নুর উল্লাহ কায়সার>>
ফেনীর পরশুরামের বিলোনিয়া স্থলবন্ধর উদ্বোধনের প্রায় ৬ বছর পরও পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। অবকাঠামো সংকট, জমি অধিগ্রহনে জটিলতা, আমদানি-রপ্তানিকারকদের হয়রানি, ভারতের কাষ্টমস কর্মকর্তাদের অসহযোগিতাসহ নানা সমস্যার ফলে বিলোনিয়া স্থলবন্দর কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। নানামুখী সমস্যার মধ্যে আমদানী কার্যক্রম একদম না থাকলেও ডিমেতালে চলছে রপ্তানী কার্যক্রম। এমন সমস্যার গর্ভে থেকেও বন্দরটি ৬ বছরে আয় করেছে প্রায় ৩শ’ ৪০ কোটি টাকা।
জানা যায়, ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ-ভারত এ দুই দেশের মধ্যে আমদানী-রপ্তানী সম্পর্ক বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিলোনিয়া স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। ঢাকডোল পিটিয়ে বন্দর কার্যক্রম শুরু হলেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, লোকবল, গুদাম ও মালামাল পরিমাপের যন্ত্র সংকট ছাড়াও ওয়ার হাউস নির্মানসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে ব্যবসায়ীদের মাঝে এ বন্দর দিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনায় তেমন আগ্রত সৃষ্টি হয়নি। অবকাঠামো সমস্যা সমাধান করতে এলাকায় ১৫ একর জমি অধিগ্রহনের উদ্যোগ নেয়া হলেও আইয়ুব হোসেন নামে একব্যাক্তি হাইকোটে ভুমি অধিগ্রহনের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে একটি রিট আবেদন করায় অধিগ্রহনের কার্যক্রম থমকে দাড়ায়।
আমদানী-রপ্তানীকারকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিলোনিয়া স্থল বন্দররে কোন কাষ্টমস অফিস নেই। পুরাতন একটি পরিত্যাক্ত ভবনে মাত্র একজন কর্মকর্তা ও একজন অফিস পিয়ন দিয়েই চলে বিলোনিয়া শুল্ক ষ্টেশনের কার্যক্রম। তাদের অভিযোগ, এখানে শুধুমাত্র রপ্তানী কার্যক্রম চলছে, ব্যাপক পণ্য আমদানীর সুযোগ ও চাহিদা থাকলেও ভারতের সরকার ও কাষ্টমস কর্মকতাদের বাধার কারণে আমদানী করা যাচ্ছেনা।
বিলোনিয়া সিএন্ডএফ এজেন্ট সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে সিমেন্ট, ইট, পাথর এবং শুটকী। এখানে সিএন্ডএফ অনুমোদিত প্রায় ৮টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পন্যগুলো রপ্তানি করছে। এগুলো হচ্ছে স্কাইল্যান্ড শিপিং, জাওয়াদ এন্টারপ্রাইজ, জিয়ান এন্টারপ্রাইজ, ষ্টান্ডার্ড শিপিং ও সেতারা করপোরেশন। এছাড়া সিমেন্ট রপ্তানি করছে আরামিট, এমআই, সেভেন রিং, হোলসিম, আল্ট্রাটেক, প্রিমিয়ার ও কনফিডেন্স কোম্পানি। এদিকে ভারত থেকে গবাদি পশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছ গাছালি বীজ, কয়লা, গম, চুনা পাথর, পেয়াজ, মরিচ, হলুদ ও আদা আমদানির অনুমোদন রয়েছে। তবে ভারত বিলোনিয়া স্থল বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় কোন পন্য পাঠাচ্ছে না ভারত।
বিলোনিয়া স্থল বন্দর সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা প্রীতিময় কান্তি বড়–য়া নতুন ফেনী’কে জানান, উদ্বোধনের পর থেকে ভারতে ইট, সিমেন্ট, পাথর, শুটকী রপ্তানী করে এ পযন্ত বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। এছাড়াও এখান থেকে ৬ বছরে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্রমন কর আদায় করা হয়েছে।
রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইমাম হোসেন নতুন ফেনী’কে জানান, বর্তমানে এ বন্দরে একমূখী বাণিজ্য চলছে। তারপরও শুধুমাত্র চলতি ১৪-১৫ অর্থ বছরে ৪৫ কোটি ৭৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা এবং গত ১৩-১৪ অর্থ বছরে ৪১ কোটি ৭৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। তবে ভারত থেকে এখন পর্যন্ত কোন পন্য বাংলাদেশে আসেনি।
সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সভাপতি মো: গিয়াস উদ্দিন নতুন ফেনী’কে বলেন, অবকাঠামোর দিক থেকে এই স্থল বন্দর এখনো পরিপূর্র্ণতা অর্জন করতে পারেনি। যার কারনে ভারতের ব্যাবসায়ীরা এই বন্দর দিয়ে বাণিজ্যের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠছেনা। এখানে প্রতিদিন রপ্তানী কার্যক্রম চললেও অনেক সময় বন্দরে কোন কর্মকর্তা থাকেনা, তাই ব্যবসায়ীদের কে ফেনীতে গিয়ে কর্মকর্তাদের থেকে সই নিতে হয় বলে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হয়। রপ্তানী কার্যক্রম চললেও এখনো অবকাঠামো উন্নয়ন ও জনবল না দেয়ায় এসোসিয়েশনের এ নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আমদানী-রপ্তানী কারক এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক জুলফিকার আলি ভুট্টো নতুন ফেনী’কে জানান, এ বন্দরে প্রতিদিন প্রায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ ট্রাক পন্য লোড-আনলোড করা হয়। অব্যবস্থাপনায় অতিরিক্ত সময় ব্যায়ের কারনে ড্রাইভাররা এ বন্দরে ভাড়া নিয়ে আসতে চায়না।
অপরদিকে কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, শুধুমাত্র অবকাঠামোগত সমস্যা নয়; বিলোনিয়া সীমান্ত ফাঁড়ির বর্ডার গার্ড (বিজিবি) বিভিন্ন অজুহাতে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ট্রাক আটকে রাখে। তবে ব্যবসায়ীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর কোম্পানী কমান্ডার।
বন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো.ইব্রাহিম নতুন ফেনী’কে জানান, এখানে ৫৯ জন শ্রমিক মালামাল লোড-আনলোডের কাজ করে। তারাও উচিত পরিশ্রমিক পাচ্ছেনা। এছাড়াও আবাসন সমস্যাতো আছেই। ফলে কিছুদিন কাজ করার পর শ্রমিকরা অন্যত্র চলে যায়।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম নতুন ফেনী’কে জানান, বিলোনিয়া স্থল বন্দরের অবকাঠামোসহ ওপেন ইয়ার্ড করার জন্য ১৫ একর জমি অধিগ্রহনের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে ছিল এবং ৬ ধারা নোটিশও দেয়া হয়েছিল। হাইকোর্টে রিট করায় হয়তোবা ভূমি অধিগ্রহনে পুনরায় জটিলতা দেখা দিতে পারে।
বিলোনিয়া স্থল বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরিন আক্তার নতুন ফেনী’কে যাবতীয় সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেয়ার আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনকে