ফেনীতে পর্যাপ্ত দেশী গরু মজুদ থাকার পরও শঙ্কায় রয়েছে খামারিরা। এবার জেলায় লক্ষাধিক কোরবানির পশুর চাহিদা থাকলেও স্থানীয় খামারিদের কাছে মজুদ রয়েছে ৮৮ হাজার ১শ’ ৯৬টি পশু। যা দিয়ে কোরবানির পশুর ৯০ শতাংশ চাহিদা পুরণকরা সম্ভব বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর। তবে বিদেশী গরুর অনুপ্রবেশে দাম নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন খামারিরা। পশুরহাটে কঠোর নিরাপত্তা, মেডিকেল টিম গঠন ও অবৈধ পথে গরু প্রবেশে বিজিবি’র সতর্ক অবস্থানে থাকলেও খামারিদের সেই শঙ্কা কাটছেনা কিছুতেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা, এবার জেলায় ৪ হাজার ২শ’ ২২জন খামারি ২৩ হাজার ৩শ’ ৮টি ষাড়, ৩৯ হাজার ২শ’ ৭২টি বলদ, ৯ হাজার ৪৬টি গাভী, ৪ হাজার ৯০টি মহিষ, ১০ হাজার ২শ’ ৭টি ছাগল ও ২ হাজার ২শ’ ৩টি ভেড়া ও ৭০টি অন্যান্য প্রজাতির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ফেনী সদরে ২১ হাজার ৪শ’ ৮টি, ছাগলনাইয়ায় ১১ হাজার ৯শ’ ২০টি, দাগনভূঞায় ২৪ হাজার ৭শ’ ৫২টি, সোনাগাজীতে ১৬ হাজার ৫শ’টি, পরশুরামে ৮ হাজার ৪শ’ ৩১টি ও ফুলগাজীতে ৫ হাজার ১শ’ ৮৫টি পশু খামারে মোটাতাজা করা হয়েছে। যা দিয়ে ফেনীর কোরবানির পশুর চাহিদার সিংসভাগ পুরণ করা সম্ভব। সূত্র আরো জানায়, গতবার ঈদুল আযহায় জেলায় ৯৭ হাজার ৯শ ৫৬টি পশু কোরবানি করা হয়েছিলো।
ঈদ ঘনিয়ে এলে সীমান্ত এলাকার ভারতীয় কাঁটাতারের ফাঁক গলিয়ে আসতে থাকে ভারতীয় গরু। সীমান্ত দিয়ে একাধিক চক্র প্রভাবখাটিয়ে অবৈধভাবে বিপুল পরিমান গরু নিয়ে আসেন। রুগ্ন ও অপুষ্ট এসব গরু বাজারে কম মূল্যে বিক্রয় করায় দেশীয় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক খামারি জানান। তারা আরো বলেন, খামারিরা শংকর ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল, সিন্ধি, হরিয়ানা ও দেশী জাতের পর্যাপ্ত গরু মোটাতাজা করা হয়েছে।
ঈদের মাত্র তিন থাকলেও ফেনীর পশুরহাটগুলোতে ক্রেতা সমাবেশ ঘটলেও বেচাবিক্রি এখনো জমে উঠেছি। ফেনী সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, ফেনী সদর উপজেলার পাঁছগাছিয়া বাজার, লস্করহাট বাজার, সোনাগাজী মোহাম্মদ সাবের সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠসহ বেশ কয়েকটি পশুরহাটে দেখায় যায়, দেশীয় গরুর পাশাপাশি বিদেশী গরুর আধিক্য। স্থানীয় খামারিদের অভিযোগ, কম দামে বাজারে বিদেশী গরু পাওয়ায় দেশী গরুর উপযুক্ত দাম মিলছে না। ফলে তারা শঙ্কার মধ্যে আছেন।
জেলার বড় খামারি পরশুরাম উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার বলেন, তার খামারে তিন শতাধিক গরু লালন-পালন করা হয়েছে। খামারে প্রতিটি গরুর পিছনে কাঁচা ও শুকনো খড়, ভুষিসহ ২শ’ থেকে আড়াই শ’ টাকা ব্যায় করা হচ্ছে। তার খামারের সবগুলো গরু বিক্রি হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেশ ভালোই লাভ হবে তার।
এদিকে ফেনীর সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাচালান প্রতিরোধে সর্তক করেছে প্রশাসন। সীমান্তবর্তী উপজেলা ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরামে বিজিবি’র সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করছে। এছাড়াও সীমান্তে বিজিবি’র টহল বাড়ানো হয়েছে। বিগত কয়েক মাসে সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের সময় প্রচুর ভারতীয় গরু ও মোটাতাজাকরণের বিপুল পরিমাণ ওষুধও জব্দ করেছে বলে জানিয়েছেন ফেনীস্থ ৪ বিজিবি’র পরিচালক (অধিনায়ক) লে. কর্ণেল নাহিদুজ্জামান।
অপরদিকে জেলার ৫০টি পশুরহাটে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডা. মো. আনিসুর রহমান। তিনি জানান, উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার নেতৃত্ব ৫ সদস্যের টিম হাটগুলোতে গিয়ে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ খামারি ও বেপারিদের দিক নির্দেশা প্রদান করবেন।
পরশুরহাটসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ছিনতাই চাঁদাবাজি রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনীর পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী। তিনি বলেন, কোরবানীর পশু কিনে মানুষ যাতে নিবিঘেœ বাড়ী ফিরতে পারে সে দিকে নজর রাখছে পুলিশ।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনজেটি/এনকে