পরিবার নিয়ে বিপাকে ফেনীর ৪ সহস্রাধিক বেসরকারি শিক্ষক • নতুন ফেনীনতুন ফেনী পরিবার নিয়ে বিপাকে ফেনীর ৪ সহস্রাধিক বেসরকারি শিক্ষক • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পরিবার নিয়ে বিপাকে ফেনীর ৪ সহস্রাধিক বেসরকারি শিক্ষক

নুর উল্লাহ কায়সারনুর উল্লাহ কায়সার
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ, ২১ এপ্রিল ২০২০

প্রায় অর্ধযুগ ধরে ফেনী শহরের একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন মোহন (ছদ্মনাম)। শহর থেকে একটু দূরে বাসা ভাড়া নিয়ে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি। স্কুল থেকে মাসে ৩ হাজার টাকা সম্মানী পান। দিনভর টিউশনি করে আরো ৫-৭ হাজার টাকা আয় হয় মাসে। এ টাকা দিয়ে কোনো রকম সংসার চলে তার। কিন্তু দেশে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় বন্ধ রয়েছে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্কুলে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের বেতন বকেয়া পড়ে আছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে টিউশনি কম ছিল। তাই বাড়িওয়ালাকে ভাড়াও দিতে পারেননি তিনি। তিন মাসের বাসা ভাড়া এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে দিয়ে দেবেন বলে কোনো রকম বুঝিয়েছিলেন মালিককে। কিন্তু স্কুল বন্ধ থাকায় কালেকশন না হওয়ার অজুহাতে স্কুল কর্তৃপক্ষ বেতন দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তিনি।

শুধু মোহনই নয়, করোনার কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন ফেনীর তিন শতাধিক বেসরকারি স্কুলের প্রায় চার হাজার শিক্ষক। পরিবারের প্রতিদিন খাবার জোগাড় করাটাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে তাদের। অর্ধাহারে-অনাহারে থাকলেও লোকলজ্জায় তারা মুখ খুলছেন না। যদিও সরকার ও ত্রাণ বিরতণকারীরা মধ্যবিত্তদের অগ্রাধিকার দেয়ার ঘোষণা দিয়ে আসছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক জানান, তার এক ছাত্র তাকে ত্রাণ নেয়ার জন্য যেতে বলেছে। কিন্তু চক্ষু লজ্জায় ওই ত্রাণ আনতে পারেননি। পরে স্থানীয়রা এ নিয়ে শিক্ষকের নামে বাজে মন্তব্য করে। এ নিয়ে তিনি বিব্রত বোধ করছেন।

ফেনী জেলা কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সিটি গালর্স হাইস্কুলের অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ বলেন, ফেনীতে বেসরকারি পর্যায়ে অন্তত চার হাজার শিক্ষক রয়েছেন। হঠাৎ স্কুল বন্ধ ও টিউশনি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা এখন মহাবিপদে পড়েছেন। আর্থিক অনটনে অনেকেই এখন মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন।

তিনি জানান, মার্চে তার দায়িত্বে পরিচালিত শান্তি নিকেতন স্কুল ও সিটি গালর্স হাইস্কুলের শিক্ষকদের বেতন পরিশোধের জন্য তিনি ৩ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ করেছেন। কিন্তু এ সামর্থ সব স্কুলের নেই। স্কুল বন্ধ থাকায় তারা শিক্ষকদের সম্মানী পরিশোধ করতে পারছেন না। আমরা বিষয়টি ঢাকায় কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ঐক্য পরিষদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর করার চেষ্টা করেছি। এ শিক্ষকদের সম্মান রক্ষা করতে আমরা ফেনীর সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গেও আলোচনা করব।

দাগনভূঞা উপজেলা কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফুলকলি কিন্ডারগার্টেনের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক এসএম ইউসুফ আলী জানান, সারা জীবনই শিক্ষকরা স্বল্প আয়ে জ্ঞানদান করেন। তারা শুধু শিক্ষকতার আয় দিয়ে কোনো রকম খেয়ে বাঁচতে চান। শিক্ষকরা কখনো কারো কাছে হাত পাতবে না, চক্ষু লজ্জায় লাইনে দাঁড়িয়ে সহায়তাও নিতে পারবে না। করোনা পরিস্থিতিতে আয় রোজগার বন্ধ হওয়ায় তারা বড় অসহায় হয়ে পড়েছে। বেসরকারি শিক্ষকদের বাঁচাতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন তিনি।

সম্পাদনা: এনকে/আরএইচ

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.