বিশেষ প্রতিনিধি >>
ফেনী শহরের নাজির রোড় এলাকার শেখ বাড়ীর পঞ্চাশোর্ধ ছবুরা খাতুন। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ‘আঁই টিপ সই করি ন’ প্রকল্পের কর্মীরা ওই বাড়ীতে গিয়ে স্বাক্ষর জানেন কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান ‘আগে হাইত্তাম অঁন ভুলি গেছি’। প্রকল্পের কর্মীরা খাতা কলম দিয়ে স্বাক্ষর শেখাতে শুরু করেন।

শুধু ছবুরা খাতুন নয়। একই সড়কের আবদুল হক (৫৫), আলম মোল্লার (৫৫), সুমাইয়া আক্তর (৩০), নুর জাহান রাজিয়া (৪৫), খাদিজা আক্তার (৬১), ফারহানা আক্তার (৩৫), আফরোজা বেগম (৩৮) ও ইমা আক্তার (১৬) কারোরই স্বাক্ষর জানা নেই। এরকম শত-শত নিরক্ষর মানুষকে খুঁজে বের করে স্বাক্ষর জ্ঞান দিচ্ছেন জেলার ১২টি সংগঠনের ৪০জন স্বেচ্ছাসেবী।

মঙ্গলবার সকাল নয় টা থেকে ফেনী পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডে ফেনীকে শতভাগ নিরক্ষর মুক্ত প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও সমাজ সেবক ইমন উল হক’র সার্বিক সহযোগিতায় প্রকল্পের ৪০ জন সদস্য ৮টি গ্রুপে ভাগ হয়ে তথ্য সংগ্রহ, কাগজ-কলম বিতরণ ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

প্রকল্পের সমন্বয়ক সাজ্জাদ হোসেন দিপু ও সহকারী সমন্বয়ক ফখরুল ইসলাম ফাহাদ নতুন ফেনী’কে জানান, সকাল থেকে আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা ৫জন করে ৮টি গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করছে। শাপলা গ্রুপে শওকত চৌধুরীর নের্তৃত্বে কামরুল, হ্যাপি, ইয়াসিন চৌধুরী ও ফারভেজ; জবা গ্রুপে নবীন এস জেড অপুর নের্তৃত্বে হারুন, তৌহিদুল ইসলাম ফাহাদ ও সুজন; গোলাপ গ্রুপে মুসা ফারভেজের নের্তৃত্বে মেহেদী ইসমাইল, হুমায়ুন কবীর ও হুমায়ুন ফারভেজ; বেলী গ্রুপে রাসেলের নের্তৃত্বে হাসনাত, নাদিম, শরিফ ও শেখ আকরাম; রজনীগন্ধা গ্রুপে সীমান্ত চৌধুরীর নের্তৃত্বে তোফায়েল আহাম্মদ, নাথ আদিবা ও গোলাম রাব্বানী; অর্কিড গ্রুপে মাহবুবুর রহমান ফাহাদ, ইবনে মিয়াজী, কাজী নিশাত, ফেরদৌস আরা ও নাহিদুজ্জামান; হাসনাহেনা গ্রুপে ফয়সাল ইসলাম ফাহাদের নের্তৃত্বে সাবরিন, রনি, আল ফারুক ও আকিব উদ্দিন; জুঁই গুপে নিশাত আদনানের নের্তৃত্বে ফাহাদ উদ্দিন ভূূঁইয়া, শারাফাত উল মিল্লাত, রেদোয়ান উদ্দিন ও জাবেদ কাজ করছে।

তাঁরা আরো জানান, আমাদের কর্মীরা প্রত্যেক বাসায় গিয়ে নিরক্ষরদের তালিকা সংগ্রহ করছে। সেখানে নিরক্ষর ব্যক্তিদের একটি সাদা পৃষ্ঠা ও একটি কলম দিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে বাসায় চর্চা করতে পরিবারের অন্য সদস্যদের উদ্ভুদ্ধ করছে। এ সাদা পৃষ্ঠায় ওই ব্যক্তি ৪০ বার তাঁর নাম লিখে সাত দিন পর আমাদের কর্মীদের ফেরত দিবে। ওই দিন তাদের কাছ না দেখে লেখার একটি পরীক্ষা নেয়া হবে। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড পরবর্তীতে পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ড ও সমগ্র জেলায় কর্মসূচি পালিত হবে।

এর আগে ২০১৭ সালে ১৩ জানুয়ারী শহরে নবীনচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরী (পাবলিক লাইবেরী) সামনে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের অক্ষর জ্ঞান দিতে শুরু করে পথের পাঠশালা নামের একটি সংগঠন। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানার নজরে আসলে তিনি পথের পাঠশালা পরিদর্শনে যান।পথের পাঠশালাসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন একত্রিত হয়ে এমন একটি প্রকল্প গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার সহযোগিতায় ফেনী জেলাকে শতভাগ নিরক্ষর মুক্ত করতে ‘আঁই টি সই করি ন’ প্রকল্প হাতে নেয়।

৬ মে শনিবর নবীন চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে প্রকল্পের সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে পথের পাঠশালা, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ফেনী জেলা, ফেনী লিও ক্লাব, রোটারেক্ট ক্লাব অব ফেনী অপূর্ব, ইউ ক্যান চেঞ্জ ইয়থ সোসাইটি, রক্ত কণিকা, রক্তিম, ব্লাড ডোনার হেল্প লাইন, ফেনী সাইক্লিস্ট, আভাস, মাস্তুল ও আমরাই আগামী নামের ১২টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে ৮ মে সোমবার পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করে জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান। এসময় পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, প্রশাসনের সহকারী কমিশনার সোহেল রানা, ফেনী পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক ইমন উল হকসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, কর্মসূচিতে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে আছে দৈনিক ফেনী সময়, বাংলা নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল নতুন ফেনী। সার্বিক সহযোগিতায় ফেনী জেলা হোটেল রেস্তোরা মালিক সমিতি, জেড ইউ মডেল হাসপাতাল ও সবুজ প্রেস।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনইউসি
‘আগে হাইত্তাম অঁন ভুলি গেছি’







