কানে না শুনা এক রোগীর চিকিৎসা কথা • নতুন ফেনীনতুন ফেনী কানে না শুনা এক রোগীর চিকিৎসা কথা • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কানে না শুনা এক রোগীর চিকিৎসা কথা

ডা. ছরওয়ার আলমডা. ছরওয়ার আলম
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৭:২০ অপরাহ্ণ, ১৭ জুন ২০১৯

রোগীর বয়স ৪৫ বছর। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম। ৯ জুলাই ২০১৮ খ্রি. তারিখে আমাদের নিকট আসেন তার কানে না শুনা রোগের চিকিৎসার জন্য। রোগী জানান ছোট থেকে তিনি বাম কানে শুনেন না। কারণ হিসাবে জানান, সেই ছোটকাল থেকে এখনও তার বাম কান থেকে পুঁজ যায়, দুর্গন্ধ আছে। তার কারণে তিনি তখন থেকে এখন পর্যন্ত ঐ কানে
মোটেই শুনেন না। এছাড়া সব সময় সর্দ্দি লেগে থাকে। ঘুমের সময় প্রায় নাক বন্ধ থাকে, ঘুমে নাক ডাকা আছে। হাঁচি আছে যে কোন স্রেন্টে বাড়ে। গোসলে চোখ লাল হয়ে যায়। কানে না শুনা এবং কানের পুঁজ যাওয়ার পাশাপাশি উপরোক্ত রোগ সমূহেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে কষ্ট পাচ্ছেন। তার কানে না শুনার সমস্যার জন্য ছোট থেকে এ পর্যন্ত দেশ বিদেশে অনেক চিকিৎসা করিয়েছেন। চিকিৎসায় সাময়িক উপশম পান কিন্তু আরোগ্য হচ্ছেন না। তাকে আমাদের নিকট পাঠিয়েছেন তার এক সহকর্মী। তার ঐ সহকর্মীর অন্য এক জটিল রোগ আরোগ্য হওয়াতে তাকে আমাদের পরামর্শ নিয়ে দেখতে বলেন।

আমরা রোগীর প্রধান রোগকষ্টকে হাতে রেখে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নীতি অনুযায়ী তার আঙ্গিক লক্ষণ, মানসিক লক্ষণ, সার্বদৈহিক লক্ষনাবলী, ব্যক্তিসাতন্ত্রতাজ্ঞাপক লক্ষনাবলী অনুসন্ধানের দিকে প্রাধান্য দিলাম। অনুসন্ধানে পেলাম- বাম কানের পুরাতন পুঁজস্রাব, স্রাবে দুর্গন্ধ, সাথে কানে না শুনা এই রোগীর রুগ্ন চাহনি, ফ্যাকাসে মুখমন্ডল যেন তৈল মাখানো। রোগী মোটা, শ্যামবর্ণের। পর্যবেক্ষণে পেলাম ঠান্ডা লাগার প্রবণতা বেশি এবং তা বর্ষায় বাড়ে। কথা কম বলেন। সন্দেহপ্রবণতা আছে। মনের মধ্যে নানা ধরনের ভ্রান্ত ধারনা জন্মে। তার ঠান্ডা অসহ্য। নখগুলির মসৃৃনতা কমে যাচ্ছে। শরীরের অনাবৃত অংশে ঘাম বেশি হয়, ঘামে ঝাঝালো গন্ধ।

আমরা উক্ত রোগীর সব লক্ষণ পর্যালোচনায় বুঝতে পারলাম সে ছোট থেকে ঠান্ডা এবং বর্ষা বা বৃষ্টি সহ্য করতে না পারা প্রবণ ব্যক্তি। এতে তার সারা বছর সর্দ্দি লেগেই থাকে অতিরিক্ত সর্দ্দির কারনে তার কান ও নাকের সাথে সংযোগ রক্ষাকারী ইউষ্টিশিয়ান টিউবে ফ্লুইড জমে মধ্যকর্ণের বায়ুরচাপ ব্যহত হওয়া সহ ইনফেকশন হয়ে পুঁজ তৈরী হয় এবং কানে না শুনায় দীর্ঘ বছর কষ্ট পাচ্ছেন। আমরা যদি তার সর্দ্দি প্রবণতা ও বর্ষা অসহ্যতা স্থায়ীভাবে দুর করার বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক ঔষধ তার জন্য মিলাতে পারি আশা করি আল্লার রহমতে সে স্থায়ীভাবে আরোগ্য হবে।

আমরা তার রোগীলিপি বিশ্লেষণ করে হোমিওপ্যাথিক যে ঔষধটির সাথে বেশি সাদৃশ্যতা পেয়েছি তা হল “থুজা”। উক্ত ঔষধটি পরীক্ষাকালে শরীরের বামদিকের অঙ্গ বেশি আক্রান্ত হয়েছিল। এছাড়া ঠান্ডা ও বর্ষায় বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হিসাবে দেখা দিয়েছিল। তাই আমরা তাকে “থুজা” দিই। উক্ত ঔষধ সেবনের প্রায় ৩ মাসের মধ্যে তার ৪০ বছরের পুরানো কান পাঁকা রোগ ও কানে না শুনা সৃষ্টিকর্তার অসীম কৃপায় সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য হয়। তার এই দুরারোগ্য রোগ অতি অল্প সময়ে বিনা কষ্টে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ও স্থায়ীভাবে আরোগ্য হওয়াতে তিনি সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ। এখনো তিনি মাঝে মাঝে অন্যান্য রোগের চিকিৎসার জন্য আমাদের নিকট আসেন।
লেখকঃ সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ, ফেনী জেলা।

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.