দাগনভূঞায় আর্সেনিক ঝুঁকিতে সোয়া ২ লাখ মানুষ – নতুন ফেনী দাগনভূঞায় আর্সেনিক ঝুঁকিতে সোয়া ২ লাখ মানুষ – নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৩ মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দাগনভূঞায় আর্সেনিক ঝুঁকিতে সোয়া ২ লাখ মানুষ

রাশেদুল হাসানরাশেদুল হাসান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৫:০৩ অপরাহ্ণ, ২৪ নভেম্বর ২০১৭

নুর উল্লাহ কায়সার।
ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় অগভীর নলকূপে আর্সেনিকের আকার ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। সম্প্রতি এ উপজেলার বেশিরভাগ অগভীর নলকূপের পানি পরীক্ষা করে ১০ থেকে ৩শ’ মিলিগ্রাম পর্যন্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। দিন দিন এর পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাওয়ায় এর ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ছে। এতে করে উপজেলায় বসবাসকারী ২ লাখ ১৬ হাজারের অধিক মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্সেনিক মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এক ধরনের বিষ। এর কোনো রং ও গন্ধ নেই, ফলে তা খালি চোখে দেখা যায় না। দীর্ঘদিন মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক যুক্ত পানি পান করলেও সহজে এ রোগ দৃশ্যমান হয়না। কেউ আর্সেনিকে আক্রান্ত কিনা সেটির লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৬ মাস থেকে ২০ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সনাক্ত করতে ব্যক্তির চুল, নখ ও চামড়া পরীক্ষা করে এ রোগ সনাক্ত করা যায়। কিন্তুু আক্রান্ত ব্যক্তিরা এ রোগে ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে অগ্রসর হয়। আর্সেনিকযুক্ত নলকূপের পানি ফুটিয়ে পান করলেও আর্সেনিকমুক্ত হয়না। বরং পানি শুকিয়ে গেলে আর্সেনিকের ঘনত্ব আরো বাড়ে। তাই আর্সেনিকযুক্ত পানি ফুটিয়ে খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি আরও বাড়ে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য প্রকৌশলীরা।

জানা যায়, এ উপজেলার ৯২ দশমিক ৩৫ ভাগ মানুষ সরাসরি নলকূপের পানি পান করে। ২ দশমিক ৪৮ ভাগ মানুষ পুকুর, ১ দশমিক ১২ ভাগ মানুষ ট্যাংকি অথবা ট্যাপের পানি পান করে। এছাড়াও ৪ দশমিক ০৫ ভাগ বাসিন্দা অন্যান্য উপাত্ত থেকে পানি পান করে বলে জানা গেছে। গভীর ও আর্সেনিকমুক্ত নলকূপের সংকটের কারণে উপজেলার সোয়া লাখ মানুষ জেনেও মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক যুক্ত পানি পান করে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ের কর্মকর্তারা নতুন ফেনী’কে জানান, এ উপজেলায় সরকারী অগভীর নলকূপ রয়েছে ২ হাজার ৫৩টি এবং ব্যক্তিগত নলকূপের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজারের বেশি নলকূপে ক্ষতিকারক আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যা মোট হিসেবের প্রায় ৩০ ভাগ। তারা জানান ০.০৫ মিলিগ্রামের অধিক আর্সেনিক যেসব নলকূপের পানিতে রয়েছে আমরা শুধুমাত্র ওইসব নলকূপকেই আর্সেনিকযুক্ত বলছি। অথচ এ উপজেলায় ১০ থেকে ৩ শ’ মিলিগ্রাম পর্যন্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি সনাক্ত করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে প্রায় ৮০ শতাংশ নলকূপেই আর্সেনিক রয়েছে। এছাড়া পানিতে আর্সেনিক রয়েছে এমন নলকূপের সংখ্যা গত এক দশকের ব্যবধানে অন্তত ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র আরো জানায়, এ উপজেলায় সরকারীভাবে ৩ শ’ ৬৫টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০টি নলকূপে ক্ষতিকারক আর্সেনিক ও আয়রণের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। দাগনভূঞা পৌরসভা, উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর, রামনগর, ইয়াকুবপুর ও দাগনভূঞা সদর ইউপিতে এসব নলকূপ স্থাপিত রয়েছে। অন্যদিকে সিন্দুরপুর, রাজাপুর, মাতুভূঞা ও জায়লস্কর ইউপিতে স্থাপিত ৩ শতাধিক গভীর নলকূপে আর্সেনিকের পরিমাণ সহনীয় পর্যায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দাগনভূঞা পৌর এলাকার বেতুয়া গ্রামের ৭৫ ফুট গভীরতার একটি নলকূপে ১০ মিলিগ্রাম আর্সেনিক পাওয়া গেছে, অন্যদিকে উদরাজপুর গ্রামে ৬০ ফুট গভীরতার একটি নলকূপে আর্সেনিকের উপস্থিতি মিলেছে ৩শ’ মিলিগ্রাম। এভাবে পুরো উপজেলা জুড়ে ৩০ শতাংশ নলকূপের একেকটিতে একেক মাত্রায় আর্সেনিকের উপস্থিতি মিলেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবুল খায়ের মিয়াজী নতুন ফেনী’কে বলেন, রোগীর গায়ে কালো দাগ বা চামড়ার রং কালো, হাত-পায়ের তালু শক্ত ও খসখসে হওয়া, হাত-পায়ে ছোট শক্ত গুটি দেখা, হাত-পা ফুলে যাওয়া, ফেটে ক্ষত সৃষ্টি হওয়া। এছাড়া গায়ের চামড়া মোটা হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া, পাতলা পায়খানা, খাওয়ায় অরুচি, রক্ত আমাশয়, মুখে ঘা ইত্যাদি আর্সেনিকোসিস রোগের লক্ষন। এ রোগে মানুষের লিভার ও ফুসফুস বড় হয়ে যায় ও টিউমার হয়। চামড়া, মূত্রথলি ও ফুসফুসে ক্যান্সার হয়। কিডনি ও লিভার অকেজো হয়ে যায়। জন্ডিস হয়। পেটে ও মাথায় ব্যথা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে রক্ত বমি হয়ে রোগী মারা যেতে পারে।
দাগনভূঞা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আবু লায়েজ নতুন ফেনী’কে বলেন, এ উপজেলার প্রায় প্রতিটি নলকূপেই মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে। এমনকি নির্দিষ্ট এলাকায় সরকারীভাবে দেয়া গভীর নলকূপেও আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে সরে আসতে নিজ উদ্যোগে গভীর নলকূপ স্থাপনের পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টি করার প্রতি গুরুত্ব দেন জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনকে

আপনার মতামত দিন

matbet güncel giriş matbet girişmatbetcasibom güncel giriş casibom girişcasibomcasibomcasibom girişcasibom güncel giriş için sitemizi ziyaret edincasibom yeni adrescasibomcasibom girişcasibomcasibom girişcasibomcasibom girişcasibom güncel giriştipobettipobet giriştipobet güncel girişbetwoonbetwoon girişbetwoon güncel giriş1win1win giriş1win güncel girişholiganbetholiganbet girişholiganbet güncel girişcasibomcasibom girişcasibom güncel girişcasibomcasibom girişcasibom güncel girişjojobetjojobet girişjojobet güncel girişcasibomcasibom girişcasibom güncel giriş
Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.