রাশেদুল হাসান, পরশুরাম থেকে ফিরে>>
ঐতিহ্যের স্বাদ ধরে রেখেছে পরশুরামের খন্ডলের মিষ্টি। এখানে দূর-দুরান্ত থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য কখনো কখনো গরম মিষ্টি খাওয়ার জন্য ছুটে যায় মানুষ। এদিকে দিনদিন এ মিষ্টির কদর বাড়ায় এখানকার দোকানীরা বেজায় খুশি।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সত্তরের দশকে কুমিল্লার যোগল চন্দ্র দাস নামে এক ব্যক্তি মিষ্টি তৈরী শুরু করেন। ১৯৭০ সালে পরশুরাম উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের খন্ডল হাই স্কুলের পার্শ্বে একটি ছোট্ট দোকান দেন যোগল। অল্প দিনের মধ্যে তাঁর তৈরী দৃষ্টি নন্দন ও সু-স্বাদু মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। যোগলের সাগরেদ স্থানীয় এক দোকানী জানায়, তিনি ৬২ রকমের মিষ্টি তৈরী করতে পারতেন। ওই দোকানী আরো জানায়, যোগলের শিল্পীত মিষ্টি তৈরীর দৃশ্য দেখার জন্য তখন অনেক মানুষের সমাগম হতো।
নব্বইয়ের দশকে তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তার নির্বাচনী এলাকা পরশুরামে আসলে তাকে মিষ্টি মুখ করানো হয় এ খন্ডলের মিষ্টি দিয়ে। কতিথ আছে এ মিষ্টি খেয়ে বেগম খালেদা জিয়া খুবই খুশি হন। পরবর্তীতে তিনি যে কয়দিন ফুলগাজী-পশুরামে আসতেন খন্ডলের মিষ্টি সংগ্রহ করতেন। যোগলের ভাঙ্গা দোকানের সামনে দামী গাড়ী নিয়ে মিষ্টি নিতে আসা খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ এস্কান্দারসহ নেতাকর্মীদের আগমন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। যোগলের যে মিষ্টি খবর শুধু মাত্র বক্সমাহমুদসহ আশ-পাশের লোকজন জনত সে মিষ্টির খবর ছড়িয়ে পড়ে ফেনীসহ আশপাশের জেলা গুলোতে।
বয়সের ভারে খেই হারা যোগল এখন আর মিষ্টি তৈরী করেন না। যুদ্ধপরবর্তী পরশুরামে এসে এখানেই বসতি গড়ে তুলেছেন তিনি। তবে যোগলের দোকানে থাকা তারই শীর্ষদের বেশ কয়েকজন এখন এ ব্যবসার সাথে জড়িত। দোলোয়ার হোসেন, বেলাল পাটোয়ারী, জিয়া উদ্দিন ও হাফেজ মাষ্টার খন্ডলে এ মিষ্টি তৈরী করে বাজারজাত করে আসছে।
মিষ্টি কারিগর দোলোয়ার হোসেন নতুন ফেনী’কে বলেন, যোগল চন্দ্র দাসের কাছ থেকে তিনি মিষ্টি তৈরীর তালিম নিয়েছেন। তিনি জানান, প্রতিদিন মোটর সাইকেল, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যান বহানে করে দূর দূরান্ত থেকে মিষ্টি খেতে লোকজন এখানে আসে।
প্রায় একই কথা আরেক মিষ্টি কারিগত হাফেজ মাষ্টারের। তিনি নতুন ফেনী’কে জানান, দৈনিক তিনি ১শ’ থেকে দেড় শ’ কেজি মিষ্টি তৈরী করেন। তিনি বলেন, মানুষ গরম মিষ্টি কিনতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। প্রতিদিন বিকালে মিষ্টি কিনতে বহু লোকের সমাগম ঘটে।
যেভাবে তৈরী হয় খন্ডলের মিষ্টি:
খন্ডলের তৈরী মিষ্টি তৈরীতে গরুর খাটি দুধ, সামন্য ময়দা ও চিনি ব্যবহার করা হয়। খন্ডলের আবদুল কাদের নামের আরেক মিষ্টি কারিগর জানান, খন্ডলের মিষ্টির সাথে অন্য কোন উপাদান মেশানো হয় না। দুধের সাথে সামন্য ময়দা ব্যবহার করা হয় ছানাকে গাড় করার জন্য। এরপর মন্ড বানিয়ে করে মিষ্টি তৈরী করা হয়। এক কেজি মিষ্টি তৈরী করতে ১শ’ ২০ টাকার মত খরচ হয় বলে তিনি জানান।
মিষ্টি তৈরীর আদি ইতিহাস:
প্রচলিত ইতিহাস অনুযায়ী কলকাতার বাসিন্দা নবীন চন্দ্র দে রসগোল্লা আবিষ্কার করেন। বাগবাজারের নবীন চন্দ্র দে ছিলেন প্রসিদ্ধ ময়রা। তার আবিষ্কৃত রসগোল্লাই পরে কলকাতা ছাড়িয়ে সারা ভারতে তথা পৃথিবীজুড়ে জনপ্রিয় হয়। সম্প্রতি ফোবর্স ম্যাগাজিন রসগোল্লাকে কলকাতার মিষ্টি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু ওড়িশা রাজ্য সরকার দাবি করেছে, রসগোল্লা আসলে সেখানকার এক প্রচলিত খাদ্য। যা নবীন চন্দ্রের রসগোল্লা আবিষ্কারের অনেক আগে থেকে তৈরি হয়ে আসছে। প্রমাণ হিসেবে তারা হাজির করছেন এক পৌরাণিক কাহিনী, রথযাত্রা শেষে লক্ষ্মীদেবীর মানভঞ্জনের জন্য জগন্নাথ দেব ছানার ক্ষীরমোহন তাকে খেতে দিয়েছিলেন। ওড়িশার দাবি, সেই ছানার ক্ষীরমোহনই আসলে রসগোল্লা।
সম্পাদনা: আরএইচ