স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও দেখা মেলেনি সুখের ছোঁয়া। পাননি কোন সরকারি বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতাও। সরকারীভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঘর বরাদ্দ থাকলেও এখনো পর্যন্ত পায়নি কোন ঘর।
জেলা প্রশাসনের দেয়া প্রতিশ্রুতি কয়েক বছরেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় এবং ঘর না পাওয়ার হতাশা ও বিনা চিকিৎসায় ২০২২ সালের ৩ মে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন সকালে মারা গেলেন ছাগলনাইয়া উপজেলার মহামায়া ইউপির মাটিয়াগোধা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আব্দুল জলিলের স্ত্রী ষাটোর্ধ পারুল বেগম। দীঘির পাড়ে ছোট্ট একটি খুবরীর মধ্যে চার বোন এবং দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে কেটে যাচ্ছে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিলের একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলে মজিবুল হক’র দিন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মহামায়া ইউপির মাটিয়াগোধা গ্রামে চাঁদগাজী ভুঁঞা মসজিদ সংলগ্ন দীঘির পাড়ে সরকারি খাস জায়গার উপর জরাজীর্ণ ছোট্ট একটি টিনের ভাঙ্গা ঘরে বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আব্দুল জলিলের একমাত্র ছেলে প্রতিবন্ধী মজিবুল হক হতাশার চাপ মাথায় নিয়ে বসে আছেন। আলাপকালে কান্নাজড়িত কন্ঠে মজিবুল হক বলেন, তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সক্রিয় অংশগ্রহণ করে এদেশ স্বাধীন করেছেন। তিনি ২০১০ সালে মারা যাওয়ার আগে চিকিৎসার জন্য তাদের নিজ জমিটি বিক্রি করেন। এরপর তার মা, চার বোন এবং স্ত্রী ও দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে অভাব অনটনে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
মজিবুল হক হাটাচলা সহ কোন কাজই করতে পারেন না। থাকার একটি ঘরের জন্য তার অসুস্থ ষাটোর্ধ বৃদ্ধা মা পারুল বেগম ২০২০ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান বরাবর একটা লিখিত আবেদন করেন। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান তাদের জায়গাটি পরিদর্শন করে মুক্তিযোদ্ধা মৃত আব্দুল জলিলের পরিবারকে একটি ঘর নির্মান করে দেওয়ার জন্য ছাগলনাইয়া উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।
এরপর মজিবুল হক ২০২২ সালের ২১ জুন একটি ঘরের জন্য জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন করেন। তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌমিতা দাশ বরাবর আবারো লিখিত আবেদন করতে বলেন। মজিবুল হক ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর আবারও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ঘর বরাদ্দের জন্য লিখিত আবেদন দিলেও উপজেলা প্রশাসন থেকে এখনো পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় অনেক হতাশায় আছেন মজিবুল হকের পরিবার।
প্রতিবন্ধী মজিবুল হক তার দুই শিশু কন্যা ও চার বোনকে নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট একটি ঘর নির্মাণের জন্য আকুতি জানিয়েছেন। মজিবুল হক অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে তারা যে জায়গায় বসবাস করছেন জায়গাটি সরকারি খাস জায়গা হলেও দীর্ঘদিন যাবত স্থানীয় এক প্রভাবশালী ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে জায়গাটি দখল করে রাখেন।
ছয় বছর আগে প্রতিবন্ধী মজিবুল হক আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে তিনলক্ষ দশ হাজার টাকার বিনিময়ে বায়না পত্রের মাধ্যমে জনৈক প্রভাবশালীর কাছ থেকে জায়গাটি ক্রয় করেন। প্রতিবন্ধী মজিবুল হক’র কাছে জায়গা বিক্রির রেজিস্ট্রিকৃত দলীল না দিলেও ১০০ টাকার একটি স্ট্যাম্পে বায়না পত্র করে জায়গা বিক্রি করেন ওই প্রভাবশালী। এছাড়াও বায়না পত্রের কোথাও ভূমির পরিমাণ উল্লেখ নেই বলে জানান মজিবুল হক।
সম্পাদনাঃ আরএইচ/এমকেএইচ