গবেষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মোজাম্মেল হক আর আমাদের মাঝে নেই। মঙ্গলবার (১১ আগষ্ট) দুপুরে ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। তার স্ত্রী মমতাজ মহল বেগম বেশ ক’ বছর আগেই মারা গেছেন। এবার তিনিও পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে।
ইতিহাসবিদ কাজী মোজাম্মেল হক ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার হরিপুর গ্রামে ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার এডভোকেট কাজী ফজলুল হক ও মাতা মোসাম্মৎ তাবেদা খাতুন। পিতামহ খাঁন সাহেব কাজী ফজলুল করিম ছিলেন ব্রিটিশ আমরের সাব ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট।
১৯৬২ সালে তিনি বিএ পাস করে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন কাজী মোজাম্মেল হক। ১৯৭৭ সালে খাদ্য নিয়ন্ত্রক থাকাকালে তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘ইতিহাসের রূপরেখায় ফেনী’ প্রকাশিত হয়। শিক্ষাজীবন থেকে তিনি আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ১৯৮২ সালে গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘তিন হাজার বছরের নোয়াখালীর পুর্ণাঙ্গ ইতিহাস’ রচনা করেন । প্রকাশিত এ গ্রন্থটি সুধী মহলে বেশ প্রশংসনীয় হয়। ২০১৯ সালে এটি আবার নতুনভাবে প্রকাশ করেন ফিরোজ লাইব্রেরীর মালিক ইকবাল ও ওহিদুল আলম পিটু ভাতৃদ্বয়।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি লেখালেখি ও ধর্মকর্ম নিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। তাঁর প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থ গুলো হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় জনগোষ্ঠির ইতিহাস (২০১৩), সৈয়দ আমির উদ্দিন পাগলা মিঞার জীবনী (২০১৫), তারিখে আম্বিয়া (১৯৯৯), ভাটির বাঘ শমসের গাজীর জীবনালেখ্য (২০১৪), তিয়াত্তর ফোরকার বর্ণনা (২০০৮) ও রাইবেল নয় কুরআনের পথে আসুন (২০০৮)।
কাজী মোজাম্মেল হক ৪ ছেলে ৩ মেয়ে সন্তানের জনক হলেও তাদের মধ্যে তুরান, সবুজ, ও কাজী দিলরুবা আক্তার লীনার সাথে আমার পরিচয় ছিল। তারাও টুকটাক লেখালেখির সাথে জড়িত। গ্রামের বাড়ি ছাগলনাইয়ার হরিপুরে হলেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফেনী শহরের বনানী আবাসিক এলাকায় তিনি বাড়ী করে দীর্ঘদিন বসবাস করে আসছেন।
তাঁর মৃত্যুতে ফেনীর শিল্প-সাহিত্যাঙ্গণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমরা এক নিভৃতচারী ইতিহাসবিদকে হারালাম যা আর পূরণ হবার নয়।
লেখক: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক