এলার্জীর চিকিৎসা কথা • নতুন ফেনীনতুন ফেনী এলার্জীর চিকিৎসা কথা • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

এলার্জীর চিকিৎসা কথা

নতুন ফেনীনতুন ফেনী
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৬:২২ অপরাহ্ণ, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

ডা. ছরওয়ার আলম>>

রোগীনির বয়স ৩৯ বছর, পেশায় স্কুল শিক্ষিকা। স্বামী একটি ব্যাংকের ম্যানেজার। তারা দুজনই কিছুদিন পূর্বে আমাদের চেম্বারে আসেন। ম্যানেজার সাহেব বললেন, তার স্ত্রীর দীর্ঘ সময় ধরে একটা সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। সমস্যাটা হল হাঁচি, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট। এর জন্য সবার পরামর্শমত নানা চিকিৎসা নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু রোগের তেমন কোন উন্নতি নাই। যতদিন ঔষধ সেবন করেন ততদিন কিছুটা উপশম পান কিন্তু এতে সে দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন। যেহেতু রোগীনি শিক্ষকতা পেশায় আছেন তাকে দিনের বেশিরভাগ সময় ধুলাবালিযুক্ত আবহাওয়ায় বাসার বাহিরে থাকতে হয়, যার কারণে ঔষধ সেবনের পরও তার প্রচণ্ডরকম হাঁচি হয়, এতে সে ক্লান্ত এবং দুর্বল হয়ে পড়েন। এছাড়া বিদ্যালয়ের সহকর্মী এবং ছাত্রছাত্রীদের সামনে অতিরিক্ত হাঁচিতে সবাই বিরক্ত হয়। অন্যান্য চিকিৎসায় ভাল কোন উপকার না বুঝায় এবং ঔষধ সেবন করে দিন দিন দুর্বল হয়ে যাওয়ায় তারা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিতে এসেছেন। সৃষ্টিকর্তা যদি এই চিকিৎসার উছিলায় তাকে আরোগ্য করেন এই আশায়।

আমরা রোগীনিকে বুঝিয়ে বললাম, এলার্জীর চিকিৎসা, আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানের সকল শাখার জন্যই কঠিন। তবে যেহেতু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগের নাম ধরে কোন চিকিৎসা নাই, চিকিৎসা দিতে হয় রোগীর শারীরিক মানসিক বিভিন্ন কষ্টকর লক্ষণাবলীকে মূল্যায়ন করে, সেক্ষেত্রে তার লক্ষনাবলীর সাথে যদি হোমিওপ্যাথিক পরীক্ষিত কোন ঔষধের লক্ষণের সাথে মিল পাওয়া যায় তাহলে সেই ঔষধে এলার্জী সহ তার দুরারোগ্য সকল রোগ বিনা কষ্টে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীনভাবে ও স্থায়ীভাবে আরোগ্য হবে, এবং এই আরোগ্যই হইল আদর্শ আরোগ্য। ম্যানেজার সাহেব এবং তার স্ত্রীর নিকট আদর্শ আরোগ্য সম্পর্কিত আমাদের সংক্ষিপ্ত এবং খোলামেলা কথা মনপূত হল। তারা সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করে চিকিৎসা দিতে চেষ্টা করার জন্য আমাদের অনুরোধ করেন। আমরা দীর্ঘ সময় নিয়ে রোগীনির পূর্ণাঙ্গ রোগীলিপি নিলাম।

রোগীলিপি নিয়ে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্ণায়ক যে লক্ষণাবলী পেলাম তা হল, রোগীনি বেশ কর্মচঞ্চল, ধীরে কাজ করা তার সহে না, সব কাজে তাড়াহুড়ার স্বভাব। তার অনেক দিন ধরে প্রচুর হাঁচি, হাঁচতে হাঁচতে ক্লান্ত হয়ে যান তবুও হাঁচি থামেনা, সাথে নাক দিয়ে পাতলা পানির মত সর্দ্দি ঝরে, কি যে বিরক্তিকর অবস্থা তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা, এর সাথে যোগ হয় কাশি, কাশতে কাশতে শ্বাসকষ্টের মত অবস্থা দেখা দেয়। এই সমস্যা ঠান্ডায়, ধুলাবালিতে বাড়ে, খাবারের মধ্যে চিংড়ি মাছ, গরুর মাংস এবং দুধ খেলে বাড়ে। অতীত রোগের মধ্যে পূর্বে গায়ে এলার্জী ছিল, এখন নাই। বংশে মায়ের স্বাসকষ্ট ও হাইপ্রেসার আছে। বাবার বাত ও ডায়াবেটিস আছে। আবহাওয়া অতি গরম ও অতি ঠান্ডা অসহ্য। ঘাম বেশি। ঘুম ভাল। খাবারের মধ্যে মিষ্টি প্রিয়। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ঝাল পছন্দ। টক, লবন খান না। ক্ষুধা বেশি এবং ক্ষুধা অসহ্য। তার রাগ আছে, ছোট বিষয়কে বড় করে দেখেন। স্বরণশক্তি ভাল। সাহস কমে যাচ্ছে। মিশুক প্রকৃতির। খরচ বেশি করেন। কাজকর্ম দ্রুত করেন।

আমরা এই রোগীনির রোগীলিপি পর্যালোচনা করে হোমিওপ্যাথিক যে ঔষধটির লক্ষণাবলীর সাথে বেশি মিল পেয়েছি তা হল “রাসটক্স”। উক্ত ঔষধ সেবনে অল্প দিনের মধ্যে এই রোগীনির হাঁচি, সর্দ্দি, কাশি,শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য অসুস্থতা সৃষ্টিকর্তার অসীম কৃপায় আরোগ্যলাভ করে। তিনি কষ্টকর রোগ থেকে বিনা কষ্টে অল্প সময়ে আরোগ্যলাভ করাতে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ।

লেখকঃ সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ, ফেনী জেলা

সম্পাদনা:আরএইচ/এইচআর

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.