মো. কামরুল হাসান >>
ছাগলনাইয়ায় নারী শিক্ষায় একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নারী শিক্ষা বিস্তারে প্রতিষ্ঠানটি দ্বীপশিখার ভূমিকা পালন করছে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বনাধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।
ছাগলনাইয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি কপিল উদ্দিন আহম্মেদ নামের এক জনহিতৈষী ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠান করেন। তাঁরই দেয়া ৮৬ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি উপজেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা ও যোগ্যতা বিদ্যায়টি স্ব-মহিমায় জ্ঞানের আলো বিচ্ছুরণ করছে। তিনিই এ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।
৬ষ্ঠ থেকে ১০ শ্রেনী পর্যন্ত শ্রেনী কার্যক্রম চলে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বিভিন্ন শ্রেনীতে বর্তমানে ৯শ’ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। এখানে মানবিক, ব্যবসায়, বিজ্ঞান ও কারিগরি শাখা বিদ্যমান রয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো বিষয়ে অধ্যয়নের সুযোগ পাচ্ছে এ বিদ্যালয়ে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ঐকান্তির প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টি সুনাম ধরে রেখেছে। এখানে ১৬ জন শিক্ষক এমপিওভূক্ত ও ৫জন অতিথি শিক্ষক নিয়মিত পাঠদান করান। ৩ জন শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। শুন্যপদগুলো পূরণ হলে বিদ্যালয়টি শিক্ষা প্রসারে আরো ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে।
বিদ্যালয়ে বর্তমানে দোতলা ৩টি ভবন, একতলা ২টি ভবন রয়েছে। যেগুলোতে শ্রেনী কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আরো একটি তিনত লা ভবন নির্মাণ পক্রিয়াধিন রয়েছে বলে জানান স্কুল কর্তৃপক্ষ। এখানে একটি শহীদ মিনার, শিক্ষার্থীদের নামাযের ব্যবস্থা, সুপেয় পানীর ব্যবস্থা, শোচাঘারসহ সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
বিদ্যালয়ে সমৃদ্ধ একটি কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। এখানে ১৭টি ডেক্সটপ, প্রজেক্টর ২টি, ল্যাপটপ ৫টি রয়েছে। এক সাথে ৫০ জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিতে পারে এ কম্পিউটার ল্যাবে। এখানে আড়াই হাজার বই নিয়ে একটি পাঠাগার রয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখান থেকে বই নিয়ে জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে পারে। এছাড়াও বায়োমেটিক পদ্ধতিতে শ্রেনী কার্যক্রম, অনলাইনে এটেনডেন্স ও ফলাফল প্রদানসহ ডিজিটাল ক্লাসরুম রয়েছে এ বিদ্যালয়ে।
বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলেও বিদ্যালয়টি শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। জেএসসিতে ২০১৩ সালে ১শ’ ২৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১শ’ ১৪ জন পাশ করে। এদের মধ্যে ১৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করে, ২০১৪ সালে ১শ’ ২১ শিক্ষার্থীর জনের মধ্যে শতভাগ পাশ করে। ১৯ জন জিপিএ-৫ অর্জন করে, ২০১৫ সালে ১শ’ ৩৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে শতভাগ পাশ ও ১৬জন জিপিএ-৫ অর্জন করে, ২০১৬ সালে ২শ’ ১ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১শ’ ৫৫ জন পাশ করে। জিপিএ-৫ অর্জন করে৭ শিক্ষার্থী এবং ২০১৭ সালে ২শ’ ৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১শ’ ৪১ পাশ করে, ৮ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ লাভ করে।
এসএসসিতে ২০১৩ সালে ৭৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে শতভাগ ও ৫জন জিপিএ-৫ অর্জন করে, ২০১৪ সালে ৮১ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮০ জন পাশ করে। এবছর ২৩ জন জিপিএ-৫ লাভ করে, ২০১৫ সালে ৭৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭২ জন পাশ করে ও ১৪ জন জিপিএ-৫ অর্জন করে, ২০১৬ সালের ৮৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৪ জন পাশ করে এবং ২০১৭ সালে ৯২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৫ জন পাশ করে।
কারিগরিতে ২০১৩ সালে ২৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে সবাই পাশ করে। ২ জন জিপিএ-৫ অর্জন করে, ২০১৪ সালে ৪০ জনের সবাই পাশ করে ৭জন জিপিএ-৫ লাভ করে, ২০১৫ সালে ৩৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৭ জন পাশ করে। এ বছর ১২জন জিপিএ-৫ অর্জন করে, ২০১৬ সালে ৪৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে সবাই পাশ করে ১৫ জন জিপিএ-৫ অর্জন করে এবং ২০১৭ সালে ৪২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১২ জন পাশ তবে কোন জিপিএ-৫ অর্জন করতে পারেনি এ বছর।
শিক্ষার পাশাপশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়ও প্রতিষ্ঠানটি অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছে। ২০১৫ সালে ডিজিটাল মেলায় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় উপজেলা প্রথম স্থান, ২০১৬ সালের জাতীয় শিক্ষা সাপ্তাহে শ্রেষ্ট গালর্স গাইড, ২০১৭ সালের বিজয় দিবস ও কুচকাওয়াজে উপজেলায় প্রথম স্থান ও ২০১৭ সালে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সাপ্তাহে ৩য় স্থান অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি।
করিগরি শাখার ইসপেক্টর নসির উদ্দিন নতুন ফেনী’কে বলেন, আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ভালো করার একটি প্রবণতা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করি শ্রেনী কক্ষে পড়া আদায় করতে। এছাড়াও মেধা যাচাইয়ে বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের নিবিড় তদারকি প্রদান করে শিক্ষকরা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল বশর নতুন ফেনী’কে বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টি এতদূর আসতে পেরেছে। সকলে আন্তরিক সহযোগিতা পেলে এটির বিকিরণ আরো বিস্তৃত হবে।
সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল নতুন ফেনী’কে বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম সন্তোষজনক। বিগত বছরগুলোতে আশানুরুপ ফলাফলও করেছে বিদ্যালয়টি। আবাসন সমস্যা সমাধনে একটি তিন তলা ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। শিক্ষক সংকটসহ অন্যান্য বিষয়গুলো উর্ধ্বতন বরাবর জানানো হয়েছে।
সম্পাদনা: আরএইচ/এমকেএইচ







