ফেনীতে ৩ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ৫ সরকারি হাসপাতালের এক্স-রে যন্ত্রগুলো বছরের পর বছর অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। এতে করে একদিকে সেবা বি ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ; অন্যদিকে অযত্নে অবহেলায় নস্ট হচ্ছে সরকারী সম্পদ। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা এর ফলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। দরিদ্র রোগীরা বেশি টাকা খরচ করে বেসরকারি রোগ নির্ণয়কেন্দ্র ও ক্লিনিক থেকে এক্স-রে করতে বাধ্য হচ্ছে। এর মধ্যে সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ থেকে ১৫ বছর এক্সরে বিভাগ বন্ধ রয়েছে। ফুলগাজীতে এক্সরে চালু থাকলেও জনবল না থাকায় সেবা দেয়া যাচ্ছেনা। এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সবগুলোতেই গত ডিসেম্বর মাসে নতুন ডিজিটাল এক্সরে প্রদান করা হলেও টেকনিশিয়ান না থাকায় এগুলো সচল করা যাচ্ছেনা। আবার কোন কোন উপজেলায় বৈদ্যুতিক সমস্যা ও প্রয়োজনীয় কক্ষ না থাকায় এসব যন্ত্র এখনো স্থাপন করা হয়নি।
ফেনী জেলার সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফেনী জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও ফেনীর ৫ উপজেলায় রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এছাড়াও একটি বক্ষব্যাধী ক্লিনিক ও একটি ট্রমা সেন্টারে মানুষ সেবা নিয়ে থাকেন। কিন্তুু বর্তমানে ২ জন টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে ছাগলনাইয়া ও পরশুরামে এক্সরে যন্ত্র সচল রাখা হয়েছে। বাকী ৩ উপজেলাতে প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর যাবত রোগীরা এক্সরে সেবা বি ত হচ্ছেন। অথচ এসব উপজেলায় পুরনো এক্সরে যন্ত্র থাকার পরও বিগত ডিসেম্বরে সেবার মান বাড়াতে নতুন ডিজিটাল এক্সরে যন্ত্র দেয়া হয়েছে। তবে এসব যন্ত্র পরিচালনার জন্য দেয়া হয়নি টেকনিশিয়ান ও প্রয়োজনীয় জনবল। যার কারনে শুধুমাত্র ছাগলনাইয়া উপজেলা ছাড়া বাকী উপজেলায় এখনো বাক্সবন্দি রয়েগেছে এসব মূল্যবান এক্সরে যন্ত্র।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান অফিস সহকারী আবদুল মান্নান জানান, বিগত ডিসেম্বরে ফেনীর ৬ টি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে ৬টি নতুন ডিজিটাল এক্সরে যন্ত্র দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়া বাকীরা এখনো এটি স্থাপন করতে পারেনি। কারণ হিসেবে প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক সরবরাহ না থাকা ও জনবল না থাকায় এসব সেবা সেন্টারে এখনো এক্সরে যন্ত্রগুলো স্থাপন করা যায়নি বলে দাবী করেন তিনি। তিনি আরো জানান, জেলায় এক্সরে টেকনিশিয়ানের পদ রয়েছে ৭টি। এর মধ্যে ছাগলনাইয়া ও পরশুরামে দুই জন কর্মরত আছেন। ফুলগাজীতে এক্সরে যন্ত্রটি সচল থাকার পরও দায়িত্বপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেপুটিশনের কর্মরত থাকায় সেবা দেয়া যাচ্ছেনা। বাকী সোনাগাজী, দাগনভূঞা, বক্ষব্যাধী ক্লিনিক ও ট্রমা সেন্টারে এখনো টেকনিশিয়ান পদায়ন করা হয়নি। যার ফলে অযত্নে অব্যাবহৃত অবস্থায় এনালগ ও ডিজিটাল এক্সরে যন্ত্রগুলো এখনো অকেজোই পড়ে আছে।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের এক্সরে টেকনিশিয়ান আক্তারুজ্জামান জানান, সরকারী হাসপাতালে প্রকার ভেদে এনালগ এক্সরে ৫৫ টাকা থেকে মূল্য শুরু। আর ডিজিটাল যন্ত্রের এক্সরে ২শ টাকা নেয়া হয়। অথচ বেসরকারি ক্লিনিকে এক্স-রে করাতে খরচ পড়ে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত।
ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন সড়ক দূর্ঘটনায় আহত মনিরুজ্জামান। তিনি জানান, এ হাসপাতালে এক্সরে বিভাগের সবকিছু ঠিক আছে। শুধুমাত্র টেকনিশিয়ান না থাকায় এক্সরে বিভাগ বন্ধ আছে। এতে করে আমরা ১০-১২ কিলোমিটার দূরে জেলা শহরে গিয়ে বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এক্সরে করা হয়। এতে করে একদিকে নস্ট হয় সময়। অন্য দিকে বাড়ে অতিরিক্ত ব্যায়। এছাড়াও একজন আহত রোগীকে দূরের কোন স্থানে নেয়ার পরিবহন বিড়ম্বনাতো আছেই। তিনি ফেনীর সকল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দ্রুত এক্সরে টেকনিশিয়ানের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবী জানান।
ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, গত প্রায় ৩ বছর থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে যন্ত্র দুটি পড়ে রয়েছে। এক্স-রে বিভাগের মেডিকেল টেকনোলজিস্টকেও ঢাকার একটি হাসপাতালে প্রেষণে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। টেকনোলজিস্ট না থাকায় সব কিছু ঠিকঠাক থাকার পরও আগত রোগীদেরকে এক্সরে সুবিধা দিতে পারছিনা।
সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুরুল আলম বলেন, গত ১০ বছর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে যন্ত্র দুটি নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্টও নেই এ হাসপাতালে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি।
একই অবস্থা দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরও। দাগনভূঞা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: খালেদ মাহমুদ বলেন, এক্স-রে যন্ত্র দুটি দীর্ঘদিন নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে হাসপাতালে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নেই। এ বিষয়ে বার বার উর্দ্ধতনকে জানানোর পরও কার্যত কোন ফলাফল পাওয়া যাচ্ছেনা। একই অবস্থা ফেনীর ট্রমা সেন্টার ও বক্ষব্যাধী ক্লিনিকের। এসব ক্লিনিকে গত ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত এক্সরে বিভাগ বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র টেকনোলজিস্ট’র শুন্যতায় একদিকে মূল্যবান সরকারী সম্পদ নস্ট হচ্ছে; অন্যদিকে সেবা বি ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
ফেনীর সিভিল সার্জন ডা: নিয়াতুজ্জামান জানান, ফেনীর ৫টি ক্লিনিকে নতুন করে এক্সরে যন্ত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তুু জনবল না থাকায় এগুলো স্থাপন ও সচল রাখা যাচ্ছেনা। ফলে রোগী ও স্বজনরা জেলা ও উপজেলা শহরের বিভিন্ন ক্লিনিক থেকে বেশি মূল্যে এ সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি আরো জানান, মুগদা হাসপাতালে ডেপুটিশনে কর্মরত ফুলগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টেকনিশিয়ানকে ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। জেলায় আমাদের ৫০ জনেরও অধিক জনবল শূণ্য রয়েছে। এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অনুমতি পেলেই আমরা নিয়োগ অথবা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়ে কার্যক্রম শুরু করতে পারবো।
সম্পাদনাঃ আরএইচ/এনজেটি