ফেনীতে প্রবাস ফেরত ৫ সহস্রাধিক, কোয়ারান্টাইনে মাত্র ৩শ জন • নতুন ফেনীনতুন ফেনী ফেনীতে প্রবাস ফেরত ৫ সহস্রাধিক, কোয়ারান্টাইনে মাত্র ৩শ জন • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ফেনীতে প্রবাস ফেরত ৫ সহস্রাধিক, কোয়ারান্টাইনে মাত্র ৩শ জন

নুর উল্লাহ কায়সারনুর উল্লাহ কায়সার
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৬:৫৭ অপরাহ্ণ, ২১ মার্চ ২০২০

প্রবাসী উদ্যোসিত ফেনীতে করোনা সংক্রামন ঠেকাতে সরকারের তেমন কোন প্রস্তুুতি নেই। এখন পর্যন্ত এ জেলায় করোনা সনাক্তের কীট আসেনি। বিভিন্ন স্থানে ১০৫ শয্যার আইসোলেশান ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হলেও নেই কোন চিকিৎসার সরঞ্জাম। এখনো ব্যবস্থা করা যায়নি চিকিৎসক-নার্সদের পোষাক। গত ৪ সপ্তাহে ফেনীতে প্রবাস ফেরত ৫ হাজারের বেশি হলেও কোয়ারেন্টাইন মানছেন মাত্র আড়াইশ থেকে তিনশ জন। বাকীরা জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ালেও তাদের বিষয়ে তেমন কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান হচ্ছেনা। এদিকে অধিক মুনাফার লোভে ফেনীতে মাছ-মাংস, সবজি-মুদিমালসহ সকল দোকানে ইচ্ছেমত বাড়ানো হচ্ছে মূল্য। প্রতিদিনই ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হলেও এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছেনা। শনিবার সোনাগাজীতে বাজার মনিটরিং কমিটি বাজার ঘুরে দোকানী ও ক্রেতাদের সতর্ক করেছেন। দাগনভূঞা দুটি বিয়ে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফুলগাজীতে বিভিন্ন দোকানে মূল্য বৃদ্ধির দায়ে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেন জানান, গত চার মাসে ফেনীতে ৫ হাজার ৩শ ব্যক্তি প্রবাস থেকে এসেছেন মর্মে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। কিন্তুু ওই তথ্যে প্রবাস ফেরতদের বিস্তারিত ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা সম্ভব হচ্ছেনা। এছাড়াও অনেক প্রবাসী ফেনীতে না এসে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আত্বীয়-স্বজনের কাছে থাকায় তাদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা যাচ্ছেনা। শনিবার সকাল পর্যন্ত ফেনীতে ২১৬ জন প্রবাসী কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। তাদের সাথে ১ হাজার ২৩৭ জন পরিবারের সদস্যও হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলছেন। ফেনীতে গত কয়েকদিনে ৫৩ জন প্রবাস ফেরত হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ করে সামাজিক জীবনে ফিরেছেন।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফেনী শহরের মাস্টার পাড়ার এক বাসিন্দা জানান, তাদের পাশের বাড়িতে বৃহস্পতিবার রাতে এক ইতালী প্রবাসী দেশে ফিরেছে। শুক্রবার সকাল থেকে তিনি মোটর সাইকেল যোগে জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে করে স্থানীয় সচেতন মহলের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও দায়িত্বশীল কেউ ওই প্রবাসীকে কিছু বলছেনা। বিষয়টি সিভিল সার্জনকে জানানোর পর তাকে হোম কোয়ারেন্টাইন পালনে বাধ্য করা হবে বলে জানানো হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইন পালনে কেউ বাধ্য করতে আসেনি।

ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট গোলাম জাকারিয়া জানান, অনেক প্রবাসী দেশে ফিরে জনসমাগমে ঘোরা ফেরা করছেন। এদের ব্যাপারে জেলা প্রশাসন অথবা স্বাস্থ্য বিভাগকে জানানোর জন্য সরকারী কর্মকর্তা-আইনশৃংখলা বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকজন প্রবাসীকে জরিমানা করে হোম কোয়ারেন্টাইন পালনে বাধ্য করা হয়েছে।

২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ইকবাল হোসেন ভূঞা জানান, তার হাসপাতালে ৫০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুুত করা হয়েছে। ৯ সদস্যের একটি মেডিকেল টীম গঠন করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এ হাসপাতালে করোনা সনাক্তের কীট ব্যবস্থা করা যায়নি। এছাড়াও সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দিতে ২৫ শয্যার একটি আইসোলেশন হাসপাতাল প্রস্তুুত করা হলেও সেখানে চিকিৎসার সরঞ্জামাদি নেই।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো: মনিরুজ্জামান জানান, দেশ ব্যাপী করোনা ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ায় জেলার সর্বত্র পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এদের লাগাম টেনে ধরতে জেলা জুড়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত অব্যাহত রয়েছে। শনিবার সোনাগাজীতে নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে বাজার মনিটরিং কমিটি উপজেলার বড় বাজারগুলো পরিদর্শন করে ক্রেতা-বিক্রেতাদেরকে সতর্ক করেছে। পরিদর্শনকালে বিভিন্ন দোকানীর ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে মূল্য বৃদ্ধির দায়ে ৬ দোকানীকে ২৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে জনসমাগম ঠেকাতে ২টি বিয়ে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটবৃন্দ প্রতিদিনই ফেনীর বড় বাজারে মনিটরিং বাড়িয়ে জরিমানা আদায় ও সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ অব্যাহত রেখেছেন।

জেলা প্রশাসক মো: ওয়াহিদুজ্জামান জানান, প্রবাসী উদ্যোসিত ফেনীতে করোনা ভাইরাস সংক্রামন ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখানকার জনপ্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রবাস ফেরৎদের হোম কোয়ারেন্টাইন পালনে বাধ্য করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে প্রতিদিনই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে তা প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত আছে। কাউকে আক্রান্ত সন্দেহ হলে সাথে সাথে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত ফেনীতে চিকিৎসার সরঞ্জামাদি ও করোনা সনাক্তের কীট ব্যবস্থা করা যায়নি বলে তিনি স্বীকার করেছেন।

সম্পাদনা: এনকে/আরএইচ

 

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.