মোঃ কামরুল হাসান, মুছাপুর থেকে ফিরে
ভালো নেই মুছাপুর উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষগুলো। প্রতিনিয়ত নদী ভাঙ্গণ ও জোয়ারের পানির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন দেলোয়ার হোসেন, ছকিনা খাতুন, হুমায়ুন কবির সহ আরো অনেকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নোয়াখালীর মিনি সী-বিচ নামে পরিচিত মুছাপুর বেঁড়িবাঁধের পাশে সাগরের বুক চিরে বয়ে আসা ছোট ফেনী নদী পাড়ের উপর একটি ঝুপড়ি চালের ঘরের নিচে হাতাশার গ্লানি বুকে নিয়ে মুখে হাত দিয়ে বসে আছেন অর্ধশত বছর বয়সী ছকিনা খাতুন।
আলাপকালে ছকিনা খাতুন বলেন, উপকূলীয় গুচ্ছগ্রামে তার স্বামী হুমায়ুন কবিরের ভিটেমাটি ছিলো। কিন্তু কয়েক বছর আগে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে স্বামীর ভিটেমাটিসহ সব হারিয়ে ৫ বছর আগে ফেনী নদীর পাড়ে সরকারি খাস জায়গায় স্বামী হুমায়ুন কবির কে নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। তিন ছেলে বড় হয়ে অন্য জায়গায় কাজ করেন। কিন্তু বাবা মায়ের কখনো খোঁজ খবর নেয় না। একমাত্র মেয়েকেও বিয়ে দিয়েছেন। স্বামী হুমায়ুন পাশের ফরেস্টে কাজ করে প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা পায়। এগুলো দিয়ে অনেক কষ্টে দিন যাচ্ছে তাদের।
ছকিনা খাতুন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, তারা বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ভিজে ও রোদে শুকিয়ে এবং শীতকালে প্রচণ্ড ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে থাকতে হয়। আমাদের গরীবদের পাশে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই। সরকার নাকি বয়স্ক ভাতা দিচ্ছেন, কিন্তু তারা কিছুই পাননা। কেউ কখনো এসে দেখেও যায়না। সেখানে আরো কথা হয় একই গ্রামের মৃত আবিদুল হক’র বড় ছেলে দেলোয়ার হোসেন (২৯) এর সাথে। তিনি বলেন, ৪ বছর আগে যখন তাদের স্বর্বস্ব নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাচ্ছিল তখন তারা এই নদীর পাশে এসে ছোট ঝুপড়ির মধ্যে বসতি স্থাপন করে।
পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পড়ালেখা করতে পারিনি। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে কখনো অন্যের ক্ষেত খামারে কাজ করে, আর কখনোই বা নদীতে চিরিং ও বাড়া মাছ ধরে এগুলো বিক্রি করে প্রতিদিন ২ থেকে ৩শ’ টাকা আয় করে মা, স্ত্রী ও ২ মেয়েকে নিয়ে নদীর পাড়ে কোন রকমে দিন যাচ্ছে তাদের।
দেলোয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গুচ্ছ গ্রাম থেকে এখানে আসার পর তারা সরকারিভাবে কোন ধরনের সাহায্য সহযোগীতা পাননি। প্রতিনিয়ত নদী ভাঙ্গণ এবং জোয়ারের পানির সাথে যুদ্ধ করে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে আছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসে তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে আমাদের কথা বলে টাকা পয়সা দিয়ে গেলেও আমরা কিছুই পাইনা। সব তাদের নেতাকর্মীরা খেয়ে পেলে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আতোয়ার হোসেন পাবেল ও সৈকত চৌধুরী নতুন ফেনী’কে বলেন, নোয়াখালীর মুছাপুর ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষগুলো প্রতিনিয়ত নদী ভাঙ্গন, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার সাথে যুদ্ধ করে বেঁছে থাকতে হয়। দেড় শতাধিক পরিবারের প্রায় ১ হাজার থেকে ১২’শ মানুষ বসবাস করেন ছোট ফেনী নদীর পাড়ে। আর্থিকভাবে তারা কোন ধরনের সাহায্য সহযোগীতা পাননা। যদিওবা কেউ কোন সংস্থা থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে দেয় তা নদী ভাঙ্গন কবলিত অসহায় মানুষ গুলো পর্যন্ত আসেনা। এর আগেই দলীয়ভাবে এগুলো ভাগ বাটোয়ারা হয়ে যায়। সরকার এবং স্থানীয় প্রভাবশালীরা যদি একটু সচেতন হয়ে তাদের দিকে তাকায় তাহলে আর তাদেরকে কোন ধরনের দূর্ভোগ পোহাতে হবেনা। তারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে শান্তিতে ঘুমাতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
সম্পাদনা: আরএইচ/এমকেএইচ







