মো:কামরুল হাসান, ফুলগাজী থেকে ফিরে >>
লেখক-প্রকাশক ফয়সাল আরেফীন দীপন হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাট ইউনিয়নের তারাকূচা গ্রামের জামেয়া আরাবিয়া আহসানুল উলুম মাদরাসার মোহতামিম মুফতি জাহিদুল হাসান মারুফকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে নিজবাড়ী থেকে আটকের পর নানা ঝল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়। জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ও স্থানীয় পুলিশ স্টেশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা বিষয়টি সম্পর্কে না জানলেও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র তার আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেন। গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র শুক্রবার মারুফকে দীপন হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়নি বলে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান। এদিকে তার বাবা মুফতি হাবিব উল্লাহ বলেন, ওই দিন রাতে জঙ্গী সংশ্লিষ্টতা ও দীপন হত্যায় জড়িত তথ্যের ভিত্তিতে মারুফকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এমন কথা বলেন গোয়েন্দারা।
শনিবার ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা ফুলগাজী উপজেলার উত্তর তাঁরাকূচা গ্রামে অভিযানে সঙ্গে থাকা স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল হক ও মুফতি মারুফের মাদরাসার শিক্ষক ওমর ফারুক’র সাথে আলাপকালে বিস্তারিত জানা যায়। তারা বলেন, ওই দিন রাত আনুমানিক পৌনে তিনটার দিকে তাঁরাকূচা গ্রামের জাফর ইমাম উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে একটি মাইক্রোবাস এসে থামে। বাস থেকে নেমে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য পরিচয় দিয়ে পার্শ্ববতী রায়হান ড্রেস হাউজের সত্ত্বাধিকারী আবদুল হককে ডাকাডাকি করে। অনেকক্ষণ পর দোকানের সাটার খূলে বের হলে ডিবি পুলিশের পোশাকপরা তিনজন মারুফ সম্পর্কে জানতে চায়। এসময় সিভিল ড্রেসে ৫জনকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন বলে তিনি জানান। মুফতি জাহিদুল হাসান মারুফ’র বিস্তারিত তথ্যদিলে দোকানদার চিনতে পারে। তাকেসহ মারুফ’র মাদরাসা ও বাড়ীতে নিয়ে যেতে অনুরোধ করে। তারা মাদরাসায় গিয়ে এখানকার শিক্ষক ওমর ফারুককে ডেকে তুলে মারুফের বাড়ীতে প্রবেশ করে। তাদের সাথে দরজা কাটার যন্ত্রপাতি ছিল বলে তিনি জানান। ডিবি পরিচয়ে অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর মুফতি মারুফ ঘর থেকে বের হয়। এসময় তাকে আটক করে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছে বলে তার বাবা মুফতি হাবিব উল্লাকে তারা জানায়।
খবরটি সকালে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় আলোচনার ঝড় ওঠে। নিজ চোখের সামনে বেড়ে ওঠা মুফতি মারুফ এ ধরণের কাজ করতে পারে কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছেনা এলাকার মানুষের। শনিবার সকালে তার বাড়ীতে গুমোট আতঙ্ক বিরাজ করছে। মুফতি হাবিব উল্লাহ কুরআন তেলাওয়াতে ব্যস্ত। আশ পাশের লোকজনের মুখে তেমন কোন সাড়া-শব্দ নেই। স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তি জানান মুফতি মারুফ অত্যন্ত ভালো ছেলে। এটি কোন চক্রান্ত বলেও তারা জানান।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল হক জানান, ছোটকাল থেকে মারুফকে দেখে আসছি। অত্যন্ত মেধাবী ও ভালো ছেলে। জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার কথা উড়িয়ে দেন তিনি।
মারুফের কথা জিজ্ঞেসকালে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রিক্সা চালক কামাল উদ্দিন, তার ভাষায় মারুফ হুজুর অনেক ভালো মানুষ। পুলিশ কেন তাকে ধরে নিয়ে গেছে সে কিছু বুঝছেনা বলে জানান। একই কথা জানান, ওই এলাকার মোবারক হোসেন, আবদুল কাদের জিলানী ও স্থানীয় চা বিক্রেতাসহ আরো অনেকে।
তবে এ বিষয়ে মারুফের বাবা মুফতি হাবিব উল্লাহ জানান, তার ছেলে বিগত কয়েক বছরও ঢাকায় গমন করেনি। অভিযোগের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ঘটনার দিন বুধবার (৩১ অক্টোবর) সে এলাকায় ছিল।
সম্পাদনা: আরএইচ/এমকেএইচ