প্রযুক্তির তালে তালে গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালিয়ানার অনেক ঐতিহ্য। প্রযুক্তির কল্যাণে অনেকদূর এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ফলে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাংলার চিরচেনা কিছু রুপ-সংস্কৃতি। তেমনই আবহমান বাংলার একটি অন্যতম ঐতিহ্য হচ্ছে ‘হালখাতা’।
একসময় বাঙালির প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পহেলা বৈশাখকে উপলক্ষ করে জমজমাট করে আয়োজন করা হতো ‘হালখাতা’ অনুষ্ঠানের। কিন্তু প্রযুক্তির যুগে এখন আর সেই ‘হালখাতা’র আয়োজন চোখে পড়েনা। দোকানিরাও আগের মতো তেমন একটা আমেজ খুঁজে পান না।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, মোগল সম্রাট আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। আর এর সঙ্গে শুরু হয় বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। মোগল আমল থেকেই পহেলা বৈশাখে অনুষ্ঠান করা হতো। প্রজারা চৈত্র মাসের শেষ পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করতেন এবং পহেলা বৈশাখে জমিদাররা প্রজাদের মিষ্টি মুখ করানোর পাশাপাশি আনন্দ উৎসবে মেতে উঠতেন।
জানা যায়, চৈত্রের মাঝামাঝি থেকেই বকেয়া রয়েছে এমন ক্রেতাদের কাছে হালখাতার দাওয়াত কার্ড পাঠানো হতো। এই ‘হালখাতা’ উৎসবের জন্য ছাপানো হতো নিমন্ত্রপত্র কার্ড। কার্ডে মুসলিম ব্যবসায়ীরা ছাপাতো মসজিদের মিনার আর হিন্দু ব্যবসায়ীদের কার্ডে ছাপানো হতো মাটির সরাতে কলাগাছের পাতা, ডাব এবং উপড়ে হিন্দু দেবতা গণেশের ছবি থাকতো। বছর শুরুর দিন ভোরে দোকানপাট ধুঁয়ে, সোনা-রুপার পানি ও গোলাপ জল ছিটানো হতো। এছাড়া লাল কাপড়ে মোড়ানো বা বাঁধাই করা মোটা খাতাটিই একসময় ক্রেতার সঙ্গে বিক্রেতার ব্যবসায়িক সম্পর্কের যোগসূত্র স্থাপন করতো।
ব্যাবসায়ী ও সমাজসেবক হাফেজ মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, পহেলা বৈশাখে বিদায়ী বাংলা বছরের সব দেনা-পাওনা চুকিয়ে নতুন বছর থেকে নতুন খাতা খুলেন ব্যবসায়ীরা। একসময় ফেনীর ছাগলনাইয়াতে ব্যাবসায়ীরা ঘটা করে এই ‘হালখাতা’ উৎসব পালন করতো। গ্রামের হালখাতাতে ব্যবসায়ীরা বৈশাখের প্রথম দিনে সকালে এসে দোকান পরিস্কার করে কাগজের ফুল দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজাতো। ক্রেতাকে আপ্যায়ন করতো জিলাপি, খাজা, দই চিড়া ও মুড়ি দিয়ে।
আর শহরের ব্যবসায়ীরা খরিদ্দারকে আপ্যায়ন করার জন্য মিষ্টান্ন, পোলাও মাংস খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতো। তেমনি আমিও প্রতিবছর হালখাতা’র অনুষ্ঠানে ব্যাবসায়ীদেরকে মিষ্টি সহ মুখরোচক ভালো খাবারের আয়োজন করে থাকি। কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী হালখাতা।
সম্পাদনাঃ আরএইচ/এমকেএইচ