আরিফুল আমিন রিজভী। বহুবিধ পরিচিতি তার। ব্যবসায়ী, সাংবাদিক নেতা, গল্পকার, সংগঠক বহুবিধ পরিচিতি রয়েছে। গবেষক হিসেবে অন্য সবগুলোকে ছাপিয়ে দেয়। তরুণ গবেষক রিজভীর জন্ম ১৯৭৯ সালের ১জুলাই ফেনী পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড বারাহিপুর ভূঞাবাড়িতে। বাবা রুহুল আমিন ওই এলাকার ‘শহীদ মেজর সালাউদ্দিন হাইস্কুলে দীঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি ব্যস্ত আছেন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ে। বর্তমানে ফেনী শহরের নামকরা ব্যবসায়ী। আর মা আমেনা আক্তার একজন আদর্শ গৃহিনী। ১ভাই ১ বোনের মধ্যে রিজভী প্রথম। বতর্মানে ফেনী মিজান রোডস্থ ফজলে মাস্টার লেনে নিজস্ব বাসায় থাকেন।
শিক্ষাজীবনে তিনি ফেনী সরকারি পাইলট থেকে ১৯৯৫ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাশ করেন। ঢাকার তেজগাঁও কলেজ থেকে ১৯৯৭ সালে এইচএসসি পাশ করেন। ২০০২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজতত্ত্বে অনার্স ও ২০০৪ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। একই বছর পারিবারিকভাবে শামীমা আক্তারের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে জাওয়াদ আরিফ ও আরিশা জুনাইরা নামে ১ ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তাদের সংসার।
তরুণ এই সংগঠক ছোটবেলা থেকে একজন মাঠকর্মী হিসেবে গড়ে উঠতে চেয়েছিলেন ফলে অনেকগুলো সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত। সামাজিক কর্মকা-ের মাধ্যমে তিনি ফেনীর ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতির অবদান তুলে ধরতে চেষ্টা করেছেন। এগুলো শেষ করতে পারলে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য উঠে আসবে বলে জানান রিজভী। শৈশব থেকে এসব কাজগুলো যত্মের সাথে করতে চেয়েছেন। তাই অনেক ক্ষেত্রে সফলও হয়েছেন তিনি।
কিভাবে অনুপ্রাণিত হলেন এসব কাজের প্রতি? এ বিষয়ে রিজভী জানান, কাজ করার করতে অনুপ্রাণিত হই স্কুলে থাকাকালিন সময়ে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক স্যার ড. এ এফ ইমাম আলীকে দেখে। তিনি নিজ পেশার পাশাপাশি অনেকগুলো সামাজিক গবেষণায় কাজ করতেন। এখনো যে পর্যন্ত কাজগুলো করছি স্যারের অনুপ্রেরণাকে সামনে রেখে করি এবং তাঁকে আদর্শের জায়গায় রাখি। যেসব সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন রিজভী তার মধ্যে ফেনী জেলা মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন। সদস্য হিসেবে আছেন ‘ফেনী জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি’। প্রেসিডিয়াম সদস্য ফ্রেন্ডশীপ ক্রিকেট কাব ও আজীবন সদস্য রোগী কল্যাণ সমিতি ফেনী, কার্য-নির্বাহী সদস্য ক্রিকেট এসোসিয়েশন অব ফেনী, উপদেষ্টা-ফেনী প্রগ্রেসিভ লিংক, সদস্য- ঢাকাবাসী (একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যা ঢাকা ৪০০ বছর পূর্তি উদযাপনের মূখ্য সমন্বয়ক ছিলো) ইত্যাদি। সাংবাদিক নেতা হিসেবেও রয়েছে তার পরিচিতি। তিনি ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটি’র সহ-সাধারণ সম্পাদক, সাপ্তাহিক নীহারিকা’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, প্রধান উপদেষ্টা সম্পাদক’র দায়িত্ব পালন করছেন শিল্প-সাহিত্য বিষয়ক পত্রিকা ত্রৈমাসিক ভাটিয়ালের।
লেখালেখিতে বেশ পারঙ্গমতা রয়েছে তাঁর। প্রথম থেকেই কবিতা লিখতেন কবিতার বইও বেরিয়েছে দু’টি। তবে গবেষক হিসেবে রয়েছে তার বিশেষ দক্ষতা, এ বিষয়ে রিজভী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন সময় থেকে নিজে সামাজিক গবেষণা কাজের সাথে সম্পৃক্ত হই। একাডেমিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্ম পরিধিতে ত্রিশটিরও বেশী মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ পরিচালনা করি। প্রকল্প প্রস্তাবনা লিখেছি পঞ্চাশের অধিক। কর্ম জীবনে বেশ কিছু প্রকল্প দায়িত্বে থেকে সম্পন্ন করেছেন। প্রথম দিকে ‘লাইভলিহুড’ ও সোশ্যাল সিকিউরিটি বিষয়ে কাজ করলেও পরবর্তীতে জলবায়ূ পরিবর্তন নিয়ে বেশ কিছু কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও খুলনা, সাতক্ষিরা অঞ্চলে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।
