রাশেদুল হাসান, সোনাগাজী থেকে ফিরে
সোনাগাজীতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ কয়েক হাজার মানুষ। জোয়ারের পানি নামার পর থেকে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ দল বেঁধে ক্ষতিগ্রস্থ ঘর-বাড়ী মেরামতের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এদিকে প্রয়োজনী খাবার না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ।
রবিবার সরেজমি গিয়ে দেখা যায়, জোয়ারের পানিতে উপজেলার চরচান্দিয়া ও চর খোন্দকার ইউনিয়নের ১০ থেকে ১২ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ তাদের বাসা-বাড়ীতে ফিরতে শুরু করেছে। চিরচেনা বাড়ী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় অনেকে হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠছে। কারো ঘরের চাল নেই, কারো উঠোনে ঘরের টিন-বেড়া বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে আছে। ঘরের সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও ব্যবহার্য জিনিপত্র নেই কারো ঘরে। গোটা এলাকা যে ধ্বংস স্তুপে পরিণ হয়েছে। কোথাও কোথায় ভাঙ্গা বাড়ী-ঘর মেরামতের চেষ্টা করেছ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র তান্ডবে উপজেলার তিন ইউনিয়নের চরখোয়াজ, চর খোন্দকার, জেলেপাড়া, দক্ষিণ চরচান্দিয়া, পূর্ব বড়ধলী, চরচান্দিয়া বেড়িবাঁধের বাইরের অংশ, বাহিরচর, চর নারায়ন ও চর আবদুল্লাহ এলাকায় ৫ থেকে ৬ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্থ হয় ২ শতাধিক কাঁচা ঘর। জলোচ্ছাসে ক্ষতিগ্রস্থ হয় মসজিদ, মন্দিরসহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়। এসব এলাকায় বাড়ি-ঘরে জোয়ারের পানি প্রবেশের পাশাপাশি কৃষি জমি ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে রাস্তার গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন ইউনিয়নের সংযোগ সড়ক।
এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত খবার সরবরাহের কথা জানানো হলেও সোনগাজীতে খাবার না পাওয়ার অভিযোগ করছে দূর্যোগ এলাকার মানুষ। তাদের দাবী দু’ একটি আশ্রয়ন কেন্দ্রে শনিবার রাতে শুকনো খাবার দেওয়া হলেও আর কোন খাবার জোটেনি তাদের। অনাহারে থেকে নিজেদের ঘরবাড়ী ফিরছে দূর্গতরা। জোয়ারের পানিতে সব ভেসে যাওয়ায় না খেয়েই দিন পার করতে হচ্ছে তাদের। অভূক্ত অবস্থায় তাদের কত দিন থাকতে হবে জানা নেই কারো।
রোয়ানু’তে ক্ষতিগ্রস্থ সেলিমা আক্তার (৪৫) নতুন ফেনী’কে জানান, শনিবার দুপুরে আশ্রয়কেন্দ্রে সামন্য চিড়া-মুড়ি দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত অন্যকোন খাবার আমরা পাইনি। বাড়ীতে এসে দেখি জোয়ারের পানি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।
সন্ধ্যা রানী (২৫) নামে আরেক ক্ষতিগ্রস্থ কান্না জড়িত কণ্ঠে নতুন ফেনী’কে বলেন, শনিবার রাতে আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছে শুকনো খাবার ২ শিশু সন্তানের কপালে জুটেছিল। এরপর থেকে তাদের মুখে কোন আহার দিতে পারিনি। ঘরে সামান্য চাল রেখে গিয়েছিলাম। জলোচ্ছাসে তাও ভেসে গেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হাজী মজিবুল হক নতুন ফেনী’কে বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোর মধ্যে অনেকে সরকারী কোন সাহায্য এখনো পায়নি। খাদ্য চাহিদার কথা আমরা উর্ধ্বতনকে জানিয়েছি।
সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জেডে এম কামরুল আলম নতুন ফেনী’কে জানান, আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রস্তুত করছি। তালিকা সম্পন্ন হলে সরকারের কাছে সাহায্যের পাঠানো হবে।
সোগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফা হক নতুন ফেনী’কে খাদ্য সরবরাহের বিষয়টি অস্বিকার করে বলেন, প্রতিটি সাইক্লোন সেন্টারে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করা হয়েছে। খাদ্য বিতরণের ক্ষেত্রে কোন ধরণের সমস্যা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
সম্পাদনা: আরএইচ