আমেনা আনজুম। দুই বছর বয়সের শিশু। গত বেশ কয়েকদিন ধরে তার প্রস্রাব করতে কষ্ট হয়, এই সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার মা দেখেছেন তার প্রস্রাবের রাস্তায় কোন ধরনের চুলকানি বা লাল হয়ে যাওয়া নেই। কিন্তু শিশু প্রস্রাব করতে ব্যথার কথা বলে। এখন সমস্যা এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে, প্রস্রাব করার সময় প্রচণ্ড জোরে চিৎকার দিয়ে কাছে যাকে পায় ভয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে, শরীর কেঁপে উঠে, চোখে পানি এসে যায়, এই সমস্যা কয়েক সেকেন্ড থাকে, এর পর শিশু আবার পূর্বের মত সুস্থ স্বাভাবিকভাবে খেলাধুলা করে। এই কথাগুলি বলে এই শিশু রোগীর মা আমাদের পরামর্শ চায়। আমরা বললাম হোমিওপ্যাথি সম্পূর্ণ লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি। আপনাদের এই শিশু সন্তানের প্রস্রাবের কষ্টের আদর্শ চিকিৎসা দিতে হলে আমাদের আরও অনেক লক্ষণ জানতে হবে। এর পর উক্ত লক্ষণাবলীর সাথে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সমূহের মধ্যে যে ঔষধের সাথে হোমিওপ্যাথিক নিয়মানুযায়ী অধিক মিল পাওয়া যাবে একমাত্র সেই ঔষধেই উক্ত রোগীর রোগ আরোগ্য হবে। তা হবে অতি অল্প সময়ে, বিনা কষ্টে, স্থায়ীভাবে, এবং সমগ্রভাবে, কোনধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া। আমেনা আনজুমের মা আমাদের যৌক্তিক পরামর্শে সন্তুষ্ট হয়ে তার মেয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ রোগ বিবরণী দিলেন।
এই শিশু রোগীর রোগীলিপি বা পূর্ণাঙ্গ রোগ বিবরণী নিয়ে আমরা হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্ণায়ক যে লক্ষনাবলী পেলাম তা হল : কয়েকদিন ধরে প্রস্রাব করার সময় ব্যথার কথা বলে, এই সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, এখন এতো ব্যথা যে প্রস্রাব করার সময় প্রচন্ড চিৎকার করে, ভয়ে সামনে যাকে পায় তাকে জড়িয়ে ধরে, ব্যথার সময় চোখ দিয়ে পানি পড়ে, ব্যথায় শরীর কেঁপে উঠে। এই কষ্ট কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়, এর পর আবার স্বাভাবিকভাবে হাসিখুশি থাকে। সহযোগী লক্ষনের মধ্যে পাওয়া গেল মাথায় সাদা আঁসের মত প্রচুর খুশকি, চুল কম, ঘুমের মধ্যে মাথা বেশি ঘামে জাগ্রত অবস্থায় থাকে না। রাত্রিকালে টকগন্ধযুক্ত প্রচুর ঘাম। পায়খানা কষা, পায়খানা করতে ভয় করে, একটু পায়খানা করে আর করে না। কিছু মল নির্তত হবার পর অবশিষ্ট মল উপরে উঠে যায়। রাত্রে ও ঠান্ডায় রোগের বৃদ্ধি।
আমরা উক্ত শিশু রোগীর রোগীলিপি বিশ্লেষণ করে হোমিওপ্যাথিক যে ঔষধটির সাথে বেশি মিল পেয়েছি তা হল “থুজা অক্সিডেন্টালিস”। উক্ত ঔষধ সেবনে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে উক্ত রোগীর প্রস্রাবে ব্যথা সৃষ্টিকর্তার অসীম কৃপায় সম্পূর্ণভাবে আরোগ্য হয়। এই শিশু রোগীর কষ্টকর রোগ বিনা কষ্টে অল্প সময়ে আরোগ্য হওয়াতে তার মাতা পিতা সহ পরিবারের সবাই সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
লেখকঃ সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ, ফেনী জেলা।