প্রথমে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা করার সুযোগ হয় ২০০০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন একাডেমিক কাজের অংশ হিসাবে সামাজিক গবেষণার বিষয়ে নিয়ে। রিজভী আরো বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহকারি অধ্যাপক শ্রদ্ধেয় মো: বিন কাশেম এর তত্ত্বাবধানে চঁনষরপ ঈড়হভরফবহপব ড়হ চড়ষরপব : অ ঈড়সঢ়ধৎধঃরাব ঝঃঁফু রিঃয ঞড়ি উরংঃৎরপঃং ড়ভ ইধহমষধফবংয. চট্টগ্রামের ৯টি থানা ও কক্সবাজার পৌর এলাকায় মোট ২০০ উত্তর দাতার তথ্যের ভিত্তিতে এ গবেষণার কাজ পরিচালিত হয়। ২০০৩ সালে শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক ড. এ.এফ ইমাম আলির তত্ত্বাবধানে ঞযব ফড়ফিু ইড়ৎধয গঁংষরস ঈড়সসঁহরঃু রহ ধ গবঃৎড়ঢ়ড়ষরঃধহ ঈরঃু: অ ংঃঁফু ড়হ ঝড়পরধষ ওহবয়ঁধষরঃু ধহফ ঝড়পরধষ ওহঃবমৎধঃরড়হ শিরোনামে একটি পিএইডি গবেষণা পত্রে কাজ করার সুযোগ হয়। চট্টগ্রাম বসবাসরত একটি দাউদি বোরাহ সম্প্রদায়ের উপর এ গবেষণা পরিচালতি হয়। ওই সময়ে চট্টগ্রামে ১শ’ ৪টি পরিবার বসবাস করছিলেন।
এ ছাড়াও ফেনীর শহরতলীতে বসবাসরত বেদে সম্প্রদায়ের উপর একটি বিশদ গবেষণা করেছেন ২০০৫ সালে। ঞযব ইবফব (ইধফরুধ) ঈড়সসঁহরঃু রহ ধ উরংঃৎরপঃ ড়ভ ইধহমষধফবংয: ভড়পঁং ড়হ ংড়পরধষ ওহবয়ঁধষরঃু ধহফ ংড়পরধষ ঊহমধমবসবহঃ শিরোনামে এ গবেষণা কর্মটি পরিচালনা করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এ.এফ ইমাম আলির তত্ত্বাবধানে এ কাজটি করেছিলেন। এ গবেষণায় বেদে সম্প্রদায়ের বেশ কিছু তথ্য এসেছে। বিশেষ করে তাদের জীবন যাত্রার মান নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা ও বিদ্যাশিক্ষা সামাজিক স্তরবিন্যাস। তথ্য উপাত্তে উঠে এসেছে নারীর আয়ে নির্ভর এ গোষ্ঠির সম্প্রীতির কথা। এসেছে বাইরের সমাজে তাদের অবস্থা ও অবস্থানের কথা। বর্তমান সময়ে দুটি গবেষণার কাজ করছেন এ গবেষক। ফেনীতে ছাপাখানার ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে মুদ্রণশিল্পের কথা শিরোনামে একটি বিশদ গবেষণা কাজ প্রকাশের কাজ চলছে। এতে ফেনীর মুদ্রণশিল্পের ৯৫ বছরের ইতিহাস উঠে এসেছে। তুলে ধরা হয়েছে একটি ব্যবসায়ী শ্রেণির অভিজাত্যের কথা। শোকগাঁথা। আরও আছে মালিক শ্রমিক দ্বন্দ্ব ও সম্পৃতির কথা। বিশ্বে মুদ্রণশিল্পের ক্রমধারা নিয়ে একটি সার সংক্ষেপ এ গবেষণায় উঠে এসেছে। এ ছাড়াও ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে ফেনীর তৃনমূলে ধ্বংসযজ্ঞ ও শহীদস্মৃতি নিয়ে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ইতিহাসের পাতায় যে বিষয়গুলো স্পষ্টরূপে নেই তার বিশদ তুলে ধরার চষ্টো করা হয়েছে। এতে অনেকগুলো অজানা তথ্য তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।
একজন সফল মানুষ হিসেবে তরুনদের যে পরামর্শটি দিলেন রিজভী, মাঠ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পড়ার উপযোগী করে করে বাজারে দেয় তা যেন পড়ে। সেটি কোন গবেষণা হতে পারে, আবার পত্রিকাও হতে পারে। তথ্য হচ্ছে বড় শক্তি, যার কাছে যত বেশি তথ্য থাকবে সে তত বেশি শক্তিশালী। এ ছাড়াও আরও একটি পরিকল্পনা রয়েছে তার। ‘ফেনী ইনফো’ একটি প্রতিষ্ঠান খুনবেন অনলাইনে। এখানে ফেনীর বিষয়ে সব ধরনের তথ্য থাকবে। যে কেউ নিজের প্রয়োজনে তথ্যগুলো কাজে লাগতে পারে।
সম্পাদনা: আরএইচ/এইচএসটি