নতুন ফেনী ডেস্ক >>
বছরের শুরুতে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুুতে ছিলেন সতস্ত্র সংসদ সদস্য ও জেদ্দা আ’লীগের সভাপতি হাজী রহিম উল্যাহ। ৫ জানুয়ারী জাতীয় নির্বাচনে আ’লীগের দলীয় টিকেট না পেয়ে স্থানীয় আ’লীগের সমর্থন নিয়ে ফেনী-৩ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর থেকে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর আশির্বাদ নিয়ে দলীয় কর্মকান্ড চালিয়ে আসলেও বছরের গোড়ার দিকে বাধে বিপত্তি। ক্রমেই দূরত্ব বাড়ে দুই এমপির। পরবর্তীতে চলমান ঘটনা সে দূরত্বরই অংশ বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
২৫ জানুয়ারী সড়ক-সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমদ চৌধুরী নাসিমের উপস্থিতিতে ফেনীর তিন সংসদ সদস্যকে সংবর্ধনা দেয় আওয়ামীলীগ। আবার সে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সামনে ১৫ নভেম্বর সার্কিট হাউজে লাঞ্ছিত করে যুবলীগ নেতারা। এ সময় অস্ত্র উঁচিয়ে ফুলগাজী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান একরামের মতো মেরে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়। ঘটনার পর পুলিশ পাহারায় এমপি হাজী রহিম উল্যাহ ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ ঘটনার জের ধরে ফেনী-সোনাগাজী সড়কের ডাকবাংলা ও মতিগঞ্জ এলাকায় এমপি সমর্থকরা গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। ওইদিন সকালে দাগনভূঞার শরীফপুরে তার আগমন উপলক্ষ্যে নির্মিত দুটি তোরণও জ্বালিয়ে দেয় নিজদলীয় কর্মীরা। এ ঘটনার পর সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামীলীগ মুখোমুখি অবস্থান নিলে হাজী রহিম উল্লাহ ঢাকায় চলে যান। এরপর তাকে নির্বাচনী এলাকা সোনাগাজী ও দাগনভূঞায় অবাঞ্ছিত করা হয়। পুুলিশি পাহারায় ৯ ডিসেম্বর তাকে নিজ বাড়ী সোনাগাজীর সোনাপুরে যান। ওইদিন তার গাড়ী বহরে হামলা করে দলীয় প্রতিপক্ষরা। এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সংসদ সদস্য সোনাপুর বাজারে পৃথক সন্ত্রাস বিরোধী সভা আহবান করলেও পিছু হটে হাজী রহিম উল্লাহ। আওয়ামীলীগের সমাবেশে নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি সহ জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা যোগ দেন। কিছুদিন পর পৌর শহরে সমাবেশ ডাকলেও আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা তাকে সড়কে ৪ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। এসময় হাজী রহিম উল্লাহ বারবার বগাদানা ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা শাখাওয়াত হোসেন বিটুকে অস্ত্র উঁচিয়ে হুমকি দেন এবং বাড়ী ফেরার পথে তার সমর্থকরা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক আজিজুল হক হিরনের বাড়ীতে বোমা হামলা করে। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের হয়। ওইদিন উপজেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়েও হামলা চালায় এমপি সমর্থকরা। একের পর এক এসব ঘটনায় সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী জড়িত দাবী করে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্যও রাখেন এমপি রহিম উল্লাহ। তার দাবী, আলোচিত ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ সভাপতি একরামুল হক একরাম হত্যাকান্ডও তার নির্দেশে হয়েছে। সে ওই হত্যাকান্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।
সবশেষ বছরের শেষ ভাগে এসে সরকারের প্রথম বছর পূর্তিতে ‘গণতন্ত্র বিজয় দিবস’ পালনে পৌর শহরের জিরো পয়েন্টে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন হাজী রহিম উল্লাহ এমপি। ওইদিন একইস্থানে উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকেও সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। এনিয়ে উভয়পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিলে উপজেলাজুড়ে আতংক ও উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা শতাধিক সমর্থক নিয়ে পৌর শহরের নিজ মালিকীয় মার্কেটে অবস্থান নেন হাজী রহিম উল্লাহ এমপি। এসময় তৎসংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ে থাকা নেতাকর্মীরা বাইরে অবস্থান নেয়। এসময় পাল্টাপাল্টি শ্লোগান, অশ্রাব্য গালাগাল দু’গ্রুপে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে রাত ৩ টার দিকে এমপি সমর্থকরা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের উপুর্যুপুরি গুলি ছোঁড়লে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এতে উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন সহ অন্তত ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হয়। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ সুপার মো: রেজাউল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: সাইফুল হকসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এসময় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক সৈয়দ দ্বীন মোহাম্মদ সহ এমপি সমর্থক হিসেবে পরিচিত ১২ জনকে আটক করা হয়। হাজী রহিম উল্লাহ শপিং কমপ্লেক্স থেকে দুটি পাইপগান, ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়।

বগাদানা ইউপি চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন বিটুকে অস্ত্র উঁচিয়ে হত্যার হুমকি দেন হাজী রহিম উল্যাহ >> নতুন ফেনী
এদিকে প্রবাসী ব্যবসায়ী রহিম উল্যাহ এমপি হয়ে কপাল পুড়েছে বলে মন্তব্য করেছন দলীয় নেতাকর্মীরা। ক্ষমতা থাকার পরও দলীয়নেতাকর্মীদের সাথে দূরত্ব কোনঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। অস্তিত টিকাতে আরো অনেক কঠিন পরীক্ষা দিতে হতে পারে তাকে।
এ বিষয়ে রবিবার বিকালে হাজী রহিম উল্যাহর সাথে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্পাদনা: আরএইচ








