যায়নি। দাম্পত্যজীবনে সে এখন অনেক সুখী। সে এখন ২ সন্তানের জনক। তার মনের জড়তা কেটেছে। এখন আর কাজের শুরুতে ব্যর্থ হবার আগাম ভয় তাকে তাড়া করেনা।
লেখকঃ সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ, ফেনী জেলা।

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.