ফেনীতে স্থানীয় পর্যায়ে প্রস্তুুতকৃত গরু, মহিষ ও ছাগলেই মিটবে এবারের কোরবানী পশুর চাহিদা। জেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগ ও খামারীদের থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তাই বাহিরের জেলা থেকে এবারের মৌসূমে গরু আমদানী করলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগের হিসাব মতে, ফেনীতে প্রতি বছর কোরবানীতে অন্তত ৭২ থেকে ৭৫ হাজার গরু, ছাগল ও মহিষ প্রয়োজন পড়ে। দেশে করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসা বাণিজ্যে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে অনেকেই বসতবাড়ি ও তার আশপাশে বাণিজ্যিকভাবে গরু ও মাহিষের খামার গড়ে তুলেছেন। এতে করে অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় এবার অনেক বেশি পশু কোরবানীর জন্য প্রস্তুুত হয়েছে। বিশেষ করে সোনাগাজীর চরাঞ্চলে চলতি মৌসূমে অন্তত ২০ হাজার মহিষ তৈরী করা হয়েছে কোরবানীর বাজারে বিক্রির জন্য। সব মিলিয়ে ফেনীতে গৃহে ও খামারে তৈরী রয়েছে অন্তত ৮০ হাজার পশু। যা কোরবানীর হাটে বেচাকেনা ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোরবানী করতে তৈরী করা হয়েছে। কোরবানী শেষে ফেনীতে অন্তত ৫ থেকে ৭ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ জানায়, জেলায় বিভিন্ন গৃহ ও খামারে বর্তমানে ৮০ হাজার ৮৬৫টি গবাদি বিক্রিযোগ্য রয়েছে। এরমধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ২১ হাজার ৩২২, দাগনভূঞা আট হাজার ৮৩০, ছাগলনাইয়া ১৮ হাজার ৭২৫, সোনাগাজী ১৭ হাজার ৫০৫, ফুলগাজী পাঁচ হাজার ২০৬ এবং পরশুরাম আট হাজার ২২৭টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। জিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখা গেলেই বিক্রির জন্য পশুগুলো বাজারে তোলা হবে।
সোনাগাজীর উপজেলার চরছান্দিয়া ইউনিয়নের মহিষ খামারী আবুল হোসেন জানান, তার খামারে এখন ৭৫টি মহিষ রয়েছে। এগুলো কোরবানীর বাজারে বিক্রি করতে তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রতিটি মহিষ ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম পাবেন বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন।
ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নের আবদুল ওহাব রিয়াদ ভূঞা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে ফেনী শহরে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পর তিনি গ্রামের বাড়িতে গরু খামার গড়ে তোলেন। তার খামারে এখন ২০টি মোটাতাজাকরণ চলছে। গরুগুলো কোরবানীর বাজারে বিক্রির জন্য মোটামুটি প্রস্তুুত। তার খামারের প্রতিটি গরু প্রকারভেদে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দর পাবেন বলে তিনি মনে করছেন।
খামারীরা জানান, বছরজুড়ে বিনিয়োগ করে আমরা কোরবানী পশু প্রস্তুুত করি। ঈদের আগ মুহুর্তে ভারতীয় গরু এসে বাজার ভরে যায়। এতে করে গরুর ন্যায্য দাম না পেয়ে খামারীরা ক্ষতিগ্রস্থ ও হতাশার মধ্যে পড়েন। এবার যাতে ফেনীতে ভারতীয় গুরু অথবা অন্য জেলা থেকে গুরু আনতে না দেয়া হয়। সেদিকে সবাইকে নজর রাখতে অনুরোধ জানান খামারীরা।
ফেনী সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক জানান, প্রায় ১ বছর যাবত দেশজুড়ে করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ কৃষি ও পশুপালনে নিয়োজিত হয়েছেন। প্রাণী সম্পদক বিভাগ থেকে আগ্রহী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হয়েছে। যার কারণে এবার ফেনীতে কোরবানীর চাহিদার থেকে বেশি পশু প্রস্তুুত হয়েছে। ভারতীয় গুরু আমদানী বন্ধ রাখতে পারলে কৃষক ও খামারীরা ন্যায্য মূল্যে কোরবানী পশু সরবরাহ করতে পারবেন।
ফেনী জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনিসুর রহমান জানান, ফেনীতে ৭২ হাজার পশু কোরবানীতে চাহিদা রয়েছে। ফেনীতে বর্তমানে অন্তত ৮০ হাজার গুরু, ছাগল ও মহিষ বিভিন্ন খামারে কোরবানী বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুুত রাখা হয়েছে। মৌসূমী ব্যবসায়ীরা বাহিরের থেকে কোরবানী পশু আমদানী করলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তিনি বাহিরের জেলা থেকে গুরু আমদানী না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন।